আচার-চাটনি রাখবেন যেভাবে

আচার-চাটনি

খাবারে রুচি নেই? একটু আচার নিয়ে নেওয়া যাক। কিংবা ডালের সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া যাক একটু চাটনি। খাবারকে আরও মুখরোচক করে দেয় আচার। ছাত্রজীবনে পুরান ঢাকার একটি দোকানে খাবারের সঙ্গে পরিবেশিত আচার দারুণ পছন্দ করতাম। কথাটা হঠাৎ মনে পড়ল লেখাটা লিখতে বসে। দিনদুপুরে কিংবা রাতদুপুরে সেই দোকানে হাজির হওয়ার গল্পটা থাক, ছুটন্ত জীবনের এমন কত গল্পই তো থাকে!

পরিবারের এক ছোট্ট শিশু বলেছিল, ‘আচার পাইবেন আঙুলে।’ শিশুটি আর ‘শিশু’ হয়ে নেই। তবে আজও বাড়িতে আচার খাওয়ার সময় আপনজনেরা আনন্দ পান ছোট্ট শিশুর মজার বুলি স্মরণ করে। আচার-চাটনি মূলত তৈরি হয় বাড়িতেই। অনেকে কেচাপও বাড়িতে বানান। ঘরে তৈরি যেকোনো জিনিসে থাকে আলাদা যত্নের ছোঁয়া। অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে যেন ‘কয়েক সের ভালোবাসা’ও যোগ হয়ে যায় তাতে। এমন যত্নে তৈরি জিনিসটা সংরক্ষণের সময়ও হতে হবে যত্নশীল। তাহলে তা ভালো থাকবে বেশ খানিকটা সময় পর্যন্ত। রান্নাবিদ সিতারা ফেরদৌস জানালেন ঘরে তৈরি আচার, চাটনি ও কেচাপ সংরক্ষণের উপায়।

আচার সংরক্ষণ

আচার পরিবেশনের সময় বয়াম থেকে কিছুটা আচার আলাদা পাত্রে তুলে নিন আগে। সরাসরি বয়াম থেকে পরিবেশন করবেন না, খাবার টেবিলে হঠাৎ করে হাত বা চামচ থেকে পানি পড়ে যেতে পারে আচারের বয়ামে। পানির সংস্পর্শ কমানোর প্রক্রিয়াটি শুরু করতে হবে আচার তৈরির শুরুর সময় থেকেই। হয়তো আমের আচার করছেন। আম ছিলে বা কেটে বাকি প্রক্রিয়া শুরু করার আগেই তা ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন, প্রয়োজনে মুছে নিন। এরপর কাটা বা ছিলার কাজ করুন। কাটা-ছিলা হয়ে যাওয়ার পর আর পানিতে ভেজানো যাবে না। এরপর আচার চুলায়ই দিন বা রোদেই রাখুন, পানি ব্যবহার করবেন না। তেলের আচার করলে প্রথমে তেল একটু গরম করে নিতে হবে। কাঁচা তেল ব্যবহার করবেন না। চিনির সিরকা ব্যবহার করলে তা আগেই ঘন করে নিন, এরপর আম দিতে হবে।

যে বয়ামে আচার রাখবেন, তা একেবারে শুকনো হতে হবে। বয়ামের ভেতর বা ঢাকনার ভেতরের অংশ, কোনোখানেই যেন সামান্য পরিমাণেও পানি বা জলীয় বাষ্প না থাকে। যে চামচ দিয়ে বয়াম থেকে আচার তোলা হবে, তা পরিষ্কারভাবে ধোয়ার পর মুছে শুকনো করে নিন। এরপর তা আচার তোলার কাজে ব্যবহার করুন। আচার তৈরির পর প্রথম মাস তিনেক রোজ সারা দিনের জন্য রোদে দিন আচার। এই সময় খেয়াল রাখুন, বয়ামের মুখে বাষ্প বা পানি জমছে কি না। বাষ্প বা পানি জমতে থাকলে সাবধানে মুখটা খুলে তা মুছে ফেলতে হবে, যেন আচারের মধ্যে এই পানি না পড়ে। তিনটি মাস এই ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। তিন মাস পর সময়-সুযোগ বুঝে রোদে দেওয়া ভালো। রোদে দেওয়ার সময় বয়ামের মুখ খুলে দিতে পারেন, তবে মুখের ওপর পাতলা কাপড় বা নেট–জাতীয় কিছু বিছিয়ে দিতে হবে। আর যদি মুখ বন্ধ অবস্থাতেই রোদে দেওয়া হয়, তাহলে রোদ থেকে আনার পর ২০-৩০ মিনিটের জন্য বয়ামের মুখ খুলে রাখুন, যাতে জলীয় বাষ্প উড়ে যেতে পারে। বয়ামের মুখে পানি জমে থাকলে তা মুছে দিন।

