আপনার দুঃস্বপ্নগুলোর প্রকৃত মানে কী?

আপনার দুঃস্বপ্নগুলোর

আমাদের সকলেরই এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাই না? হঠাৎ করেই মধ্যরাতে ঘেমে-নেয়ে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া, হৃদপিণ্ডটি যেন লাফিয়ে বের হয়ে আসতে চাইছে, মুখ শুকিয়ে গেছে; তারপর হঠাৎ বুঝতে পারলেন, “ধুস শালা! এ কী ভয়ানক দুঃস্বপ্ন!”?

কিন্তু দুঃস্বপ্নগুলোর প্রকৃত মানে কী?

দুঃস্বপ্নও সাধারণ কোনো স্বপ্নের মতোই। এবং সাধারণ স্বপ্নের মতো দুঃস্বপ্নেও ঘুমানোর আগে আপনার সর্বশেষ কোনো ঘটনার অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে আগের দুই দিনের সচেতন ও অবচেতন অভিজ্ঞতাগুলোরই রুপকায়িত প্রতিফলন ঘটে।

যে কোনো স্বপ্নই আসলে আপনার দুনিয়াটার একটি মানে তৈরি করার চেষ্টা। স্বপ্নের মাধ্যমে আসলে আপনার মস্তিষ্ক আপনার অভিজ্ঞতাগুলোরই প্রক্রিয়াজাতকরণ করে এবং মস্তিষ্কের হার্ড ড্রাইভটিকে হালনাগাদ করার চেষ্টা করে।

অনেক সময় আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া আনন্দদায়ক কোনো অভিজ্ঞতার প্রক্রিয়াজাতকরন করে; আবার অনেক সময় কোনো চ্যালেঞ্জ এবং সত্যিকার অর্থেই কঠিন কোনো বিষয়- ভয়, উদ্বেগ, রাগ ও ক্ষোভের অভিজ্ঞতার প্রক্রিয়াজাতকরন করে।

সাধারণত বাস্তব জীবনের ভয়, রাগ বা অন্য কোনো নেতিবাচক আবেগ সংক্রান্ত ইস্যুর সমাধান না হয়ে জিইয়ে থাকলে তা বারবারই দুঃস্বপ্ন আকারে ঘুমের মধ্যে হানা দেয়। আসলে ক্ষণিকের স্বপ্নের মধ্যে এমন কোনো ইস্যুর সমাধান সম্ভবও হয় না। মস্তিষ্কের এমন কোনো ইস্যুর প্রক্রিয়াজাতকরনে বেশ কয়েকটি স্বপ্ন বা বেশ কয়েক বছরও লেগে যেতে পারে। আর আপনি যদি ইস্যুটির সমাধান করে ফেলেন তাহলে আর ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্নরা এসে হানা দেবে না। আপনি যদি স্বপ্ন দেখেন, কোথাও আগুন লেগেছে আর আপনি তা পানি দিয়ে নিভিয়ে ফেলেছেন বা কোনো ভয়ানক দৈত্যের মুখোমুখি হয়েছেন তাহলে তা আসলে কোনো দুঃস্বপ্ন নয়। এমন স্বপ্ন দেখার পর আপনি হয়তো ঘুম থেকে জেগে বলে উঠবেন, “আমি ফের উঠে দাঁড়িয়েছি এবং সমস্যাটির সমাধান করে ফেলেছি; বাহ ভালোই লাগছে।”

কিন্তু দুঃস্বপ্ন দেখার পর আপনার স্বস্তিদায়ক কোনো অনুভুতি হবে না। দুঃস্বপ্ন থেকে জাগার পর আপনার ভয়ের অনুভুতি কাটবে না। কারণ ইস্যুটির তখনো সমাধান হয়নি। দুঃস্বপ্নগুলোর সাধারণ একটি বৈশিষ্ট হলো, যে কোনো দুঃস্বপ্নই খুব বাস্তব মনে হয়। কারণ দুঃস্বপ্ন দেখার সময়ও আপনার দেহে দিনের বেলায় বাস্তব কোনো ভীতিমূলক ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার সময়ের মতোই ভয় সৃষ্টির জন্য দায়ী হরমোন বা স্ট্রেস হরমোন উৎপাদিত হয়।

