সুখী হওয়ার ৫ উপায়

সুখী হওয়ার

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ্যার অধ্যাপক লুরি স্যান্তোস বলেন, সুখী হওয়াটা এমন একটা ব্যাপার নয় যে, এটা এমনি এমনি ঘটে গেল। আপনাকে এ জন্য অভ্যাস করে করে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে।

স্যান্তোস বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন যে, কীভাবে খারাপ লাগা বা দুঃখের বিষয়গুলোকে ভুলে যেতে হবে।

ইয়েলের ৩১৭ বছরের ইতিহাসে তার ক্লাস ‘মনোবিদ্যা এবং সুখী জীবন’ হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় কোর্স, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাভুক্তির রেকর্ড ভেঙে ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী নিজেদের নাম লিখিয়েছেন।

স্যান্তোস বলেন, বিজ্ঞান প্রমাণ করে দিয়েছে যে, সুখী হতে হলে অব্যাহতভাবে চেষ্টা করে যেতে হবে। এটা সহজ কাজ নয়, সে জন্য সময় দরকার। তবে এটা করা সম্ভব।

এখানে অধ্যাপক স্যান্তোসের সেরা পাঁচটি পরামর্শ তুলে ধরা হলো, যা অনুসরণ করার জন্য তিনি বলে থাকেন।

প্রাপ্তির একটি তালিকা করুন

শিক্ষার্থীদের এমন একটি তালিকা তৈরি করার জন্য বলে থাকেন স্যান্তোস, যেগুলোকে তারা নিজেদের জীবনে প্রাপ্তি বলে মনে করেন। এ তালিকা তৈরির কাজটি প্রতিদিন রাতে একবার হতে পারে বা অন্তত সপ্তাহে একবার করতে হবে।

স্যান্তোস বলেন, এটা হয়তো শুনতে বেশ সাধারণ লাগছে, কিন্তু আমরা দেখেছি, যে শিক্ষার্থী এই চর্চাটি নিয়মিতভাবে করেন, তারা অন্যদের চেয়ে বেশি সুখী হয়ে থাকেন।

বেশি ঘুমান আর ভালো থাকুন

এখানে চ্যালেঞ্জটা হলো, প্রতি রাতে অন্তত আট ঘণ্টা ঘুমানো এবং সেটা হতে হবে সপ্তাহের সাতটি রাতেই। এই সাধারণ বিষয়টি অর্জন করা অনেকের কাছে অনেক কঠিন একটি বিষয় বলে মনে হয়।

স্যান্তোস বলেন, এটা হয়তো হালকা একটা ব্যাপার মনে হতে পারে, কিন্তু আমরা এখন জানি যে, বেশি ঘুমানোর ফলে বিষণ্ণতায় ভোগার সম্ভাবনা হ্রাস পায় এবং আপনার ভেতর ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে।

ধ্যান

প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট ধ্যান করুন, সপ্তাহের প্রতিটি দিন।

স্যান্তোস বলছেন, যখন তিনি শিক্ষার্থী ছিলেন, নিয়মিত ধ্যান তার ভেতর ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি করতো।

এখন তিনি একজন অধ্যাপক। তিনি শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু গবেষণার উদাহরণ তুলে ধরে বলেন যে, কিভাবে ধ্যান এবং পুরো মনোযোগ টেনে নেয়ার মতো কর্মকাণ্ড একজন ব্যক্তিতে আরও সুখী হতে সহায়তা করে।

পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটানো

স্যান্তোসের তথ্য মতে, সাম্প্রতিক বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে চমৎকার সময় কাটানো গেলে সেটা মানুষকে প্রফুল্ল বা সুখী করে তোলে।

যাদের আমরা পছন্দ করি, তেমন মানুষের সঙ্গে সময় কাটানো অথবা ‘ব্যক্তিগত ভালো সম্পর্ক ও সামাজিক যোগাযোগের’ ফলে মানুষের মধ্যে একটা আনন্দ এবং স্বস্তি তৈরি করে, যা আসলে তাদের ভালো থাকাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

স্যান্তোস বলেন, এ জন্য অনেক কিছু করতে হয় না। শুধু এটা নিশ্চিত করতে হয় যে, এই মুহূর্তটাকে আপনি ভালোভাবে উপভোগ করছেন। এটা মনে রাখা জরুরি যে অন্যদের সঙ্গে যে আপনি একত্রে সময় কাটাচ্ছেন এবং সতর্ক থাকা যে, আপনি আসলে সেই সময়টা কীভাবে কাটাচ্ছেন।

সামাজিক মাধ্যমে কম সময় আর বাস্তব যোগাযোগ বৃদ্ধি

সামাজিক মাধ্যম অনেক সময় আমাদের মিথ্যা সুখের আবহ দিতে পারে, বলছেন স্যান্তোস, কিন্তু তাতে ভেসে না যাওয়ার মতো সতর্ক থাকতে হবে।

সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে যে, যেসব মানুষ ইন্সটাগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলো বেশি ব্যবহার করে, তারা ওইসব মানুষের চেয়ে কম সুখী হয়ে থাকে, যারা ওগুলো বেশি একটা ব্যবহার করে না।

আপনি যদি জীবনে সত্যিই সুখী হতে চান, তাহলে প্রাপ্তির হিসাব দিয়ে শুরু করুন, রাতে চমৎকার একটি ঘুম দিন, মনকে বিক্ষিপ্ত অবস্থা থেকে সরিয়ে মনোযোগী করুন, যেসব মানুষকে পছন্দ করেন, তাদের সঙ্গে বেশি সময় কাটান আর সামাজিক মাধ্যম থেকে কিছুদিন বিরতি নিন।

এসব পদ্ধতি যদি যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপকারে আসে, তাহলে আপনার জন্যও সেটি কাজে লাগতে পারে।

আরএম-১৬/৩০/০৫ (লাইফস্টাইল ডেস্ক, তথ্যসূত্র: বিবিসি)