মুখে ছোট ছোট তিল বা ফ্রিকেলস? দেখুন দূর করার উপায়

মুখে ছোট ছোট

মুখে অতিরিক্ত ছোট ছোট তিল হওয়া স্কিন ক্যান্সারের পূর্ব লক্ষণ। এর জন্য আপনি একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই অতিরিক্ত এই তিলের দাগ কিছু প্রাকৃতিক উপায়ে কমানো যেতে পারে। এর জন্য গরম পানিতে আটার পেস্ট মুখে নিয়মিত লাগাতে পারেন। এছাড়া শসার রসও লাগাতে পারেন। এগুলো মুখের অতিরিক্ত তিলের দাগ হালকা করতে সহায়তা করে।

বাজারে ফ্রিকেলস আউট বিভিন্ন ধরনের ক্রিম পাওয়া যায় যেগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্লিচিং উপাদান দিয়ে তৈরি। ব্লিচিং উপাদান আমাদের ত্বকের জন্য বেশ ক্ষতিকর। তাই এই ক্রিমগুলো মুখের ত্বকে না লাগানো উচিত। এর পরিবর্তে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা উচিত যেগুলো সত্যিই কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

যা যা করতে পারেন :

১. প্রতিদিন টক দই ব্যবহার করতে পারেন।

২. কাঁচা দুধ দিয়ে মুখ মুছে নিতে পারেন।

৩. হালকা গরম মধু ব্যবহার করতে পারেন।

৪. অতিরিক্ত তিল অপসারণে লেবুর রস অনেক উপকারী এবটি উপাদান।

৫. বিভিন্ন ফলের প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।

৬. চিনি ও লেবুর রসের স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন।

৭. কাঁচা হলুদ ও তিলের গুড়ার পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন।

অনেক সময় মুখে ছোট ছোট তিল দেখা যায়। একসময় এটি স্থায়ী হয়ে যায় এবং ত্বকে দাগের মতো মনে হয়। এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন ঘরোয়া উপায়ে। হোম রেমেডি হ্যাকস ওয়েবসাইটে কয়েকটি প্রাকৃতিক উপাদানের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যা ত্বকের তিল দূর করতে বেশ কার্যকর।

বাজারে ফ্রিকেলস আউট নামে অনেক ক্রিম আছে যে গুলো তিল কমানোর চাইতে পার্শপতিক্রিয়া বাড়ায় বেশি। তারচেয়ে আপনি এই নিয়মটি অনুস্বরণ করুন তিল কমে আসবে। কলার খোসার ভেতরের অংশ আঁচিলের উপর রাখুন। নিয়মিত ব্যবহারে আঁচিল শুকিয়ে পড়ে যাবে।

আমরা সবাই কম বেশি ফ্রিকেলস শব্দটির সাথে পরিচিত। যার বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে তিল বা ক্ষুদ্র চিহ্ন। এটি এমন ধরণের দাগ যার বর্ণ বাদামী, আকারে ২ – ৪ মিমি এর মত গোলাকার, ত্বকের সমান স্তরে অবস্থান করে এবং মূলত ত্বকের কোন ক্ষতি সাধন করে না। তবুও সবাই এর থেকে পরিত্রাণ চেয়ে থাকেন। যদিও এটা কোন রোগ বা শারীরিক সমস্যা নয়, এটি অনেকের কাছেই বিব্রতকর। ফর্সা ত্বকে এ দাগ বেশি পরিলক্ষিত হয়। এটা অনেকটাই বংশগত, পরিবারের কারো এ সমস্যা থেকে থাকলে আপনার হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ফ্রিকেলস সূর্য রশ্মিতে আরো বেশি প্রকট আকার ধারণ করে তাই সান এক্সপোজড জায়গা গুলোতে বেশি হতে দেখা যায়, এছাড়া সারা শরীরেই ফ্রিকেলস হতে পারে। বাজারে অনেক ব্র্যান্ডের ফ্রিকেলস আউট ক্রীম পাওয়া যায়, যার সবই কম-বেশি ব্লিচিং উপাদান দিয়ে তৈরী; আর ব্লিচিং পদার্থ আমাদের নাজুক ত্বকের জন্য হুমকি স্বরূপ। আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাদেরকে ফ্রিকেলস সম্পর্কে যাবতীয় বিষয় জানানোর চেষ্টা করছি।

