এই বৈশাখের ফ্যাশন ট্রেন্ড

এই বৈশাখের ফ্যাশন

পয়লা বৈশাখ মানেই উৎসব। আর এ উৎসব মানেই বাঙালিয়ানা। বছর ঘুরে আবারও দরোজায় কড়া নাড়ছে বৈশাখ। এখনই সময় বৈশাখী উৎসবের প্রস্তুতি নেওয়ার। বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বৈশাখী কালেকশনে সেজেছে ফ্যাশন হাউজগুলো।

বৈশাখের প্রথম দিনে আবহাওয়া থাকে গরম। সারাদিন ঘোরাঘুরির জন্য সাদা রঙটা তাই স্বস্তিদায়ক। আর বৈশাখের রঙ হলো লাল। তাই বৈশাখী উৎসবে সবাই লাল সাদাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। ফ্যাশান হাউজগুলোর পোশাক সম্ভারেও লাল-সাদাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। গরমের জন্য সুতি কাপড়ই সবচেয়ে আরামদায়ক। ইদানিং তাঁতের কাপড়ও বৈশাখী ফ্যাশনে প্রাধান্য পাচ্ছে।

বৈশাখী উৎসব বাঙালি নারীর প্রথম পছন্দ শাড়ি। পাশাপাশি নারীরা এখন সালোয়ার-কামিজ ও ফতুয়া পরেন স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য। বৈশাখী আয়োজনে ছেলেরা যে পিছিয়ে আছে তা কিন্তু নয়। পাঞ্জাবি, শর্ট পাঞ্জাবি, ফতুয়া, টি-শার্ট পরেন নিজেদের পছন্দমাফিক। বড়দের পাশাপাশি ছোটদের পোশাকেও নিয়ে আসা হয়েছে বৈশাখের বিভিন্ন চিত্র। যাতে করে শিশুরাও এখন থেকেই বাংলা নবর্বষ সম্পর্কে জানতে পারে। শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, টি-শার্ট, শার্ট প্রভৃতি পোশাকে বাংলার বিভিন্ন মোটিফ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এবারের ডিজাইনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো লোকশিল্প, যা প্রায় বিলুপ্তির পথে। বিভিন্ন কাজের সমন্বয়ে পোশাকে তুলে ধরা হয়েছে সেই সব লোকশিল্পকে। ব্লক, অ্যাপলিক, এমব্রয়ডারি, স্প্রে, কম্পিউটার এমব্রয়ডারি, হাতের কাজ, কারচুপি বা কয়েকটি মাধ্যমকে একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে।

বৈশাখী সাজে ফ্যাশন হাউজগুলোর পসরায় চলুন চোখ রাখা যাক।

আড়ং

প্রতিবারের মতো এইবারও বৈশাখকে সামনে রেখে আড়ং নিয়ে এলো ভিন্ন ধারার পোশাক। বৈশাখের এবারের পোশাক গুলোতে যেমন আছে বৈচিত্র্য তেমনি আছে দেশীয় থিম। মোটিফ হিসেবে এবার প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে প্রাচীন স্থাপনাগুলোর নকশা। পাশাপাশি আলপনার নকশার উজ্জ্বল লতা, পাতা, ফুল নকশা হিসেবে থাকছে পোশাকে। আড়ংয়ে এবারের কামিজের কাটে দেখা যাবে দুই লেয়ারের নকশা। কামিজের ওপরের অংশে থাকবে সুতি কাপড়ের ব্যবহার, নিচে থাকবে সিল্ক বা জর্জেট। ওপরের অংশে থাকবে বাটিক, না হলে হাতের কাজের ব্যবহার নিচের লেয়ারে থাকবে প্রিন্টের নকশা।

কে ক্রাফট

কে ক্রাফটের বৈশাখী আয়োজনে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে শাড়িতে। তাদের আয়োজনে থাকছে নিজস্ব তাঁতে বোনা বিভিন্ন মোটিফের শাড়ি। লাল-সাদার পাশাপাশি অন্যান্য রংও প্রাধান্য পেয়েছে বৈশাখী আয়োজনে। ধরন, কাজ এবং কাপড়ের ভিত্তিতে এই শাড়িগুলোর দাম হতে পারে ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা বা আরও বেশি। কে ক্রাফটের ব্লক বাটিকের সালোয়ার কামিজের দাম পড়বে ১ হাজার ৮শ’ টাকা। পাঞ্জাবির দাম শুরু ১ হাজার ৮শ’ টাকা থেকে।

অঞ্জনস

প্রতিবারের মতো অঞ্জন’স এবারেও তার নিজস্ব ভাবনায় বাংলাদেশের ঐতিহ্য লোকজ কারুশিল্প তুলে ধরেছে বৈশাখী পোশাকের ক্যানভাসে। এ ছাড়া কাঠের ওপর খোদাই করা নকশাও বৈশাখের পোশাকে মোটিফ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি জামদানি শাড়িতে যে নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়, কামিজের কলিতে আনা হয়েছে সেই নকশার ছাঁচ। শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, পাঞ্জাবীসহ বাচ্চাদেরও নানা পোশাকের সম্ভার রয়েছে এবার। লাল সাদার পাশাপাশি অন্যান্য রঙেরও প্রাধান্যও লক্ষ্য করা যায় তাদের পোশাকে। বিভিন্ন শ্রেণীর ক্রেতাদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন রেঞ্জের পোশাক।

