বয়স বাড়লে মানুষের ওজনও বাড়তে থাকে কেন?

বয়স বাড়লে

বর্তমানে সবাই মেদহীন থাকতেই পছন্দ করেনন! তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা নিয়ে সবাই কমবেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্থ। ডায়েট, এক্সারসাইজের কড়া নিয়মের মধ্যে দিয়ে চলেন অনেকেই। কিন্তু বয়সকালে এই ওজন যেন কিছুতেই বাগে আসতে চায় না। মানছি এমন অনেক মানুষ আছেন যারা ৬০ পেরিয়েও বেশ ছিপছিপে। কিন্তু সিংহভাগ মানুষই বয়স বাড়ার সঙ্গে মোটা হয়ে যান। কিন্তু কেন?

সম্প্রতি, সুইডেনের ‘ক্যারোলিন্সকা ইন্সটিউট’-এর গবেষকরা সেই কারণটা খুঁজে পেয়েছেন। তাদের গবেষণা অনুযায়ী জানা গেছে, ফ্যাট টিস্যুতে লিপিড টার্নওভার বয়স বাড়ার সঙ্গে কমতে থাকে। সহজভাবে বললে, ফ্যাট টিস্যুর লিপিড দূর করার ক্ষমতা বয়স বাড়ার সঙ্গে হ্রাস পায়। ফলে মেদ বাড়তেই থাকে। ওজন তাই নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে যায়। সে আপনি যতই কম খান, যতই এক্সারসাইজ করুন, শরীরের এই পরিবর্তন অনিবার্য।

৫৪ জন পুরুষ ও মহিলার ওপর ১৩ বছর ধরে গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন গবেষকরা। এই সময়সীমার মধ্যে দেখা গেছে, প্রত্যেকেরই লিপিড টার্নওভার কমেছে। ওজন বাড়লেও কমেছে, আবার ওজন কমলেও দেখা গেছে লিপিড জমা হওয়ার পরিমাণ কিন্তু বয়সের সঙ্গে বেড়েইছে। ‘নেচার মেডিসিন’ জার্নালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, যারা লিপিড টার্নওভারকে ব্যালেন্স করতে, আলাদা করে ডায়েট নিয়ন্ত্রণ করেননি, তাদের ওজন প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে।

গবেষকরা বেরিয়াট্রিক সার্জারির পর লিপিড টার্নওভার কেমন থাকে তা বোঝারও চেষ্টা করেছেন। ৪১ জন মহিলা যা রা বেরিয়াট্রিক সার্জারি করেছে তাদের লিপিড টার্নওভার মাপা হয়েছে। সার্জারির আগে যাদের টার্নওভার কম ছিল একমাত্র তাদেরই সার্জারির পর টার্নওভার বেড়েছে। মূলত তারাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন। অথচ যাদের লিপিড টার্নওভার আগে থেকেই বেশি ছিল, তারা সার্জারির পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যেই ওজন বাড়িয়ে ফেলেছেন। কারণ তাদের তো আর টার্নওভার বাড়াবার কোনো জায়গাই ছিল না।

ক্যারোলিন্সকা ইন্সটিউটের মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর এবং এই গবেষণার অন্যতম লেখক, পিটার আর্নার জানিয়েছেন, এই গবেষণা থেকে হলফ করে বলা যেতেই পারে যে বয়সের সঙ্গে ফ্যাট টিস্যুর কাজের ধরন পাল্টে যায়। যা সরাসরি ওজনকে প্রভাবিত করে। ওবিসিটির চিকিৎসায় এই তথ্য ভীষণভাবে কাজে আসবে।

আগে করা গবেষণা অনুযায়ী, এক্সারসাইজ করলেই একমাত্র লিপিড টার্ওভার বাড়তে পারে। এই গবেষণায় পাওয়া তথ্য এই একই কথা বলছে। ওয়েট লস সার্জারির সঙ্গে যদি ফিজিকাল অ্যাক্টিভিটি জুড়ে দেয়া যায়, তাহলে দীর্ঘদিন ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

ক্যারোলিন্সকা ইন্সটিটিউটের সেল ও মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের সিনিয়র গবেষক কির্স্টি স্প্যালডিং বলেছেন, ওবিসিটি এখন গ্লোবাল সমস্যা। লিপিড ডায়নামিকস বোঝা গেলে এই সম্যসাকে নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে। ঠিক কীভাবে ফ্যাট শরীরে নিয়ন্ত্রিত বা চালিত হয়, তা বোঝা যাওয়ার ফলে ওবিসিটি চিকিৎসা নিয়ে আরও ভালভাবে গবেষণা করা সম্ভব।

আরএম-১৭/১৩/০৯ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)