প্রকারভেদঃ

ফ্রিকেলস সাধারণত দু ধরণের হয় –

০১. এফিলাইডস –

এরা সমতল এবং লালচে বাদামী রঙের হয়ে থাকে। মূলত গ্রীষ্ম কালে দেখা দেয় এবং শীত আসলেই চলে যায়। এই রকমের ফ্রিকেলস বংশগত হতে পারে।

০২. লেনটিজাইন্স –

লেনটিজাইন্স সম্ভবত ছোট ছোট ট্যানের দাগের মত বাদামী বা কালো রঙের হতে দেখা যায়। এ ধরণের তিল এফিলাইডস থেকেও গাঢ় রঙের হয়। আর শীত কালে চলেও যায় না। সারা বছর ব্যপী এটি আপনার সুন্দর ত্বকে রাজত্ব করে বেড়ায়। এটিও অনেকটা বংশগত সমস্যা ।

লক্ষণঃ

ফ্রিকেলস প্রধানত কালো বা বাদামী দাগ যা মুখের ত্বকেই বেশি হয়ে থাকে; বিশেষ করে নাকের দুই পাশের জায়গা গুলোতে। ফর্সা বা ফ্যাকাসে ত্বক এতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। রোদের আলোতে ফ্রিকেলস আরো স্পষ্ট ও তীব্র ভাবে পরিলক্ষিত হয়।

কারণঃ

– এর আসল কারণ জেনিটিকাল। কারো পরিবারে বাবা-মা দু জনের তিল থাকলে তার হবার সম্ভবনা ৮০ %। আর যে কোন এক জনের থাকলেও এ মাত্রা ৬০-৬৫ %।

– রোদ ফ্রিকেলসের প্রধান শত্রু। অতিরিক্ত সূর্য রশ্মিতে ঘোরাঘুরির ফলেও হতে পারে। অনেকে আছেন গাড়িতে চলাফেরা করেও ফ্রিকেলস কবলিত হন এবং ভাবেন গাড়িতে থাকার কারণে তার ত্বক হয়ত সূর্য রশ্মির দ্বারা আক্রান্ত হয়নি । এ ধারণা ভুল। গাড়ির কাঁচ ভেদ করে খুব সহজেই সূর্য রশ্মি পৌঁছে যেতে পারে আপনার ত্বকে এবং তৈরী করতে পারে ফ্রিকেলস ।

– হরমোনাল ইমব্যালেন্সের জন্য-ও ফ্রিকেলস হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে বেশি পরিমাণ ইস্ট্রোজেন ক্ষরিত হয় ও ত্বকের উপরিভাগে মেলানিন সহ অন্যান্য পিগমেন্ট বাড়িয়ে দিয়ে ফ্রিকেলস সৃষ্টি করে।

সত্যিই কি ফ্রিকেলস সারিয়ে তোলা সম্ভব?

অনেকের মতে ফ্রিকেলস কখনো পুরোপুরি ভাবে সেরে উঠে না। আসলে এ কথা সঠিক নয়। পরিমিত চর্চায় এ সমস্যার সমাধান অবশ্যই সম্ভব। আগেই বলেছি ফ্রিকেলস প্রচলিত চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় ব্লিচিং উপাদান। এটি ত্বকের কালো দাগ গুলোকে সাময়িক হালকা করে দেয় বা কারো কারো ক্ষেত্রে সমস্ত মুখকেই কালো করে দেয় ফলে ফ্রিকেলস উপস্থিতি কম লক্ষণীয় হয়। তবে এটি যেহেতু ত্বকের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর এর ব্যবহার আস্তে আস্তে কমে আসছে। এখনকার প্রসাধনী গুলোতে ব্লীচের পরিবর্তে তরল নাইট্রোজেন, শক্তিশালী রাসায়নিক পীল, লেজার ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব আসলে কতটা নিরাপদ সেটাই প্রধান বিবেচ্য বিষয়।

তাই এগুলোর শরণাপন্ন হওয়ার আগে ঘরোয়া পদ্ধতিতে চেষ্টা করা প্রয়োজন।

ফ্রিকেলস সমাধানঃ

এমন অনেক উপাদান আপনার রান্নাঘরেই আছে,যা আনাকে ফ্রিকেলস থেকে মুক্তি দেবে প্রাকৃতিক ভাবে। আসুন পরিচিত হই সেগুলোর সাথে –

– প্রতিদিন টক দই/টক ক্রীম ব্যবহার করুন। এটি ধুয়ে ফেলবেন না, ময়েশ্চারাইজারের মত করে লাগান এবং রেখে দিন ত্বকে।

