পাঠ্যপুস্তক সংশোধন কমিটি বাতিলে ১২২ নাগরিকের নিন্দা

ধর্মীয় গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার পাঠ্যপুস্তক সংশোধনে গঠিত সমন্বয় কমিটি বাতিল ঘোষণা করেছে। তার মধ্য দিয়ে সরকার মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। সরকারের এই নতজানু নীতি গণআন্দোলনের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী উল্লেখ্য করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ১২২ বিশিষ্ট নাগরিক।

সোমবার মারজিয়া প্রভার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারী বাংলাদেশের নাগরিক, লেখক, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, রাজনৈতিককর্মী ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের নানা শ্রেণিপেশার অংশীজনরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করছি, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ধর্মের নামে একটি বিশেষ গোষ্ঠী আওয়ামী ফ্যাসিবাদের জায়গা দখল করছে। ধর্মের একপক্ষীয় ও অভিসন্ধিমূলক ব্যাখ্যার মধ্য দিয়ে সমাজের বহুত্ববাদী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ঘৃণা, অসহিষ্ণুতা ছড়িয়ে সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা ও গণতান্ত্রিক আবহকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। ভিন্নচিন্তা-মত, ভাষা-ধর্ম-জাতি, লিঙ্গগত পরিচয় এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের বিরুদ্ধে শান্তিপ্রিয় ও ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে জন-উষ্মা উস্কে দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা নস্যাতের পাঁয়তারা চালাচ্ছে এবং মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলছে। পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষকে ধর্মের নামে অপমান করছে যা একইসাথে ধর্মের পবিত্রতা ও সম্মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’

‘গত ২৮ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোন প্রকার সমন্বয়হীন অদূরদর্শীতার ফলস্বরূপ পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনের লক্ষে গঠিত সমন্বয় কমিটিকে বাতিল ঘোষণা করে। এই ঘটনার পূর্বে পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনের লক্ষে সরকার গঠিত সমন্বয় কমিটির সদস্য এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনের অংশীজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুনের বিরুদ্ধে ‘ইসলাম-বিদ্বেষের’ সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ তুলেন বাংলাদেশের একটি ধর্মীয় দাতব্য প্রতিষ্ঠান আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন শায়খ আহমাদুল্লাহ এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মামুনুল হক। আমাদের পূর্বের অভিজ্ঞতা জানান দেয়, এই ধরণের অভিযোগগুলো স্পষ্টত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয় এবং এসব অভিযোগের মধ্য দিয়ে সমাজের ব্যাপকসংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমান জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভ্রান্তি ও অসহিষ্ণুতা সৃষ্টির চেষ্টা আছে বলে আমরা মনে করি। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র যে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে সংস্কারের পথে হাঁটছে এ ধরনের তৎপরতা সে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের অন্তরায়।’

ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘আমরা বলতে চাই, যেভাবে একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের ভিত্তিতে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংগঠিত গণ-উষ্মাকে আমলে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার পাঠ্যপুস্তক সংশোধনে গঠিত সমন্বয় কমিটি বাতিল ঘোষণা করেছে তার মধ্য দিয়ে সরকার মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। সরকারের এই নতজানু নীতি গণআন্দোলনের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী। শুধু তাই নয়, আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি কমিটি প্রণয়ণের সরকারি প্রজ্ঞাপন থাকার পরেও বর্তমান শিক্ষা উপদেষ্টা এই কমিটি বাতিলের ব্যখ্যা দিতে গিয়ে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ কথাটিকে উল্লেখ করছে। এই ধরণের আচরণ এর মধ্য দিয়ে বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের মূল সমস্যাকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই পরিলক্ষিত হয়।’

পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটি পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা সমাজের সকল ভিন্ন পথ-মত ও চিন্তার অধিকার, চর্চার অধিকারকে সমুন্নত রাখার দায়িত্ব নেবে সেরকম রাষ্ট্রই কামনা করি। জনপ্রিয়তাবাদী প্রবৃত্তি সরকারের সংস্কারভাবনায় গেড়ে বসলে কোনোভাবেই ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম হতে পারে না। অনতিবিলম্বে পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটি পুনর্বহালের মধ্য দিয়ে সমাজে অস্তিত্বশীল সব গণতান্ত্রিক অংশ ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠনের পথে অন্তর্বর্তী সরকার অনড় ভূমিকা রাখবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।’