চাটনি সংরক্ষণ

চাটনি তৈরি করার পর ১-২ দিন বাইরে রাখা যায়। এরপর ফ্রিজে উঠিয়ে রাখতেই হবে। নইলে নষ্ট হয়ে যাবে। ১৫-১৬ দিন পর্যন্ত ফ্রিজে চাটনি ভালো থাকে। যে জিনিসের চাটনি (যেমন কাঁচা আম, জলপাই বা আনারস) তৈরি করছেন, সেটির মৌসুম চলে গেলেও যদি চাটনি তৈরি করার ইচ্ছা থাকে, সে ক্ষেত্রে মৌসুম থাকতে থাকতেই সেটি টুকরা করে নিয়ে ছোট পলিপ্যাক, জিপার ব্যাগ বা কনটেইনারে করে ফ্রিজে রেখে দিন। ফ্রিজে রাখার আগে ভাপিয়েও নিতে পারেন চাইলে। এক দিনে আপনি যতটা পরিমাণ নিয়ে চাটনি তৈরি করবেন, ঠিক ততটা পরিমাণই রাখুন প্রতিটি প্যাকেট বা কনটেইনারে। একটি প্যাকেট বা কনটেইনার থেকে একবার কিছু পরিমাণ বের করার পর কিছুটা রেখে দিলে রেখে দেওয়া অংশটুকুর গুণগত মান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হলে এভাবে প্রায় ৭-৮ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে, যা থেকে প্রয়োজনমতো চাটনি বানিয়ে নেওয়া যায়।

কেচাপ নিয়ে জানা হোক

কেচাপ তৈরি করার পর যে বোতলে রাখবেন, তা যেন পুরোপুরি শুকনো হয়। বোতলের মুখ খোলার এক-দেড় মাসের ভেতরই যেন তা শেষ করা যায়, এমন পরিমাণেই একটি বোতলে কেচাপ রাখা উচিত (রাসায়নিক প্রিজারভেটিভ দেওয়া থাকলেও)। রাসায়নিক প্রিজারভেটিভ না দেওয়া হলেও বোতলটি ২-৩ দিন বাইরে রাখা যায়। তবে এরপর ফ্রিজে রাখতেই হবে। রাসায়নিক উপাদানের চাইতে প্রাকৃতিক উপাদান শরীরের জন্য বেশি ভালো। তাই রাসায়নিক উপকরণের বদলে রসুন, চিনি এগুলো একটু বেশি পরিমাণে দেওয়া যায়, যা প্রাকৃতিক প্রিজারভেটিভের কাজ করে। তবে প্রাকৃতিক প্রিজারভেটিভ দেওয়া কেচাপের বোতল ৩-৪ দিনের বেশি বাইরে রাখা যায় না। রাসায়নিক প্রিজারভেটিভ ছাড়া তৈরি করা কেচাপ মাসখানেক ভালো রাখতে হলে ফ্রিজে রাখতেই হবে। রাসায়নিক প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করলে অবশ্য বোতলটি বাইরে রাখা যায় ৬-৭ মাস। তবে মনে রাখবেন, প্রিজারভেটিভ দেওয়া থাকলেও কেচাপের বোতলের মুখ খোলা হয়ে গেলেই ফ্রিজে ঢোকাতে হবে। রাসায়নিকের ব্যবহার এড়িয়ে বরং পিউরি করে সংরক্ষণ করতে পারেন। পিউরি জিপার ব্যাগ বা কনটেইনারে করে ডিপ ফ্রিজে রাখুন। ৬-৭ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি এক বোতল কেচাপ শেষ হলে আবার নাহয় পিউরি থেকে আরেক বোতল কেচাপ তৈরি করে নিলেন।

আরএম-০৬/১১/০৬ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)