সহকর্মীর সঙ্গে এই কাজটাই একঘেয়েমি কাটানোর মোক্ষম দাওয়াই!

সহকর্মীর সঙ্গে এই

একঘেয়ে চলতে থাকা জীবন থেকে ছোট্ট একটা ব্রেক সুস্থ জীবনযাপনের পাসওয়ার্ড। এখন পড়ুয়া থেকে চাকরিজীবী, কম্পিটিশনের যুগে কারও বিরাম নেওয়ার অবকাশ নেই। সবাই ছুটছে। কাছের মানুষের সঙ্গে ভাব বিনিময়ের মুহূর্ত হারাচ্ছে। তখন জীবনের স্বাভাবিকতা আটকে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এখন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপই কোয়ালিটি টাইম কাটানোর একমাত্র পথ। এই অবিরাম এগিয়ে থাকার দৌড়ে ক্ষণিকের সুখের আড়ালে বাসা বাঁধছে শরীর ও মনে নানা অসুখ। তাই সুস্থভাবে বাঁচতে শত কাজের মধ্যেও সময় বের করে কোথাও বেড়াতে যান। তবেই শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা সম্ভব।

শারীরিক ক্ষতি

যাদের কাজের এক জায়গায় অনেকক্ষণ ধরে বসে কাজ করতে হয় সেক্ষেত্রে দেখা গেছে যে বিরতি না নিলে অনেকরকম শারীরিক সমস্যা হয়। হাই কোলেস্টেরল, হাই ট্রাইগ্লিসারাইড, হাই গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিস, ওজন বৃদ্ধি, হার্টের অসুখ এবং কিছু ধরনের ক্যানসার। এছাড়া মাংসপেশি, হাড়ে ব্যথা ও স্নায়ুর সমস্যা থেকে বিভিন্ন রকম ব্যথা ও ব্যাধির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ফলে ঘাড়, পিঠ, কোমর, কব্জি বা হাতে ব্যথা হতে থাকে।

মানসিক ক্ষতি

একঘেয়েমির প্রথম ফল কাজে একগ্রতার অভাব। কিছুতেই মন দিয়ে কাজ করতে পারা যায় না। এই কাজের জীবনের তালমিল ঘটাতে না পারলে তার প্রভাব মানুষের সৃজনশীল চিন্তাভাবনায় পড়ে। অন্য মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে নানা সমস্যা হয় ফলে মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জীবনযাপনের একঘেয়েমির ফলে প্রত্যেকেরই অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই সব মানসিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই বর্তমানে যুবক-যুবতীদের মদ্যপানে আসক্তি বাড়ছে।

বিরতির পথ

একঘেয়েমি কাটাতে রোজকার গতে বাঁধা জীবনে ছোট ছোট বিরতি জরুরি। তা নানাভাবে হতে পারে।

কাজের ধরন পালটানো জরুরি

যদিও সবরকম পেশায় এটা করা সম্ভব নয়। আইটি সেক্টর/এনজিও, মার্কেটিংয়ে চাকরি বা সাংবাদিকতা ইত্যাদি পেশার ক্ষেত্রে চাকরি পালটানোর সুযোগ থাকে। এক্ষেত্রে বেশি পারিশ্রমিকের চেয়েও মূল কারণ হওয়া উচিত কাজের ধরন বা প্রকৃতি পালটানো। দীর্ঘদিন এক রকম কাজ করতে করতে সৃজনশীলতা হারিয়ে যায়। তাই অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন কোম্পানি কর্মীদের একঘেয়েমি দূর করার জন্য বদলি করেন অন্য জায়গায়। এতে কাজের পরিবেশ পালটানোর পাশাপাশি কর্মীদের কাজের দক্ষতাও বেড়ে যায়।

বিদেশে একটা খুব প্রচলিত অভ্যেস আছে যেখানে দেখা যায় যে, মানুষ বা এক দম্পতি নিজের ঘর-বাড়ি বেচে দিয়ে বিদেশ ভ্রমণে বেড়িয়ে পড়েন। এই অভ্যেসের মূল কারণ জীবনে পরিবর্তন আনা।

