প্রাক্তনের প্রতি পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি নেতিবাদী

প্রাক্তনের প্রতি

ব্রেকাপ! বর্তমান সময়ে খুবই পরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ। মানুষের সম্পর্ক যেভাবে খুব সহজেই গড়ে উঠছে, সেভাবেই আবার খুব সহজে ভেঙেও যাচ্ছে। এই সম্পর্ক ভেঙে যাওয়াকেই মূলত ‘ব্রেকাপ’ নাম দেওয়া হয়ে থাকে। কাছের মানুষ হুট করেই হয়ে যায় প্রাক্তন। ব্রেকাপের পরে সাবেক সঙ্গীর ব্যাপারে ধারণা বদলে যায়। যাকে না দেখলে ভালো লাগত না, তাকে দেখলেই বরং অসহ্য লাগতে শুরু করে।

এক্ষেত্রে নতুন গবেষণা দেখায়—পুরুষরা তাদের প্রাক্তনকে নারীদের চেয়ে বেশি ইতিবাচকভাবে দেখে। অর্থাৎ নারীরা তাদের প্রাক্তনদের, পুরুষের তুলনায় বেশি মাত্রায় নিন্দা করে। সম্প্রতি, বিজ্ঞানীরা খুঁজে বের করতে চেয়েছিলেন মানুষ তাদের নির্বাসিত প্রাক্তন সম্পর্কে তাদের অনুভূতি পরিবর্তন করতে পারে কিনা, এবং উত্তরটি ছিল ‘না’। তবে তারা আরো আকর্ষণীয় একটি ফল পেয়ে হোঁচট খেয়েছিলেন। তারা আবিষ্কার করেন পুরুষরা নারীদের চেয়ে তাদের প্রাক্তন সম্পর্কে কিছুটা বেশি ইতিবাচক অনুভূতি ধরে রাখে।

এই গবেষণাটির জন্য বিজ্ঞানীরা তাদের মূল পরীক্ষাটি শুরু করেছিলেন ৩০০ জন ভিন্ন ভিন্ন লিঙ্গের লোকদের সাথে—যারা গত পাঁচ বছরের মধ্যে কারো সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন এবং পরে সঙ্গীর সাথে বিচ্ছেদ ঘটেছিল। প্রথমেই সবাইকে প্রাক্তনের ব্যাপারে তাদের বর্তমান চিন্তা ভাবনা পেশ করতে বলা হয়।

‘যখন প্রাক্তন সম্পর্কে চিন্তা করি তখন আমি রেগে যাই’ এবং ‘আমার প্রাক্তনের অনেক ইতিবাচক দিক আছে’—এমন দুটি অপশন তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। নারীদের অনেকেই তাদের প্রাক্তন সম্পর্কে প্রথম অপশনটি বেছে নেন। বিপরীতে পুরুষদের মধ্যে একটা বিরাট অংশ তাদের প্রাক্তন সম্পর্কে ইতিবাচক অনুভূতি রাখেন।

আপনার মনে হতে পারে একজন দুজন দিয়ে কী আর সঠিক তথ্য পাওয়া যায়? আসলে এই ফলটি চূড়ান্ত নয়। গবেষকরা এরপর আরো ৬১২ জন নতুন ব্যক্তিকে একই প্রশ্নপত্রটি দিয়েছিলেন যারা অন্তত চার মাস ধরে ভিন্ন ভিন্ন সম্পর্কের মধ্যে ছিলেন। ফল একই, আবারও পুরুষরা নারীদের চেয়ে তাদের প্রাক্তন সম্পর্কে ভালো অনুভূতি ধারণ করে।

গবেষণায় নারীদের বিচ্ছেদের পরে নিজেকে বেশ নির্দোষ ভাবতে দেখা যায় এবং তাদের ব্যাখ্যা করার ধরন দেখে বোঝা যায় বিভাজনে প্রাক্তনেরই দোষ বেশি ছিল বলে তারা দাবি করে। খুব কম নারীকেই পাওয়া গেছে যারা তাদের প্রাক্তনের ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক কথা বলেছেন।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে পুরুষ ও নারীদের আচরণে পার্থক্য কোথা থেকে আসে? গবেষকরা মনে করেন এখানে পরিপূরক সম্ভাবনা রয়েছে। একজন পুরুষ যে কোনো বিষয় নিয়ে দীর্ঘ ভাবনার অবকাশ পায় না। ভাবতে চায়ও না। তারা আড্ডা দিয়ে, হাসি তামাশা করে এখান থেকে বের হয়ে যেতে চান।

