১৩টি প্রেমিক জুটির অমর প্রেমকাহিনী

১৩টি প্রেমিক জুটির

১‌. লাইলি ও মজনু:

মধ্যযুগের ইরানি কবি নিজামী তার কাব্য লায়লি-মজনুর জন্য ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। আরব মিথ ‘লায়লা-মজনু’ অবলম্বনে তিনি তার কাব্য রচনা করেন। অধরা প্রেমের এক বিয়োগন্ত গাথা এ কাব্য। কাব্য লিখিত হওয়ার আগে শতাব্দী থেকে শতাব্দীতে এই মিথ আরবে প্রচলিত ছিল। প্রেমের ইতিহাসে, বিশেষ করে এই উপমহাদেশীয় মুসলিম সমাজে কালজয়ী হয়ে উঠে দুটি চরিত্র, লায়লী ও মজনু। স্বর্গীয় প্রেমের প্রতীক মানা হয় এই জুটিকে। বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে অর্থাৎ বাল্যকাল থেকেই লায়লা এবং কায়েস একে অপরের প্রেমে পড়েন। তাদের প্রেম সমাজের নজরে এলে দুজনের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করা হয়। বলা আছে, লায়লার পিতা মজনুকে আহত করলে লায়লারও আহত হতো, এমননি ছিল তাঁদের সেই স্বর্গীয় প্রেম। নিঃসঙ্গ কায়েস মরুপ্রান্তরে নির্বাসনে যান। বিরহকাতর কায়েসের ক্ষ্যাপাটে আচরণের জন্য তাকে ডাকা হতো মজনুন (পাগল) নামে। পরে বেদুঈনের দল মজনুর হার না মানা ভালোবাসা দেখে তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে এবং তাদের মধ্যে এক বৃদ্ধ বেদুইন লড়াই করে লায়লাকে পাওয়ার জন্য কায়েসকে প্রেরণা দেন। তাদের সহযোগিতায় যুদ্ধে লায়লার গোত্র ক্ষমতাচ্যুত হয়, তারপরও লায়লার বাবা কায়েসের সঙ্গে লায়লার বিয়েতে সম্মতি দেন না। লায়লাকে তাঁর পিতা জোর করে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। স্বামী মারা যাবার পর, যদিও লায়লা মজনুর কাছে ফিরে আসে, কিন্তু প্রচণ্ড দুঃখ আর অনাহারে মজনু মারা যায়। লায়লাও তাঁর ভালোবাসা মজনুর পথ অনুসরণ করে। মৃত্যুর পর তাদের পাশাপাশি সমাধিস্থ করা হয়। “দুই দেহ এক আত্মা,” নামক বহুল প্রচলিত কথা এই যুগলের অনুপ্রেরণায় পাওয়া। স্বর্গে গিয়েও ভালবাসার মানুষকে চাওয়ার তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের আকুতি এই কাহিনীকে অমর করে রেখেছে।

২. রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট: 

নিঃসন্দেহে রোমিও এবং জুলিয়েটের প্রেমের আখ্যান দুনিয়ার অন্যতম বিখ্যাত প্রেম কাহিনী। যেন ভালোবাসার অপর নাম রমিও-জুলিয়েট। বিশ্ব বিখ্যাত ইংরেজ লেখক উইলিয়াম শেক্সপিয়র এর কালজয়ী ট্রাজেডি হলো রোমিও-জুলিয়েট। সারা বিশ্বে যুগ যুগ ধরে পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে এ বিয়োগান্ত প্রেম কাহিনী। রোমিও আর জুলিয়েটের পরিবারের মধ্যে শত্রুতার সম্পর্ক ছিল। দুটি ভিন্ন পরিবারের পূর্ববর্তী রেষারেষি, বংশীয় অহংকার ভেদ করে দুজন তরুণ-তরুণী প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়ে যায়। পরবর্তীতে পরিবারের শত বাঁধা উপেক্ষা করে নানা নাটকীয়তার মাঝে তারা বিয়ে করে। সবশেষে, দুই পরিবারের শত্রুতার জেরে এবং ভুলবোঝা-বুঝি জনিত কারণে বিষপানে আত্মহত্যা করে এই প্রেমিক যুগল। তাই পৃথিবীতে যখনই প্রেমের জন্য ত্যাগ- তিতিক্ষার কথা বলা হয়, সবার আগেই উঠে আসে এই তরুণ যুগলের নাম! তরুণ এ যুগলের ভালবাসার জন্য মৃত্যুবরণ আজো পৃথিবীর মানুষকে একই আবেগে নাড়া দেয়।