বিবৃতির পক্ষে স্বাক্ষরকারীরা হলেন–

১. আনু মুহাম্মদ, বুদ্ধিজীবী
২. অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, বুদ্ধিজীবী
৩. আবু সাঈদ খান, লেখক ও সাংবাদিক
৪. মাহা মির্জা, লেখক ও গবেষক
৫. জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, আইনজীবী
৬. কামার আহমাদ সাইমন, স্থপতি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা
৭. জোবাইদা নাসরীন, শিক্ষক
৮. সুমন রহমান, শিক্ষক ও লেখক
৯. ওমর তারেক চৌধুরী,লেখক ও অনুবাদক
১০. মোশাহিদা সুলতানা, শিক্ষক
১১. ড.শাহমান মৈশান, শিক্ষক
১২. কাজী মারুফ, শিক্ষক
১৩। নাসরিন খন্দকার, নৃবিজ্ঞানী ও গবেষক
১৪. ইলিরা দেওয়ান, মানবাধিকার কর্মী
১৫. মানজুর আল মতিন, আইনজীবী
১৬. তানিয়াহ্ মাহমুদা তিন্নী, শিক্ষক
১৭. সাদিয়া আফরিন, শিক্ষক
১৮। জাকির তালুকদার, কথা সাহিত্যিক
১৯. শর্মী হোসেন, শিক্ষক
২০. বর্ণালী সাহা, কথাসাহিত্যিক ও সংগীতশিল্পী
২১. বীথি ঘোষ, শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠক
২২. বাকী বিল্লাহ, লেখক ও এক্টিভিস্ট
২৩. অমল আকাশ, শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠক
২৪. সীমা দত্ত, নারী অধিকার সংগঠক
২৫. জামসেদ আনোয়ার তপন, সংস্কৃতিকর্মী
২৬. রহমান মুফিজ, কবি ও সাংবাদিক
২৭. ফেরদৌস আরা রুমী, কবি ও অধিকার কর্মী
২৮. রাফসান আহমেদ, চলচ্চিত্র কর্মী
২৯. ড: হারুন-উর-রশীদ, চিকিৎসক
৩০.আফজালুল বাসার, সাংস্কৃতিক সংগঠক
৩১. আরিফ রহমান, লেখক ও গবেষক
৩২. মোহাম্মদ আলী হায়দার, থিয়েটারকর্মী
৩৩. ডা. এম এইচ চৌধুরী লেলিন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
৩৪. সৈকত আমীন, কবি
৩৫. সালমান সিদ্দিকী, ছাত্র আন্দোলন সংগঠক
৩৬. নাশাদ ময়ুখ, লেখক
৩৭. মাসুদ রানা, রাজনীতিবিদ
৩৮। মফিজুর রহমান লালটু, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সংগঠক
৩৯. মারজিয়া প্রভা, এক্টিভিস্ট ও নারী অধিকার কর্মী
৪০. পূরবী তালুকদার, মানবাধিকারকর্মী
৪১. জেসমীন দিনা রায়, শিক্ষক ও এক্টিভিস্ট
৪২. সারা আহমেদ, চিকিৎসক
৪৩. মহিনউদ্দিন চৌধুরী লিটন, সাংবাদিক
৪৪. মানস নন্দী, শ্রমিক আন্দোলন সংগঠক
৪৫. শাহীনূর আক্তার, চলচ্চিত্র কর্মী
৪৬.মাহির আহনাফ হোসেন, শিক্ষার্থী
৪৭. মোশফেক আরা শিমুল, মানবাধিকার কর্মী
৪৮. মিতা নাহার, মানবাধিকার কর্মী
৪৯.অনিক রায়, সাংবাদিক
৫০. মাহতাব উদ্দীন আহমেদ, গবেষক, লেখক
৫১. কামরুজ্জামান রিপন, মানবাধিকার কর্মী
৫২.ইমেল হক, নির্মাতা ও এক্টিভিস্ট
৫৩.ইসহাক সরকার, শিক্ষক এবং রাজনৈতিক কর্মী
৫৪.লাবণী মণ্ডল, রাজনৈতিক কর্মী এবং সাহিত্য-সমালোচক
৫৫. মাসুদ রেজা, শ্রমিক আন্দোলন সংগঠক
৫৬. সেতু আরিফ, নির্মাতা
৫৭. সুস্মিতা রায়,সাংস্কৃতিক কর্মী
৫৮.রাশেদ শাহরিয়ার, রাজনৈতিক কর্মী
৫৯. আমিরুন নূজহাত মনীষা, সাংস্কৃতিক কর্মী
৬০. দিলীপ রায়, ছাত্র আন্দোলন সংগঠক