আপনি যদি এমন কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেন যে আপনার মনে হচ্ছে আপনি কোনো ফাঁদে আটকা পড়েছেন, যেমন- আগুন, সুনামি বা কোনো সন্ত্রাসীর ফাঁদে আটকা পড়েছেন, যাই হোক না কেন মূলত অনুভুতিটা এমন যে, “আমি ফাঁদে আটকা পড়েছি, আমি বের হতে পারছি না”।

আর স্বপ্নে যেহেতু মস্তিষ্ক আপনার সর্বশেষ অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করে বিগত দুই দিনের অভিজ্ঞতাগুলোর প্রক্রিয়াজাতকরন করে সেহেতু এ ধরনের স্বপ্ন দেখার পরপরই আপনাকে যা করতে হবে তা হলো গত দুই দিনে বাস্তব জীবনের কোথায় আপনার ফাঁদে আটকে পড়ার মতো অনুভুতি হয়েছে তা পুনরায় স্মরণ করা। হতে পার আপনি কোনো সম্পর্কের ফাঁদে আটকা পড়েছেন বা কোনো চাকরি কিংবা নিজের নেতিবাচকতার ফাঁদে আটকা পড়েছেন।

আবার এমনও হতে পারে আপনার অবচেতন মনেও অজানা কোনো ফাঁদে আটকা পড়ার ভয় কাজ বিরাজ করছে। আর সেটাই ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন হয়ে আপনার ওপর হানা দিল।

আর কোনো দুঃস্বপ্ন বারবার ফিরে আসার মানে হলো বাস্তব জীবনের কোনো সমস্যার সমাধান না হয়ে জিইয়ে থাকার ইঙ্গিত দেওয়া। দুঃস্বপ্নের মাধ্যমে মস্তিষ্ক আপনাকে বারবার বিষয়টির যে সমাধান হয়নি তারই জানান দিচ্ছে।

তবে সুখবরটি হলো একটি টেকনিক আছে যেটি ব্যবহার করে আপনি কোনো দুঃস্বপ্ন চিরতরে দুর করতে পারবেন। এজন্য শুধু আপনার কল্পনা শক্তিকে একটু ব্যবহার করতে হবে। একে বলা হয় ড্রিম অ্যালকেমি বা স্বপ্ন রসায়ন।

এজন্য আপনাকে যা করতে হবে তা হলো, কোনো একটি দুঃস্বপ্ন দেখার পর সেটিকে পুনরায় কল্পনায় চিত্রায়ন করতে হবে। এবার শুধু আপনাকে দুঃস্বপ্নটির শেষচিত্রটুকু নিজের অনুকুলে বদলে দিতে হবে। এরপর দেখবেন ওই দুঃস্বপ্ন আর কখনো ফিরে আসবে না।

ধরুন আপনি স্বপ্ন দেখলেন দ্রুত গতিতে চলন্ত গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে আছেন আপনি কিন্তু হঠাৎ করেই গাড়িটির ব্রেক অকেজো হয়ে গেল; পা দিয়ে আপনি যতই চাপচাপি করছেন কোনো কাজ হচ্ছে না। জেগে ওঠার পর কল্পনায় দুঃস্বপ্নটির পুনচিত্রায়ন করার সময় আপনার কাজ হবে এর শেষ চিত্রটি বদলে দেওয়া। আপনি এবার নিজেকে দেখাবেন যে আপনি ব্রেক চেপে ধরেছেন এবং গাড়িটি থেমে গেছে। এরপর চাইলে একে আরো সামনে টেনে নিয়ে যেতে পারেন। যেমন গাড়িটি পুনরায় চালাতে শুরু করেছেন এবং যত ইচ্ছা গতি তুলে চালাচ্ছেন। বিষয়টি হাস্যকর মনে হলেও এর মাধ্যমে আপনি মূলত আপনার অবেচতন মনের সঙ্গে কথা বলছেন এবং অতিরিক্ত কাজের চাপের অনুভুতি বা কোনো কিছু বন্ধ করতে না পারা বা সমাধান করতে না পারার অনুভুতির প্রতি অবচেতন মনের যে প্রতিক্রিয়া তার গতি প্রকৃতি বদলে দিচ্ছেন। অনেকটা কম্পিউটার রিপ্রোগ্রামিং করার মতো।

প্রতিটি মানুষের স্বপ্নই নিঃসন্দেহে অনন্য এবং তাদের বাস্তব জীবনেরই প্রতিফলন ঘটে সেগুলোতে। তবে কিছু স্বপ্ন আছে যেগুলোর অর্থ সবার বেলাতেই এক হয়ে থাকে। এমন স্বপ্নগুলো হলো:

১. স্কুলে বা কর্মস্থলে প্যান্ট খুলে পড়তে দেখা

এর মানে হলো আপনি নিজেকে উন্মোচিত বা প্রকাশিত হয়ে পড়েছেন বলে মনে করছেন। আবেগগতভাবে উন্মোচিত বা লোকে আমার প্রকৃত চেহারা দেখে ফেলছে টাইপ অনুভুতি থেকে এই ধরনের দুঃস্বপ্ন ঘুমের মধ্যে আপনার ওপর হানা দেয়। বাস্তব জীবনে আপনার ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়া বা ইমেজ সংকটে পড়ার ফলেও আপনি এ ধরনের দুঃস্বপ্ন দেখে থাকতে পারেন।

স্বপ্নে যদি স্কুলে গিয়ে আপনি নিজের পরনের প্যান্ট খুলে পড়তে দেখেন তাহলে বুঝবেন আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে বলতে চাইছে যে নিজেকে আপনি শিশুর মতো ভাবছেন।

২. প্রস্তুতি ছাড়াই পরীক্ষা দিতে যাওয়া

এ ধরনের স্বপ্ন দেখলে বুঝবেন আপনার মস্তিষ্ক পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই কোনো বিষয়ের মুখোমুখি হওয়ার ভুল সম্পর্কে আপনাকে সাবধান করছে। এছাড়া সাফল্য সম্পর্কে আপনার বিশ্বাস, ব্যর্থতা নিয়ে আপনার উদ্বেগ এবং কোনো কিছুতে বিজয় লাভের ব্যাপারেও এতে কোনো ইঙ্গিত থাকতে পারে। এমনকি এ ধরনের স্বপ্ন এর সবগুলো বিষয় নিয়েও বিশ্লেষণ করতে পারে। এমনকি বাস্তব জীবনে উচ্চ মাত্রায় প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও আপনি এমন স্বপ্ন দেখতে পারেন। প্রস্তুতি ছাড়া স্কুলে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার দুঃস্বপ্ন যে বাস্তব জীবনে প্রস্তুতি ছাড়া কোনো বিষয়ের মুখোমুখি হওয়ার কারণেই দেখেছেন তা নাও হতে পারে। হতে পারে কারো সঙ্গে সম্পর্কজনিত কোনো সমস্যার কারণেও আপনি এ ধরনের দুঃস্বপ্ন দেখছেন।

৩. তাড়া খাওয়া

বাস্তব জীবনে কি আপনি কোনো কিছু থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন? অথবা কোনো কিছুর মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছেন? তাহলেই আপনি তাড়া খাওয়া টাইপের দুঃস্বপ্ন দেখবেন।

বিশেষ করে যারা নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে তেমন একটা সচেতন নন তারা এ ধরনের স্বপ্ন দেখেন। কারণ তারা নিজেদের যত্ন নেওয়া থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আর স্বপ্নের মাধ্যমে মস্তিষ্ক তাদেরকে সেই গভীর জ্ঞানটাই জানান দিচ্ছে যে তারা নিজেদের স্বাস্থ্যের সঠিক যত্ন নিচ্ছেন না। আবার এমন লোকেরাও এ ধরনের স্বপ্ন দেখে থাকতে পারেন যারা অসুস্থ বোধ করা সত্ত্বেও ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন না। বা যে নারীরা মেনোপোজের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু বিষয়টিকে উপেক্ষা করতে চাইছেন এমন নারীরাও এমন স্বপ্ন দেখতে পারেন।

৪. চুল বা দাঁত হারাতে দেখা

দাঁত পড়তে দেখা খুবই সচরাচর একটি দুঃস্বপ্ন। ধরুন আপনি স্বপ্ন দেখলেন কথা বলতে গিয়ে আপনার দাঁত পড়ে যাচ্ছে। আপনি কথা বলার চেষ্টা করা মাত্রই একের পর এক দাঁত পড়ছে।

এ ধরনের স্বপ্নের মধ্য দিয়ে সাধারণত আত্মবিশ্বাসের ঘাটতির ইঙ্গিত দেয় মস্তিষ্ক। এর মধ্য দিয়ে মস্তিষ্ক আপনাকে বোঝাতে চায় আপনি কোনো বিষয়ে আপনার আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছেন। এবং প্রতিটি শব্দ উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার আত্মবিশ্বাসহীনতা আরো গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে।

আরএম-২৯/০৫/০৫ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)