৩.সেলিম ও আনারকলি: 

মুঘল সম্রাট আকবরের পুত্র সেলিম প্রেমে পড়েন রাজ্যের নর্তকী অনিন্দ্য সুন্দরী আনারকলির। আনারকলির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে প্রথম দর্শনেই তার প্রেমে পড়েন সম্রাটপুত্র সেলিম। সম্রাট আকবর এই সম্পর্ক কখনোই মেনে নেন নি। সম্রাট আনারকলিকে সেলিমের চোখে খারাপ প্রমাণ করতে নানা ধরনের চক্রান্ত করেন। পিতার এ কৌশলের কথা জানামাত্র সেলিম নিজ পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু শক্তিশালী আকবর বাহিনীর কাছে সেলিম খুব সহজেই পরাজিত নিজ সন্তানের মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেন আকবর। তখন প্রিয়তম সেলিমের জীবন বাঁচাতে আনারকলি নিজের জীবনের বিনিময়ে সেলিমের জীবন ভিক্ষা চান। তখন সম্রাট সেলিমের চোখের সামনে প্রিয়তমা আনারকলিকে জ্যান্ত কবর দেয়া হয়!!

৪. শাহজাহান ও মমতাজ: 

১৬১২ খ্রিষ্টাব্দে আরজুমান বানু নামক এক বালিকার সঙ্গে ১৫ বছরের শাহজাহা্নের বিয়ে হয়। পরে কিনা যিনি মোঘল সম্রাজ্য পরিচালনা করেন। সম্রাট শাহজাহান তাঁর ১৪ সন্তানের জননী এবং প্রিয়তম স্ত্রীর নাম পরিবর্তন করে রাখেন মমতাজ মহল। ১৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে মমতাজের মৃত্যুর পর, স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি স্থাপত্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। যাতে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেছিল, প্রায় ১ হাজার হাতী ব্যবহার করা হয়েছিল এবং সেই স্থাপতের নির্মাণ কাজ শেষ হতে প্রায় ২০ বছর সময় লেগেছিল। তাজমহলের নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই শাহ জাহান তাঁর পুত্র আওরঙ্গজেব দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত ও আগ্রার কেল্লায় গৃহবন্দী হন। শেষ বয়সে সাম্রাজ্য হারিয়ে বন্ধী জীবন কাটিয়ে ছিলেন। তাই সেই অনিন্দ্য সুন্দর কালো মার্বেল পাথরের সৌন্দর্য তিনি সম্পূর্ণ দেখে যেতে পারেননি। যমুনাতীরে যেখানে “তাজমল” গড়ে ওঠেছিল, শেষ জীবনে শাহজাহান ওখানে একাকী সময় পার করেছেন। মৃত্যুর পর তাঁকে সেখানে সমাহিত করা হয়। তাঁর ভালোবাসার নিদর্শনে তিনি রেখে যান, পৃথিবীর সপ্তাচার্যের মাঝে একটি “তাজমহল!”

৫.ত্রিস্তান এন্ড ইসলদে: 