৬১. কৌশিক আহমেদ, গবেষক ও অধিকারকর্মী
৬২.সিমু নাসের, সাংবাদিক
৬৩. সাদিক আলম, লেখক ও গবেষক
৬৪. মঈন জালাল চৌধুরী,শিক্ষক ও লেখক
৬৫. বাধন অধিকারী, লেখক ও সাংবাদিক
৬৬. হামিম কামাল, কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক
৬৭.পারভেজ মাহমুদ, সংস্কৃতিক কর্মী
৬৮.আফজাল হোসেন, নাগরিক আন্দোলন কর্মী
৬৯.সালাহ উদ্দিন শুভ্র, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক
৭০. মীর সাখাওয়াত, সংস্কৃতিকর্মী
৭১. সাদরুল হাসান রিপন, রাজনৈতিক কর্মী
৭২.ডাঃ মজিবুল হক আরজু, চিকিৎসক নেতা
৭৩. রজত হুদা, রাজনীতিবিদ
৭৪. এহসান মাহমুদ, সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক
৭৫. মৃদুল মাহবুব, কবি ও লেখক
৭৬. কাজী আবদুর রহমান, শিক্ষক
৭৭.শামীম আরা নীপা, এক্টিভিস্ট
৭৮. শবনম হাফিজ, শ্রমিক আন্দোলন সংগঠক
৭৯. আয়েন উদ্দীন, সাংবাদিক
৮০.শাহেরীন আরাফাত, সাংবাদিক
৮১. রাগীব নাঈম, ছাত্র আন্দোলন সংগঠক
৮২. হেমন্ত হিম, চিকিৎসক। ।
৮৩. জাফর হোসেন, রাজনীতিবিদ।
৮৪. তাওফিকা প্রিয়া, ছাত্র আন্দোলন সংগঠক।
৮৫. তানভীর তিয়াস, সমাজকর্মী।
৮৬. ইকবাল খান, সংস্কৃতিকর্মী
৮৭. রাফিকুজ্জামান ফরিদ, ছাত্র আন্দোলন সংগঠক।
৮৮. লাবনী আশরাফী, শিক্ষক ও চলচ্চিত্রকার
৮৯. হুমায়ুন আজম রেওয়াজ, সাংস্কৃতিক কর্মী।
৯০. সৈয়দ আবুল কালাম, রাজনৈতিক কর্মী
৯১. সৈয়দা পারভীন আক্তার, ব্যবসায়ী
৯২. শামীম ইমাম, শ্রমিক আন্দোলন সংগঠক
৯৩. অরুণাভ আশরাফ, শিক্ষার্থী
৯৪. জাকিয়া শিশির, মানবাধিকার কর্মী।
৯৫. বিপ্লব ভট্টাচার্য্য, রাজনীতিবিদ
৯৬.আরিফ নুর, সাংস্কৃতিক কর্মী
৯৭. সজীব তানভীর, স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা
৯৮.মারুফ হাসান ভূঞা, লেখক
৯৯. আফরিন শরীফ বিথী, আলোকচিত্রী
১০০. রবিউল করিম ভূঁইয়া, ব্যবসায়ী
১০১. সৈয়দ ফরহাদ, সংগীত শিল্পী
১০২. দীপ্তি দত্ত, শিক্ষক।
১০৩. অভিন্যু কিবরিয়া ইসলাম, শিক্ষক
১০৪. মাসুদ খান, রাজনীতিবিদ
১০৫.নিঘাত রৌদ্র, ছাত্র আন্দোলন সংগঠক
১০৬.মোহাম্মদ ইব্রাহিম, রাজনীতিবিদ
১০৭. শ্যামলী শীল, শিক্ষক ও নারী অধিকার সংগঠক।
১০৮. নওশাদ এহ্সানুল হক,স্থপতি ও শিক্ষক
১০৯. আব্দুল্লাহ কাফী রতন, রাজনৈতিক কর্মী
১১০. তাসলিমা মিজি, উদ্যোক্তা ও অধিকারকর্মী
১১১.আসমা বেগম, শিক্ষক
১১২.তাহমিনা ইয়াসমিন, রাজনৈতিক কর্মী
১১৩. কল্লোল মোস্তফা, লেখক
১১৪. আহমাদ মোস্তফা কামাল, শিক্ষক ও লেখক
১১৫. কামাল হোসেন বাদল, সাবেক ছাত্রনেতা।
১১৬. অনুপম সৈকত শান্ত, লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট।
১১৭.দীপক সুমন, অভিনেতা, নাট্য নির্দেশক।
১১৮. ফারহানা শারমীন ইমু, স্থপতি ও মানবাধিকার কর্মী।
১১৯. ফাহমিদুল হক, শিক্ষক।
১২০. মুতাসিম আলী, কবি ও লেখক।
১২১। বখতিয়ার আহমেদ, শিক্ষক
১২২। রেজওয়ান ইসলাম, গবেষক ও অধিকারকর্মী

এআর-০৫/৩০/০৯ (জাতীয় ডেস্ক)