সাদাকালো

বৈশাখ আয়োজনে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে ‘শখের হাঁড়ি’ মোটিফকে। রঙিন পাত্রে মাছ, পাখি, ময়ূর, পেঁচা এ ফর্মগুলোকে লাল, নীল, হলুদ ইত্যাদি রং ব্যবহার করে ফুটিয়ে তোলা হয় এ হাঁড়িকে, যা সাংকেতিকভাবে জনপ্রিয় মঙ্গল ঘাট নামে। সাদাকালো এ মোটিফকে সাদা এবং কালো এ দুটি রঙ ব্যবহার করে ব্লক, স্ক্রিন, এমব্রয়ডারি, কারচুপিসহ নানা মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছে এবারের বৈশাখী পোশাক।

নিপুন

বৈশাখে রংধনুর রং-এ পোশাক তৈরি করেছে নিপুণ। বেশি প্রাধান্য পেয়েছে লাল কমলা আর অফ হোয়াইট। সঙ্গে রয়েছে নীল, সবুজ, পেস্টাল রং, সমুদ্র রং, বোতল গ্রিনসহ আরও রংগুলো। তিনি বলেন, বৈশাখ যেহেতু একেবারেই আমাদের বাঙালি উৎসব তাই আমাদের এবারের পোশাকের ক্ষেত্রেও আমাদের দেশের প্রকৃতিকে নিয়ে এসেছি। ফুল, লতা-পাতা, পাখি দিয়ে ডিজাইনগুলো করা হয়েছে।আর বাড়ির ছোট-বড় সবার জন্য করা হয়েছে এবারের বৈশাখ আয়োজন। শাড়ি, পাঞ্জাবির সঙ্গে রয়েছে বড়দের ফতুয়া, শার্ট, কুর্তি, ছোটদের পাঞ্জাবি, ফতুয়া, ছোট মেয়েদের ফ্রক। একইসঙ্গে বৈশাখের আয়োজনে বাড়ি সাজাতে নিপুণ নিয়ে এসেছে বৈশাখি আয়োজনের হাউসহোল্ড নানা প্রোডাক্ট।

সেইলর

বৈশাখের পোশাকে শতভাগ বাঙালিয়ানার থিম, মোটিফ, নকশা দিয়ে ডিজাইন এনেছে ফ্যাশন ব্র্যান্ড সেইলর। পোশাকের প্যাটার্ন ও কাট বৈচিত্র্যের সাথে যোগ হয়েছে এমব্রয়ডারি এবং র্ডজিটাল প্রিন্টেড ভ্যালু এডিশনসহ বিভিন্ন ছাপ চিত্র। সেইলর – বৈশাখী পোশাকগুলোর মোটিফ হিসাবে ব্যবহার হয়েছে বাংলা সংক্রান্তির রঙের ছটা, পাখির অবয় এবং ফুল ও প্রকৃতির নানা সৌন্দর্য । শতভাগ সুতি কাপড়ে তৈরি এসব পোশাকে থাকছে রঙের উজ্জ্বলতা। ডিজিটাল প্রিন্ট, কাট এন্ড স্যু ডিজাইন এবং স্লিম ফিট প্রাধান্য পেয়েছে। সেইলর এর হেড অব ব্র্যান্ড রেজাউল কবির জানান, ‘সেইলর শতভাগ বাঙালিয়ানাকে পোশাকের মোটিফে তুলে ধরেছে।

নন্দন কুটির

বাংলা নববর্ষকে সামনে রেখে নন্দন কুটির তাদের পোশাকের বিশাল সম্ভার নিয়ে প্রস্তুত। তানিয়া তোফায়েলের ডিজাইন করা পোশাকগুলোতে রাখা হয়েছে বৈশাখী আমেজ। লাল, সাদা ছাড়াও কমলা, হলুদ ইত্যাদি রঙের ব্যবহার দেখা গেছে ওয়ান পিস কামিজগুলোতে। কামিজগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে এখানে পেয়ে যাবেন বিভিন্ন রঙের ঢোল সালোয়ার, স্কার্ট পালাজোসহ টাইডাইয়ের ওড়নাও। ওয়ান পিসগুলো কিনতে পারবেন ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৬৫০ টাকার মধ্যে। ঢোল সালোয়ারের দাম পড়বে ৫৫০ টাকা। আপনি চাইলে অনলাইনেও কিনতে এসব পোশাক।

লোকজ

ছেলেদের জন্য বৈশাখী কালেকশনে লোকজ এনেছে পাঞ্জাবি। পোশাকের মেটেরিয়াল হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ফ্যান্সি কটন, বিসকসসহ পিওর সুতি কাপড়। লোকজের পাঞ্জাবি পাওয়া যাবে ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৪৯০ টাকার মধ্যে।

গ্রামীণ মেলা

বৈশাখে ফ্যাশন হাউজ গ্রামীণ মেলায় এসেছে শাড়ি, থ্রি-পিস শার্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া ও শিশুদের পোশাক। দেশীয় কাপড়ে বৈশাখী আমেজের রঙে ও নকশায় এসব পোশাক তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন প্রিন্ট ও হাতের কাজের মাধ্যমে।

আরএম-৩০/০৭/০৪ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)