ত্রিস্তান আর ইসলদের ট্র্যাজিক প্রেমগাথা যুগ যুগ ধরে নানা কাহিনী আর পান্ডুলিপিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এটি মধ্যযুগে রাজা আর্থারের রাজত্বকালের ঘটনা। ইসলদে ছিলেন আয়ারল্যান্ডের রাজকন্যা। ছিলেন কর্নওয়েলের রাজা মার্কের বাগদত্তা। তিনি রাজকুমারী অ্যাইসোলেইডকে নিজ রাজ্য কর্নওয়েলে ফিরিয়ে আনার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাঁর ভাইয়ের ছেলে ত্রিস্তানকে। কিন্তু সেই ভ্রমণে ত্রিস্তান এবং ইসলদে একে অপরের প্রেমে পড়ে যান। যদিও শেষ পর্যন্ত অ্যাইসোলেইড রাজা মার্ককেই বিয়ে করতে বাধ্য হন। কিন্তু ভালবাসা অব্যাহত থাকে ত্রিস্তানের সঙ্গে। কিন্তু তাঁদের প্রেমের কথা রাজ্যে গোপন থাকে না। এক সময় এই প্রেম রাজা মার্কের নজরে আসে। তিনি তাঁদের দুজনকেই মাফ করে দেন, কিন্তু ত্রিস্তানকে কর্নওয়েলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ত্রিস্তান চলে যান ব্রিটানিতে। সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় আইসিলতের সঙ্গে। ইসলদের সঙ্গে এই তরুণীর নামের সাদৃশ্য ত্রিস্তানকে আইসিলতের প্রতি আকৃষ্ট করে। পরে ত্রিস্তান, আইসিলতের সাথে নামের মিল থাকার কারণে আইসিলত নামক ওই রমণীকে বিয়ে করেন। কিন্তু এই বিয়ে কখনোই পূর্ণতা পায়নি, কারণ ত্রিস্তানের হৃদয় ছিল ইসলদের প্রেমে আচ্ছন্ন। এক পর্যায়ে ত্রিস্তান ইসলদের বিরহে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। খবর পাঠান ইসলদের কাছে, যেন একবার ত্রিস্তানকে দেখে যান এবং একটি জাহাজ পাঠিয়ে দেন। তাঁর স্ত্রী আইসিলতকে বলেছিলেন, ইসলদে যদি আসে তাহলে জাহাজের পালের রং হবে সাদা আর না আসতে চাইলে পালের রং হবে কালো।তার স্ত্রী জাহাজে সাদা পতাকা দেখতে পেয়েও তাকে জানান যে, জাহাজের পালের রং কালো। তখন ত্রিস্তান ভাললেন ইসলদে আর আসবে না। ত্রিস্তান ভাবলেন ইসলদের আর আসবেন না। তার ইসলদে তার কাছে পৌঁছানোর আগেই ত্রিস্তান মারা যান। তাঁর শোকে ভগ্ন হৃদয় নিয়ে ইসলদেও কিছুদিন পর তাঁরই রাজ্যে মারা যান।

৬.অরফিয়াস এবং ইউরিডাইস: 

এটি প্রাচীন গ্রিসের এক অন্ধ প্রেমের কাহিনী। অরফিয়াস সাগর, বন, পর্বতের অধিষ্ঠানকারিনী উপদেবী ইউরিডাইসের প্রেমে পড়েন। এক পর্যায়ে বিয়ে হয় দুজনের। আনন্দেই কাটছিল দুজনের জীবন। ভূমি এবং কৃষির দেবতা পরিস্টিয়াসের নজর পড়ে ইউরিডাইসের ওপর। কিন্তু ইউরিডাইসের প্রেমে সাড়া না পেয়ে তার ক্ষতি করতে উদ্যত হন। পরিস্টিয়াসের হাত থেকে বাঁচার জন্য পালাতে গিয়ে ইউরিডাইস এক সাপের গর্তের পড়লে সাপ তার পায়ে বিষাক্ত ছোবল হানে। শোকে কাতর অরফিয়াসের হৃদয় বিদীর্ণ করা হাহাকার শুনে পরী আর দেবতাদের চোখেও জল আসে। দেবতাদের পরামর্শে অরফিয়াস পাতালপুরীতে প্রবেশ করেন। পাতালপুরীতে তার গান শুনে হেডস-এর মন গলে যায়। মুগ্ধ হয়ে হেডস ইউরিডাইসকে অরফিয়াসদের সঙ্গে পৃথিবীতে পাঠাতে রাজি হন। কিন্তু সেজস্য একটা বিশেষ শর্ত দেন। শর্তটি হলো অরফিয়াসকে ইউরিডাইসের সামনে থেকে হেঁটে যেতে হবে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তারা পৃথিবীতে না পৌঁছবে ততক্ষণ অরফিয়াস পেছনে ফিরতে পারবে না। কিন্তু উৎকণ্ঠিত অরফিয়াস হেডসের সেই শর্তের কথা ভুলে গিয়ে হঠাৎ করে ইউরিডাইসকে দেখতে পেছনে ফেরেন। আর তখনই অরফিয়াসের জীবন থেকে চিরদিনের মতো অদৃশ্য হয়ে যান প্রিয়তমা ইউরিডাইস। বলা হয়ে থাকে, এই যে প্রেম কিংবা বিরহে সঙ্গীত ও মিউজিক অনেক বড় ভুমিকা থাকে, সেটা নাকি অরফিয়াস আর ইরিডাইসের প্রেমকাহিনী থেকেই অনুপ্রাণিত হওয়া।