গবেষকরা মনে করেন দুটি পরিপূরক সম্ভাবনা রয়েছে—বিবর্তন এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল। একটি বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, মানুষ সাধারণত শিশুদের জন্ম দিতে এবং মানবতার অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে কারো সাথে অংশীদার হয়। কিন্তু এই কাজ করতে গিয়ে গর্ভধারণসহ পুরুষদের তুলনায় নারীদের অনেক বেশি ত্যাগস্বীকার করতে হয়। সেই তুলনায় পুরুষদের ভূমিকাটা খুব প্রকট নয়। তাই পুরুষরা তাদের জিনগত বৃদ্ধি সক্ষম রাখতে পারে এবং আরো যৌন অংশীদার প্রাপ্তির দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

পরিসংখ্যানগতভাবে, পুরুষরা যৌন সম্পর্কে নারীদের চেয়ে স্বচ্ছন্দ মনোভাব রাখে এবং রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যৌনতাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। অন্যদিকে, নারীদের দীর্ঘমেয়াদী, একচেটিয়া সম্পর্ক গঠনের প্রবণতা রয়েছে।

গবেষকরা যুক্তি দেখান—যেহেতু পুরুষদের যৌন সম্পর্কে চারপাশের মনোভাব রয়েছে, তারা এটি সম্পর্কে ইতিবাচক স্মৃতি ধরে রাখতে পারে বা অতীতের অংশীদারদের সাথে রোম্যান্সকে পুনরায় জাগিয়ে তুলতে ‘ইজি’ বোধ করে। অন্যদিকে, নারীদের অতীতের অংশীদারদের সম্পর্কে আরো নেতিবাচক মতামত গড়ে উঠতে পারে যাতে তারা ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদী, একচেটিয়া সম্পর্কের দিকে মনোনিবেশ করতে পারে।

কিন্তু বিবর্তনই সবকিছু নয়। লিঙ্গ ভূমিকা এবং সামাজিক অবস্থান ছাড়াও আরো কিছু বিষয় আছে। সামগ্রিকভাবে, পুরুষরা সংবেদনশীল এবং ব্যবহারিক প্রয়োজনে তাদের মহিলা অংশীদারদের ওপর নির্ভর করে। সমীক্ষা অনুসারে, পুরুষরা তাদের প্রাক্তন সম্পর্কে উন্নত মতামত দেখাতে পারে কারণ তাদের স্ত্রী এবং গার্লফ্রেন্ডরা মানসিক সমর্থনের বিশাল ভিত্তি। তারা তাদের বন্ধুদের এবং আশপাশে থেকে খুব একটা সমর্থন পায় না। নারীরা অবশ্য তাদের অংশীদারদের থেকে কম সমর্থন এবং বন্ধু ও পরিবারের মতো অন্যান্য উত্স থেকে বেশি সমর্থন পেয়ে থাকে এবং এমনটা আশাও করে।

আরেকটি সম্ভাবনা রয়েছে। আর তা হলো ব্রেকআপের ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীদের আলাদা আলাদা প্রতিক্রিয়া থাকে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্রেকআপের পরে নারীরা আরো তীব্র মানসিক ব্যথা অনুভব করে, তবে তারাই আবার সম্পূর্ণরূপে রিকোভারিও করে। যখন কোনো সম্পর্ক শেষ হয় তার জন্য নারীদের আরো ভালোভাবে মোকাবেলা করার কৌশল থাকে এবং অন্য পুরুষরাও সংবেদনশীলভাবে যুক্ত থাকে। ফলে দেখা যায় কোনো সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলে নারীরা সেই পুরুষের ছায়াও মাড়ায় না। উল্টোদিকে, পুরুষরা তখন কোনো বিষণ্ণ রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রাক্তনের ফেসবুক কিংবা ইন্সটাগ্রামের টাইমলাইন ঘুরে আসে।

আরএম-১৯/১০/১২ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)