কাজের মাঝে কয়েক মিনিটের ব্রেক

লাঞ্চ ব্রেক ছাড়াও কাজের মাঝে কয়েক মিনিটের বিরতি কাজের উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। পাশাপাশি একটানা বসে কাজ করার ফলে যে শারীরিক সমস্যাগুলি হয় তা থেকেও মুক্তি মেলে। তাই উচিত প্রতি আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা অন্তর ২-৩ মিনিটের ছোট্ট বিরতি নেওয়া। চেয়ার থেকে উঠে অল্প হেঁটে বা এদিক ওদিক ঘুরে এলে অনেক উপকার। এতে রক্তে ব্লাড সুগার, ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা যেমন ঠিক থাকে, পাশাপাশি নিজের সহকর্মীর সঙ্গে একটু হেসে মজার কথা বললে মনও ভাল হয়ে যায়। এতে কাজে মনঃসংযোগও বাড়ে। বিদেশে অনেক অফিসেই দেখা যায় জিম থাকে, এই ছোট বিরতির সময় অনেকে একটু এক্সারসাইজ করে আসেন। দেখা গিয়েছে এতে কর্মীর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

কাজ থেকে কিছু দিনের ছুটি নিয়ে হাওয়া বদল

একঘেয়ে কাজের চাপে যে মানসিক চাপ এবং অবসাদ তৈরি হয় তা থেকে নিদান পেতে বছরে অন্ততপক্ষে দু’বার ৫-৭ দিনের জন্য কাজ থেকে ছুটি নেওয়া দরকার। এই সময় অফিস বা কাজের চিন্তাভাবনা থেকেও বিরত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কেমন পরিবেশে ছুটি কাটাচ্ছেন তা গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা বলছে যে, বর্তমানে শহুরে মানুষদের চারিদিকে কংক্রিটের বাড়ি, ফ্ল্যাটের সারি। তাঁরা যদি পাহাড় বা সমুদ্র, জঙ্গল কিংবা নদী তীরস্থ স্থানে ঘুরতে যান তবে অনেক উপকার মেলে। এতে মানসিক চাপ, অবসাদ কমে ও কাজে একাগ্রতা বাড়ে। শরীরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। মানসিক চাপ থেকে নিঃসৃত হরমোন কর্টিজেলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ফলে মন শান্ত হয়, একটা তৃপ্তির অনুভূতি জাগে। ফলে মস্তিষ্ক আবার নতুন করে চারিদিকের সব ঘটনাগুলি সাজাতে আরম্ভ করে।

ঘর থেকে বেরতে হবে

যাঁরা সারাদিন বাড়িতেই থাকেন তাঁদেরও উচিত ঘর ছেড়ে কয়েকদিনের জন্য অন্য কোথাও ঘুরে আসা। একঘেয়েমি বয়স্ক মানুষদেরও নানা দুশ্চিন্তার জালে জড়িয়ে দেয়। এখন প্রায় ঘরে ঘরে এমন দেখা যাচ্ছে যে, সন্তানরা আর বৃদ্ধ বাবা-মায়ের কাছে থাকেন না। হয় কাজের তাগিদে অন্য শহরে নাহলে দেশের বাইরে। ফলে বৃদ্ধ বাবা-মায়েরা সারাদিন ঘরের চার দেওয়ালে বদ্ধ জীবন। এরমধ্যেও একজন যদি গত হন তাহলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। এই একঘেয়েমি জীবন থেকেও মনের মধ্যে অবসাদ জন্ম নেয়। এটা কাটিয়ে ওঠার মূল মন্ত্র হল সমবয়সি মানুষদের সংস্পর্শে থাকা এবং মাঝে মধ্যে সামর্থ্য অনুযায়ী নিজের ছেলে-মেয়ের কাছে কিংবা বাইরে কোথাও সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘুরে আসা। এতে শরীর ও মন দুই-ই রিচার্জ হয়ে যায়। সুস্থও থাকা যায়।

আরএম-১১/২৮/০৪ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)