বাঙালি ‘সেক্সিজম’ বোঝে না

সেক্সিজম

নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে পোস্ট করা একটি ছবি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু গণমাধ্যম। কিন্তু প্রবাদ আছে, শত্রুকেও অনৈতিক আক্রমণ করতে নেই। সে কথাটি বোধয় ভুলেই গিয়েছিলেন তসলিমাবিদ্বেষী কথিত সাংবাদিকরা। যে কারণে ‘হিতে বিপরীত’ বাগধারার মতো নিজেরাই হাসির পাত্র হয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

তসলিমার ওই ছবিতে লেখা ছিল, ‘sexism still exists’। যার মানে ‘লিঙ্গবৈষম্য এখনও টিকে আছে’। কিন্তু ‘sexism’ শব্দটিকে প্রায় সবগুলো পত্রিকা ‘যৌনতা’ (sex) ভেবে ভুল করেছে এবং সেই অনুযায়ী সংবাদ প্রকাশ করে। ফেসবুক-টুইটারে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। সাংবাদিকতা চর্চায় এখন অশিক্ষিত ও প্রশিক্ষণহীনদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে কি-না, সে প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।

খোদ তসলিমা নাসরিন একটি ব্যাঙ্গাত্বক স্ট্যাটাস দিয়েছেন ফেসবুকে। তসলিমার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো :

হায় হায় কই যাই! বাঙ্গালিরা সেক্সিজমের অর্থ জানে না। গতকাল একটি ফটো পোস্ট করেছি ফেসবুকে। ওই ফটোটি ২০০৪ সালের, আমি যখন আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেলোশিপ করি তখনকার। ল্যাংডন স্ট্রিটে, যেখানে আমার ফ্ল্যাট ছিল, সেখান থেকে বেরিয়ে হার্ভার্ডের কেনেডি স্কুলে যেখানে আমার অফিস ছিল, একদিন যাচ্ছি, দেখি হার্ভার্ড ল কলেজের সামনের ফুটপাতে লেখা ‘সেক্সিজম স্টিল একজিস্ট’। খুব পছন্দ হলো লেখাটি, সঙ্গে সঙ্গেই বসে পড়লাম লেখাটির পাশে। আমার সঙ্গে যে ছিল, সে লেখাটির সংগে আমার একটি ফটো তুলে নিল। এটিই সেই ফটো।’

‘দুর্ভাগ্য, বাঙ্গালিরা সেক্সিজমের বাংলা জানে না। এদের মাথায় সেক্স ছাড়া অন্য ভাবনা নেই। তাই সেক্স দিয়ে যে শব্দই শুরু হয়, সবকিছুকেই যৌনসঙ্গম ভেবে নেয়। সেক্সিজম স্টিল একজিস্ট- এর অনুবাদ বাংলা পত্রিকাগুলো করেছে, ‘যৌনতা এখনও বেঁচে আছে’। গাণ্ডুদের কাণ্ড দেখে হাসবো না কাঁদবো বুঝে পাচ্ছি না। সেক্সিজম মানে যে নারীবিদ্বেষ বা লিঙ্গবৈষম্য তা বোঝার ক্ষমতা এদের নেই, এরাই এখন শিল্পী সাহিত্যিক সাংবাদিক। এরাই যৌনরসাত্মক বর্ণনা দিয়ে এদের খবরটা ভরিয়েছে, এরা বলতে চাইছে যেহেতু যৌনতা ছাড়া আমি বাঁচি না, তাই যৌনতা নিয়ে পোস্ট দিয়েছি। bd24live, somoyerkonthosor, Bangladesh Journal, Kolkata24x7 এরকম সবাই লিখেছে- ‘যৌনতা’ নিয়ে ফের আলোচনায় তসলিমা’!

এরপর একটি খবরের নমুনা পেস্ট করে দিয়েছেন নির্বাসিত লেখিকা। কমেন্টবক্সে কিছু সাইটের লিংকও তিনি পোস্ট করেছেন। এমনিতেই বেশিরভাগ মানুষ কিছু না বুঝেই কোনো সংবাদ নিয়ে মাতামাতি করে। এসব কারণেই গণমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।

আরএম-০২/০৯/০১ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)