আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ, শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতন

বুধবারের পর আজ শুক্রবারও ভারতের শেয়ারবাজারের বড় ধরনের পতন হয়েছে। দেশটির শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক সেনসেক্স আজ ৮৭৪ পয়েন্ট খুইয়েছে। এর আগে গত বুধবার ৭৭৪ পয়েন্ট খুইয়েছিল সেনসেক্স।

ভারতীয় পত্রিকা ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গ্রুপের স্টক জালিয়াতি নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের জেরেই মূলত শেয়ার সূচকের এত বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে আরও কিছু কারণ উল্লেখ করেছে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিটের আদলে ভারতে আছে দালাল স্ট্রিট, মুম্বাই শহরের যে সড়কে বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ অবস্থিত। সংবাদে বলা হয়েছে, দালাল স্ট্রিটের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। সামনেই ভারতের বাজেট পেশ হবে, সেই সঙ্গে আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের বৈঠক—এই দুটি ঘটনার দিকে এখন তাকিয়ে আছেন তাঁরা। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের আস্থা যে কমেছে, তার প্রমাণ হলো, ভারতের স্টক মার্কেটের অস্থিরতার সূচক হিসেবে খ্যাত ভিআইএক্সের মান বেড়েছে ১৮ শতাংশ।

আদানি গোষ্ঠীর স্টক জালিয়াতি নিয়ে গত বুধবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হিনডেনবার্গ রিসার্চ। এ ঘটনার জেরে আদানির বিভিন্ন তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে আদানির সম্পদের মূল্য। আদানির কোম্পানির শেয়ারের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক কোম্পানির শেয়ারের দামও কমেছে। দেখা গেল, শুক্রবার বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির বাজার মূলধন কমেছে ২৬৯ দশমিক ৭০ লাখ কোটি রুপি। এতে দালাল স্ট্রিটের বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হলো ৬ দশমিক ৮ লাখ কোটি রুপি।

আদানি গোষ্ঠীর কোম্পানিগুলোর মধ্যে আদানি পোর্ট, আদানি গ্রিন ও আদানি টোটাল গ্যাসের শেয়ারদর কমেছে ২০ শতাংশ, আর আম্বুজা সিমেন্টের দর কমেছে ২৫ শতাংশ। আদানি পাওয়ার, আদানি উইলমার ও এনডিটিভির শেয়ারদর সর্বনিম্ন সীমায় নেমে আসে। এ ছাড়া আজ যে আদানি এন্টারপ্রাইজের এফপিও বাজারে এসেছে, তার মূল্যও ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে।

সবচেয়ে বেশি দর কমেছে ব্যাংকের শেয়ারের। ভারতের শেয়ারের বাজারের আরেক সূচক নিফটির মান কমেছে ১ হাজার ৩০০ পয়েন্ট। বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে ৭ শতাংশের মতো। অথচ কিছুদিন আগেও নিফটির অবস্থা ভালোই ছিল। ব্যাংকের শেয়ারের দরপতনের কারণ হলো, দেশটির বেশ কিছু ব্যাংক যেমন, এসবিআই, ব্যাংক অব বারোদা, পিএনবি ও আইসিআইসিআই ব্যাংক থেকে আদানি গোষ্ঠীর মাত্রাতিরিক্ত ঋণ নেওয়ার কারণে ব্যাংক খাত নিয়েই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ আদানি গোষ্ঠী এসব ঋণ পরিশোধ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে।

তবে ভারতের ব্রোকারেজ হাউস সিএলএসএ অ্যান্ড জেফরিস বলেছে, ভারতের উল্লিখিত ব্যাংকগুলো থেকে আগানি গোষ্ঠীর নেওয়া ঋণের পরিমাণ বেশি নয়। ফলে তা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। তাদের হিসাব অনুসারে, ভারতের ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ আদানি গোষ্ঠীর। সরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ এ ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা আদানি গোষ্ঠীর আছে।

এদিকে আদানির জালিয়াতির খবর ছাড়াও আরও কিছু ঘটনাকে দরপতনের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইকোনমিক টাইমস। সেগুলোর মধ্যে আছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের ইউনিয়ন বাজেট পেশ, ভারতের সরকারি বন্ডের সুদহার বৃদ্ধি ও বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানির তেলের মূল্যবৃদ্ধি।

এআর-০৯/২৭/০১ (আন্তর্জাতিক ডেস্ক)