– লেবুর রসে যদি আপনার এলার্জি না থাকে তবে নিয়মিত লেবুর রস লাগান। দিনে যতবার ইচ্ছা ব্যবহার করুন। দ্রুত ফল পাবেন।

– মৌসুমী ফল ও সবজি দিয়ে ফেস প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করুন। এতে থাকতে পারে আলু, শশা, গাজর, লাঊ, বাঁধাকপি, এপ্রিকট, স্ট্রবেরী, টমেটো ইত্যাদি।

– দুধ দিয়ে মুখ ধুতে পারেন।

– মধু সামান্য গরম করে আক্রান্ত স্থানে লাগালেও উপকার পাবেন।

– পার্সলী রসের সাথে লেবুর রস, কমালার রস এবং গাজরের রস মিশিয়ে নিন সমান পরিমাণে। এটি ব্যবাহার করতে পারেন আপনার রেগুলার ক্রীম ব্যবহার করার ঠিক আগে। এতে ফ্রিকেলস দেখা যাবে না।

– চিনি ও লেবুর রসের স্ক্রাব-ও ভালো কাজে দেয়।

– কাঁচা হলুদের রস ও তিলের গুঁড়া এক সাথে মিশিয়ে নিন। পানি দিয়ে পেস্টের মত তৈরী করে আক্রান্ত জায়গায় লাগান।

– নিয়মিত তরমুজের রস ব্যবহারে ফ্রিকেলসের দাগ হালকা হয় অনেকটাই।

ফ্রিকেলসের উপযুক্ত খাদ্যঃ

যদিও এমন বিশেষ কোন খাবার নেই যা ফ্রিকেলস সারিয়ে তোলে, তবু এমন কিছু খাবারের নাম এখানে দেয়া হল যা আপনার ফ্রিকেলস সারানোর চিকিৎসায় সাহায্য করবে। টাটকা সবুজ শাক-সবজি, দুধ, ডিম, বীজ, ভিটামিন এ, বি, সি, ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি নিয়মিত গ্রহণ করুন। দেখবেন ত্বকে আসবে প্রাকৃতিক জেল্লা।

কিছু টিপসঃ

– যতটা সম্ভব রোদ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত।

– যদি বের হতেই হয় তবে ভালো মানের এবং ব্র্যান্ডের সানব্লক ব্যবহার করুন। যখনই রোদে বের হবেন প্রতিবারই লাগিয়ে নিতে ভুলবেন না।

– রোদে গেলে ছাতা, স্কার্ফ, বড় হ্যাট ব্যবহার করুন।

– সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।

লেবুর রস

ত্বকের অনাকাঙ্ক্ষিত কালো ছোট ছোট তিল দূর করতে লেবুর রস খুবই উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা এই সমস্যার সহজেই সমাধান করে। একটি তুলার বলে লেবুর রস নিয়ে তিলের ওপর লাগান। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। টানা দুই সপ্তাহ প্রতিদিন এই উপাদানটি ব্যবহার করুন। দেখবেন, তিল একেবারেই দূর হয়ে যাবে।

ওটমিল

ওটমিল প্রাকৃতিক স্ক্রাবার হিসেবে বেশ কার্যকর। ওটমিল গুঁড়ো করে এর সঙ্গে তিন টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। এই প্যাক দিয়ে মুখে পাঁচ মিনিট ম্যাসাজ করুন। এবার ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। সপ্তাহে অন্তত দুবার ত্বকের ওটমিল দিয়ে স্ক্রাবিং করুন। অন্তত টানা চার সপ্তাহ এই স্ক্রাব ব্যবহার করুন।

আলু

আলু ভালো করে ব্লেন্ড করে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাক মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক টানা কয়েকদিন ব্যবহার করুন। দেখবেন মুখের তিল একেবারেই দূর হয়ে যাবে।

পেঁয়াজ

প্রথমে একটি পেঁয়াজ ব্লেন্ড করে এর রস বের করে নিন। একটি তুলার বলে এই রস নিয়ে তিলের ওপর লাগান। ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই উপাদানটি অনেক দ্রুত মুখের তিল দূর করতে সাহায্য করে। পেঁয়াজের রসের সঙ্গে মধু মিশিয়েও লাগাতে পারেন।

টকদই

পুরো মুখে টকদই লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। টানা চার সপ্তাহ প্রতিদিন দুবার টকদই মুখে লাগান। দেখবেন, আপনার ত্বকের তিল দূর হওয়ার পাশাপাশি ত্বক উজ্জ্বলও হবে।

আরএম-১৫/১২/১১ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)