৭.নেপোলিয়ান এবং জোসেফাইন: 

২৬ বছর বয়সী মহাবীর নেপোলিয়ান তার চেয়ে বয়সে বড়, বিখ্যাত এবং বিত্তশালী জোসেফাইনের প্রেমে পড়েন। তাঁরা দুজনেই তাঁদের সম্পর্কের বিষয়ে শ্রদ্ধাবোধ, এবং ত্যাগ বজায় রেখেছিলেন এবং সমঝোতার মাধ্যমে তারা বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা পরস্পরের প্রতি গভীর ভালবাসায় নিমগ্ন হন। তাদের স্বভাব, আচার-আচরণে অনেক পার্থক্য ছিল, কিন্তু এগুলো তাদের প্রেমবন্ধনকে আরো দৃঢ় করেছে, ফলে তাদের ভালবাসা কখনো ম্লান হয়ে যায়নি। কিন্তু পরিশেষে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে কারণ, নেপোলিয়ন খুব চাইতেন জোসেপাইনের গর্ভে যেন তাঁর সন্তান হয়, কিন্তু মাতৃত্ব ধারণে অক্ষম ছিলেন জোসেপাইন। তাই জোসেফাইন নেপোলিয়ানের উত্তরাধিকার অর্জনের উচ্চাকাক্সক্ষা পূরণে ব্যর্থ হন। তাই পরস্পরের প্রতি গভীর আসক্তি এবং ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও তারা একত্রে জীবনযাপন করতে পারেননি।

৮.রামোস অ্যান্ড থিইবি:

অত্যন্ত আবেগী আর হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া আরেকটি রোমান প্রেম কাহিনী। বলা হয়ে থাকে, এই জুটি তাঁদের প্রেম দ্বারা প্রভুর থেকে কথা নিয়ে রেখেছে যে, স্বর্গেও তাঁরা এক সাথে থাকবে! সুপুরুষ রামোস ছিল ব্যবিলনের সবচেয়ে সুন্দরী কুমারী থিইবীর বাল্যকালের বন্ধু। তাঁরা ছিল প্রতিবেশী হওয়ায় একই সাথে বেড়ে উঠতে গিয়ে একে অপরের প্রেমে পড়ে। কিন্তু তাঁদের পরিবার এই সম্পর্ক কখনোই মেনে নেয় না। তাই তাঁরা ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। সূর্যাস্তের সময় পার্শ্ববর্তী একটা ম্যালবেরী গাছের নিচে দুজনের দেখা করার কথা থাকে। থিইবী গোপনীয়তা রক্ষার্তে মুখে একটা কাপড় পরে রেমোসের জন্য গাছের নিচে অপেক্ষা করতে থাকে। হঠাৎ এক ক্ষুধার্ত সিংহ থিইবীর সামনে হাজির হলে ভয় পেয়ে দৌড়ে অন্যজায়গায় আশ্রয় নেয়ার সময় তাঁর মুখের কাপড়টি খুলে পড়ে যায়। পরে রামোস এসে দেখে যে, সিংহের মুখে সেই কাপড়। সে ধরে নেয় যে, সিংহ তাঁর থিইবীকে ভক্ষণ করেছে। তাই সেও তাঁর ছুরি দিয়ে নিজের বুক কেটে ফেলে। অনেকক্ষণ পর থিইবী এসে মৃত রামোসকে দেখতে পেয়ে সেই একই ছুরি দিয়েই নিজের প্রাণ বিসর্জন দেয়।

৯.পকাহন্টাস ও জন স্মীথ:

ভারতীয় পাঠান রাজা পউহাতান ছিলেন আমেরিকার ভার্জিয়ানা অঙ্গরাজ্যের এলগনকুইন ইন্ডিয়ানস নামক সেনাদলের সদস্য। তাঁর কন্যা পকাহন্টাস প্রথম দর্শনেই আমেরিকার জন স্মীথ নামক এক যুবকের প্রেমে পড়ে যায়। পকাহন্টাস তাঁর পিতার সৈন্যদলের হাত থেকে জন স্মীথকে রক্ষা করে। সেই কৃতজ্ঞতা বোধ থেকেই এই প্রেমের সূত্রপাত। পরে তাঁরা একে অপরকে সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে নানাভাবে সহযোগিতা করে। দু’পরিবারের মধ্যেও সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু এক যুদ্ধে গানপাউডার দ্বারা আহত হয়ে জন স্মীথ যখন আমেরিকা ছেড়ে ইংল্যান্ডে চলে যায়, তখন পকাহন্টাসকে মিথ্যে বলা হয় যে, স্মীথ মারা গেছে! এবং তাঁর পিতার সৈন্যদলকে কাবু করার জন্য একই সাথে পকাহন্টাসকেও গ্রেফতার করা হয়। অনেক বছর বন্দী থাকার পর, অনেক চড়াই উৎরিয়ে পকাহন্টাস খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে, এবং নাম পাল্টে রাখে “রেবেকা” (Rebecca)। ইতিমধ্যে সে জন রলফ নামে একজনকে বিয়ে করে এবং প্রায় আট বছর পর লন্ডনে এসে রেবেকা জানতে পারে স্মীথ বেঁচে আছে। কাকতালীয় ভাবে দেখা হওয়া- ওটাই তাঁদের শেষ দেখা।

১০. মেরি এবং পিয়েরি কুরি: 

রোমান্টিক জুটি বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে রোমিও-জুলিয়েট ও প্যারিস-হেলেনের কাহিনী। অথচ দুনিয়া কাঁপানো এমন অনেক জুটি রয়েছে, যাদের প্রেমকাহিনী স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে ইতিহাসের পাতায়। এরকম একটি জুটি হল মেরি অ্যান্ড পিয়েরি কুরি। এ জুটির ছিল না কোনো লোকদেখানো কাজকর্ম, ছিল না কোনো বাড়াবাড়ি রকমের আবেগ। ছিল না কোনো পুরাণিক ট্র্যাজেডি, দেবদেবীর হস্তক্ষেপ, কিংবা ছিল না কোনো অবৈধ কাহিনী। আধুনিক আর দশটা মানুষের মতোই ছিল তাঁদের প্রেম কাহিনী। কিন্তু ছিল একে অপরের প্রতি অগাদ অন্ধ বিশ্বাস, এঁরা ছিলেন একে অপরের অনুপ্রেরণা! মানবতার কল্যাণে আর কাজের মধ্যেই এগিয়েছে তাঁদের প্রেম। পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় নারীদের রিসার্চে অনুমতি দেয়নি বলে ১৮৯১ সালে রিসার্চ করতে মেরি গিয়েছিলেন ফ্রান্সের সর্বরনে। মেধাবী মেরিকে লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরী সবখানেই আবিষ্কার করেন আরেক মেধাবী, ল্যাবরেটরী ডিরেক্টর পিয়েরি কুরি। কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর ১৮৯৫ সালে তারা বিয়ে করেন। ১৮৯৮ সালে এই বৈজ্ঞানিক যুগল আবিষ্কার করেন পলোনিয়াম আর রেডিয়াম। পদার্থ বিদ্যায় এবং রেডিও-আক্টইভিটিতে অবদানের জন্য এই দম্পতি ১৯০৩ সালে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। ১৯০৪ সালে পিয়েরি কুরি মারা যাবার পর মেরি নিজের স্বামীর দেশেই থেকে যাবার সিদ্ধান্ত নেন এবং কুরির অসমাপ্ত কাজ শেষ করার চেষ্টা করেন। অবশেষে ১৯১১ সালে মেরি কুরি পৃথিবীর একমাত্র নারী যিনি দ্বিতীয়বারের মতো এবং ভিন্ন বিষয়ে নোবেল অর্জন করেন। এবার তাঁর বিষয় ছিল কেমিস্ট্রি! ১৯৩৪ সালে লিওকিমিইয়ায় মারা যাবার আগ পর্যন্ত স্বামী পিয়েরি কুরির বিভিন্ন রিসার্চ তিনি চালিয়ে যান।

