প্রত্যেক স্ত্রীর আসলে থাকে চারটি স্বামী; আপনি চতুর্থ। জানুন এই বিবাহরহস্য

প্রত্যেক স্ত্রীর আসলে

প্রত্যেক স্ত্রীর আসলে চারটি করে স্বামী থাকে। যে পুরুষকে সমাজ কোনও মেয়ের স্বামী হিসেবে জানে, পৌরাণিক নিয়ম অনুসারে, সে হল তার চতুর্থ স্বামী। কিন্তু সেটা কী ভাবে সম্ভব?

বর্তমান ভারতে নারীস্বাধীনতা খুব গর্ব করার মতো জায়গায় নেই। ভারতীয় সমাজ বিভিন্ন ভাবে নারীর স্বাধীনতাকে খর্ব করে থাকে। কিন্তু এক সময়ে এই ভারতেই নারীর যথেষ্ট সম্মান এবং স্বতন্ত্রতা ছিল। প্রাচীন ভারতের নিয়ম অনুসারে, প্রত্যেক স্ত্রীর আসলে চারটি করে স্বামী থাকে। যে পুরুষকে সমাজ কোনও মেয়ের স্বামী হিসেবে জানে, পৌরাণিক নিয়ম অনুসারে, সে হল তার চতুর্থ স্বামী। কিন্তু সেটা কী ভাবে সম্ভব?

এক জন মহিলার চারজন স্বামীর উল্লেখ পাওয়া যায় হিন্দু-বিবাহের সময়ে উচ্চারিত মন্ত্রে। আজকের দিনে যাঁরা সনাতন প্রথা মেনে ধর্মমতে বিয়ে করেন, তাঁদের মধ্যে বিয়ের মন্ত্রের প্রকৃত অর্থ বোঝেন, এমন মানুষ দুর্লভ। ফলে তাঁরা জানতেও পারেন না, বিয়ের সময়ে উচ্চারিত মন্ত্রে ঠিক কী বলা হচ্ছে।

বিয়ের সময়ে যে মন্ত্রোচ্চারণ করা হয়, সেই মন্ত্র অনুসারে কোনও নারীকে তাঁর লৌকিক স্বামীর হাতে অর্পণ করার আগে তিন জন দেবতা অথবা গন্ধর্বের হাতে অর্পণ করা হয়। বিবাহের আসনে বসা কন্যাকে প্রথমে অর্পণ করা হয় চন্দ্রের হাতে।

তার পর সে অর্পিত হয় বিভাবসু নামক গন্ধর্বের হাতে। অতঃপর মেয়েটির স্বামীত্ব অর্পিত হয় অগ্নির হাতে। একেবারে শেষে বরের আসনে বসা পুরুষটিকে মেয়েটির স্বামী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ বৈদিক নিয়ম অনুযায়ী, যে পুরুষ কোনও মহিলার স্বামী হিসেবে সমাজে পরিচিত হন, তিনি আসলে তাঁর চতুর্থ স্বামী।

মহাভারতে কুন্তীর মুখে নারীস্বাধীনতার এবং নারীর একাধিক স্বামী গ্রহণের কথা উচ্চারিত হয়েছিল। কুন্তীকে এক জায়গায় বলতে শোনা গিয়েছে, আগেকার দিনে মেয়েরা নিজের পছন্দমতো যে কোনও পুরুষকে তার সঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করতে পারত। ইচ্ছে হলে একাধিক পুরুষকেও স্বামী হিসেবে নির্বাচন করতে পারত। মহাভারতে দ্রৌপদীর কাহিনিতেও এই একাধিক স্বামী গ্রহণের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।

পরবর্তী কালে নারীর এই অধিকার খর্ব করা হয়। বিবাহের নতুন নিয়ম চালু হয় সমাজে। এই নিয়ম প্রচলনের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন শ্বেতকেতু। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, এক দিন শ্বেতকেতু তাঁর মা-কে কোনও পরপুরুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলেন। তখনই তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে, ‘তা হলে যে পুরুষকে আমি আমার পিতা বলে জানি, তিনিই কি আমার প্রকৃত পিতা?’ তাঁর মনে হয়, নারীর একাধিক পুরুষ সঙ্গী না থাকাই বাঞ্ছনীয়। নারীর বহুবিবাহকে তিনি নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেন।

কালে কালে নারীর উপর পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অধিকার স্থাপিত হয়। নারী কার্যত তার স্বামীর সম্পত্তি হয়ে ওঠে। কিন্ত এখনও বিবাহের মন্ত্রে নারীর চার স্বামীর কথা উল্লেখ হয়।

আরএম-২৫/০৯/০২ (লাইফস্টাইল ডেস্ক, সূত্র: এবেলা)