অনেকের মাঝে থেকেও, মুখে হাসি মেখেও, সুখ নেই। আদতে সুখী নন আপনি। সম্পর্কের রসায়নগুলো যেভাবে পালটে যাচ্ছে, তারই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এই অ-সুখ। কিন্তু মন যে খারাপ সে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। নিজের বুকে হাত রেখে আজ কেউ বলতে পারবে না সে সুখী। মুখের হাসি আর মনের চাপা যন্ত্রণা বয়ে নিয়ে চলেছে সবাই। ছেলেবেলার মাসুমিয়ত নেই। কৈশোরের মাধুরীমিশ্রিত প্রেম নেই। একটিও বন্ধু নেই প্রকৃত। কিন্তু আছে ‘সবাই’। বার্থডে উইশ আছে। ভ্যালেন্টাইন্স ডে আছে। মাদার্স ডে, ফাদার্স ডে আছে। নেই আশ্রয়। একজন ধাক্কা দেয়। অন্যজন উঠে দাঁড়ায়। নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করে। মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে সরে আসে। পথ ছেড়ে দেয়। আবার করে সুখী হতে চায়। কেউ সুখী হয়। কেউ হয় না। যাঁরা হয় না, তাদের নতুন করে সুখী করার জন্যই আমাদের আজকের প্রতিবেদন –
১.পরকে খুশি করতে পারলে নিজেও সুখী হওয়া যায়
প্রতিদিন অন্তত তিনজন ব্যক্তিকে খুশি করার চেষ্টা করুন। সে যেই হোক। অফিসের কেউ, বাড়ির কেউ বা অচেনা কোনও ব্যক্তি।
২.নিজের সঙ্গে ১০ মিনিট
প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট চুপ করে বসে থাকুন আপন মনে। তার জন্য বারান্দাটাই সঠিক জায়গা।
৩.জেগে জেগে স্বপ্ন দেখুন
রাতে ঘুমনোর সময় স্বপ্ন দেখা আমবাত। জাগ্রত অবস্থাতেও স্বপ্ন দেখুন। মানে, বলতে চাইছি, নিজের ইচ্ছেগুলো নিয়ে ভাবুন। কী করতে ইচ্ছে করে, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কী, সবকিছু ভাবুন। মনের দুঃখকে প্রশ্রয় দিয়ে ইচ্ছেগুলোকে মেরে ফেলবেন না।
৪. যে যাই বলুক, আমার বয়েই গেল
লোকে কী বলছে, লোকে কী ভাবছে, সবকিছুকে বুড়ো আঙুল দেখাতে শুরু করুন। নিজে কী ভাবেন, কী করতে চান, সেটাকেই গুরুত্ব দিন।
৫.সবকিছু জেতার চেষ্টা নয়
জীবনে অনেক কিছুতে জয় আছে, অনেক কিছুতে পরাজয় আছে। দুটোকেই সমানতালে মেনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। জয়ের আনন্দে যেমন গা ভাসানো ঠিক না, তেমনই পরাজয়ের বেদনায় ভেঙে পড়া ঠিক না। দুটোর মধ্যে ব্যালেন্স রাখাটা জরুরি। পরাজয়কে মেনে নিতে শিখুন। তার থেকে শিক্ষা নিন।
৬.সমালোচনা ছাড়ুন
কথায় আছে বোবার শত্রু নেই। সত্যিই নেই। মানুষের সবচেয়ে ধারালো অস্ত্র তার বাক্য। তার কথা বলার ক্ষমতা। মধুর বাণী যেমন মন জয় করে নিতে পারে, তেমনই কটু কথা কোণঠাসা করে দিতে পারে। তাই কোনওরকম সমালোচনা নয়। কোনও ব্যক্তি সম্পর্কে অন্য কোনও ব্যক্তির কাছে সমালোচনা করার অভ্যেস এবার আপনাকে ত্যাগ করতে হবে।
৭. কাউকে ঘৃণা নয়
জীবন খুব সীমিত। আজ আছি, কাল নেই। এইটুকু সময়ে হিংসা ছাড়ুন। ঝগড়া, বিবাদ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। সকলের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন। হতেই পারে কাউকে আপনার পছন্দ নয়। সেটা সেই ব্যক্তির সামনে প্রকাশ করবেন না। জানবেন, অপ্রিয় ব্যক্তির সঙ্গে সুমিষ্ট ব্যবহার করলে আপনি মানুষ হিসেবে অনেক বড় প্রমাণিত হবেন।
৮.মিশুন বৃদ্ধ ও শিশুদের সঙ্গে
ছোটো শিশু ও বৃদ্ধ ব্যক্তির সঙ্গে সময় কাটান। এদের মধ্যে জটিলতা থাকে না। ভালো থাকবেন।
৯.বন্ধুদের হাতছাড়া নয়
ক্যারিয়ারিস্ট হওয়া ভালো, কিন্তু তার জন্য সবাইকে ভুলে যাওয়া ঠিক নয়। কাজের ফাঁকে সময় বের করে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিন। মন ফুরফুরে হবে।
১০.দুর্ঘটনা ভুলুন
অতীতের কালিমালিপ্ত দুর্ঘটনা ভুলে যান। খারাপ দিনের স্মৃতিগুলো মুছে ফেলুন মন থেকে।
১১. ৮ ঘণ্টার ঘুম
অল্প ঘুম নয়। দিনে অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমোন। এতে শরীরের ক্লান্তির সঙ্গে মনের ক্লান্তিও মিটবে।
১২.অন্যদের সঙ্গে তুলনা কেন?
অমুকে বাড়ি কিনল, তমুকের স্যালারি বাড়ল – ছাড়ুন অন্যের প্রসঙ্গ। নিজের লক্ষ্য স্থির করুন। নিজের বেছে নেওয়া পথে হাঁটুন। আপনি জানেন না অন্যের লক্ষ্য ঠিক কী। কিন্তু নিজের লক্ষ্যের ব্যাপারে আপনার একটা পরিষ্কার ধারণা আছে। সেদিকে মন দিন। তা হলেই জীবনে সুখ খুঁজে পাবেন।
১৩.বই পড়ুন
দুঃখে ডুবে না গিয়ে, বরং বইয়ের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে দিন। অনেক অনেক বই পড়ুন। দুঃখ দূর হবে। বইয়ের সঙ্গে নিপাট বন্ধুত্ব তৈরি হবে আপনার। এমন বন্ধুত্ব যা মনুষ্য সম্পর্কের অনেক ঊর্ধ্বে।
১৪.সময়ের উপর আস্তা
মনে রাখবেন Time is the best healer। সময় সব ঠিক করে দেয়। জীবনে কোনও অকিঞ্চিতকর ঘটনা ঘটলে ধৈর্য ধরুন। হুটপাট কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না। সময়ের অপেক্ষায় থাকুন। সব ঠিক হয়ে যাবে।
১৫.জগিং
নিয়মিত ১০-৩০ মিনিট জগিং করে আসুন। এই দৌড় আপনাকে মানসিকভাবে অনেক শক্তি দেবে।
আরএম-২৭/৩১/১২ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)