১১. রানী ভিক্টোরিয়া এবং প্রিন্স অ্যালবার্ট: 

হাজার বছরের পুরানো ইংরেজ সিংহাসন, আর তাঁদের হাজার হাজার প্রেম কাহিনীর ভিড়ে বলা হয়ে থাকে কুইন ভিক্টোরিয়া আর প্রিন্স আলবার্টের প্রেম কাহিনী অতুলনীয়। কুইন ভিক্টোরিয়া তাঁর স্বামী প্রিন্স আলবার্টের মৃত্যুর পর প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত তাঁর জন্য শোক করেছেন। ভিক্টোরিয়া তাঁর চাচা king William- iv এর মৃত্যুর পর ১৮৩৭ সালে ইংরেজ সিংহাসনের দায়িত্ব নেন। ১৮৪০ সালে কুইন ভিক্টোরিয়া তাঁর ফার্স্ট কাজিন প্রিন্স আলবার্ট কে বিয়ে করেন। প্রিন্স আলবার্ট ছিলেন জার্মান সংস্কৃতিমনা এক উদার, প্রাণোচ্ছল মানুষ। অনেকের অনেক কটু কথায় কান না দিয়ে তাঁরা সুখী একটা পরিবার গঠন করেছিলেন। তাঁরা একে অপরকে প্রচণ্ড ভালবাসতেন। তাঁদের ছিল ৯ জন সন্তান। ১৮৬১ সালে স্বামী আলবার্টের মৃত্যুর স্বামী শোকে মুহ্যমান রানী পরের তিনটি বছর একবারের জন্যও লোকসমক্ষে আসেননি। তার এই বিরহ শোক জনতার সমালোচনার মুখে পড়ে। জীবননাশের হামলাও হয় ভিক্টোরিয়ার ওপর। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন ডিসরেলি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ১৮৬৬ সালে রানী পুনরায় কাজ শুরু করেন এবং পার্লামেন্টে যোগ দেন। ১৯০১ সালে ২০। হাজার বছরের পুরানো ইংরেজ সিংহাসন, আর তাঁদের হাজার হাজার প্রেম কাহিনীর ভিড়ে বলা হয়ে থাকে কুইন ভিক্টোরিয়া আর প্রিন্স আলবার্টের প্রেম কাহিনী অতুলনীয়। কুইন ভিক্টোরিয়া তাঁর স্বামী প্রিন্স আলবার্টের মৃত্যুর পর প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত তাঁর জন্য শোক করেছেন। ভিক্টোরিয়া তাঁর চাচা king William- iv এর মৃত্যুর পর ১৮৩৭ সালে ইংরেজ সিংহাসনের দায়িত্ব নেন। ১৮৪০ সালে কুইন ভিক্টোরিয়া তাঁর ফার্স্ট কাজিন প্রিন্স আলবার্ট কে বিয়ে করেন। প্রিন্স আলবার্ট ছিলেন জার্মান সংস্কৃতিমনা এক উদার, প্রাণোচ্ছল মানুষ। অনেকের অনেক কটু কথায় কান না দিয়ে তাঁরা সুখী একটা পরিবার গঠন করেছিলেন। তাঁরা একে অপরকে প্রচণ্ড ভালবাসতেন। তাঁদের ছিল ৯ জন সন্তান। ১৮৬১ সালে স্বামী আলবার্টের মৃত্যুর স্বামী শোকে মুহ্যমান রানী পরের তিনটি বছর একবারের জন্যও লোকসমক্ষে আসেননি। তার এই বিরহ শোক জনতার সমালোচনার মুখে পড়ে। জীবননাশের হামলাও হয় ভিক্টোরিয়ার ওপর। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন ডিসরেলি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ১৮৬৬ সালে রানী পুনরায় কাজ শুরু করেন এবং পার্লামেন্টে যোগ দেন। ১৯০১ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া শোকের কালো পোশাক পরিধান করতেন। তার শাসনামলেই ব্রিটেন সুপার পাওয়ার হিসাবে দুনিয়াতে আবির্ভূত হয়।

১২. মার্ক এন্টোনি অ্যান্ড ক্লিওপার্টা: 

ক্লিওপেট্রা এবং মার্ক অ্যান্টনির সত্য প্রেমের কাহিনী পৃথিবীজুড়েই আলোচিত। এ দুই বিখ্যাত ঐতিহাসিক চরিত্র নিয়ে নাটক লিখেছেন শেক্সপিয়র। নাটকটি এখনো পৃথিবীর সবখানেই সমাদৃত। অনিন্দ সুন্দরী মিসরীয় রাণী ক্লিওপেট্রা আর তাঁর প্রধান সেনাপতি এন্টোনি প্রথম দর্শনেই পরস্পরের প্রেমে পড়ে যান। এই দুই ক্ষমতাধর মানুষের প্রেমের বন্ধনে মিসর পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। কিন্তু রোমান শাসকদের মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়ায় এই প্রেম। কারণ এ প্রেমই মিসরকে শক্তিশালী করে তুলছিল। রাজকীয় ঘাত-প্রতিঘাত, জয়-পরাজয় উপেক্ষা করে তাঁরা বিয়ে করেন। ধারণা করা হয়, রোমানদের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় এন্টোনির মনোবল ভাঙার জন্য, তাঁকে যুদ্ধের ময়দানে মিথ্যে সংবাদ শুনিয়েছিলেন যে, শত্রুরা ক্লিওপেট্রাকে হত্যা করেছে। ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর বেদনা সইতে না পেরে অ্যান্টনি নিজ তলোয়ার দিয়ে আত্মহত্যা করেন। অন্যদিকে এন্টোনির মৃত্যুসংবাদ শুনে রাণী ক্লিওপেট্রাও নিজ ছুরিকাঘাতে আত্মহত্যা করেন। Shakespeare তাঁদের জন্য বলেছিলেন, “great love demands great sacrifices!”.

১৩. প্যারিস এবং হেলেন:

গ্রীক পুরাণের ফ্যাক্ট এবং ফিকশনের অপূর্ব এক সংমিশ্রণ হল, গ্রীকলেখক কালজয়ী হোমারের জগতবিখ্যাত এপিক “ইলিয়াড।” নাম করা সেই যুদ্ধের নাম হল, “Trojan War!” যে যুদ্ধে ধ্বংস হয়েছিল পুরো একটা শহর- ট্রয়! ইতিহাসে যা “Helen of troy” নামে বিখ্যাত। দেবরাজ জিউস এবং স্পার্টার রাজা টিন্ডারিউসের পত্নী লীডার মিলনের ফলে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী হেলেনের জন্ম হয়। বিশ্বসাহিত্যে হেলেন সেরা সুন্দরীর আসনে অধিষ্ঠিত। স্পার্টার রাজা মেনিলাসের সঙ্গে হেলেনের বিয়ে হয়। ট্রয়ের ছোট রাজকুমার প্যারিস হেলেনের প্রেমে পাগল হয়ে অপহরণ করে তাঁর রাজ্যে নিয়ে এসেছিলেন। হেলেনকে উদ্ধারে মেনিলাসের ভাই অ্যাগামেমননের নেতৃত্বে বিরাট গ্রিক সেনাদল ট্রয়ের অভিমুখে যাত্রা করে। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে চলে এই ঐতিহাসিক যুদ্ধ। যুদ্ধের এক পর্যায়ে গ্রিক সৈন্যরা ট্রয় রাজ্যে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে ট্রয়নগর। আগুনে পুড়ে হাজার হাজার সৈন্য আর নিরীহ নাগরিক মারা যায়। গ্রীক বীর একিলিসও হেলেনের অন্যতম পাণিপ্রার্থী ছিলেন। তাই একিলিস ছুটে যায় হেলেনকে বাঁচানোর আশায়; কিন্তু প্যারিস তীর বিদ্ধ করে মেরে ফেলে একিলিসকে। পালিয়ে যায় হেলেন, জয়লাভ করে গ্রিকরা। কিন্তু যে হেলেনের জন্য এত কিছু তাকে মেনেলাউস কাছে পেয়েছিল কিনা তা আজও অজানা। প্রেমের জন্য এত রক্তপাত আর ধ্বংস পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই।

আরএম-১৫/১৭/০৫ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)