জাপানের মেয়েরা কেন একা থাকে জানেন?

জাপানের মেয়েরা

একাকীত্ব মানেই যাঁদের কাছে যন্ত্রণার, অসহনীয় তাঁরা একবার জাপানের তরুণ প্রজন্মের জীবনযাত্রা দেখে নিতেই পারেন। তাঁরা কিন্তু একা একাই দিব্য দিন কাটাচ্ছেন, চেটেপুটে নিচ্ছেন একক জীবনের স্বাদ। তাঁরা নাকি মনের মতো সঙ্গী খুঁজে পাচ্ছেন না। কেউ আবার বলছেন, মা-বাবাকে ছেড়ে আলাদা জীবন কাটানোর ‘সাহস’ নেই। কারণ নাহয় হরেক, কিন্তু প্রশ্ন এই যে প্রেমানুভূতি কি এঁদের সকলের মনের ঘর ছেড়ে অনেক দূরে থাকে?

বয়স ২০ থেকে ৫০-এর মধ্যে। জাপানে এই বয়সের কোঠার মধ্যে অন্তত এক চতুর্থাংশ একা। পুরুষ হোক বা নারী, ‘সিঙ্গলহুড’ তাঁরা আনন্দেই কাটাচ্ছেন। এমনটাই বলছে সরকারি সমীক্ষা। আটত্রিশ বছরের এক মহিলা স্পষ্টই জানাচ্ছেন, যে তিনি বাড়ি ছেড়ে স্বামীর সঙ্গে অন্যত্র যেতে রাজি নন। আর তাই তাঁর সঙ্গী খুঁজে পাওয়া কঠিন হচ্ছে। তাঁর আরও বক্তব্য, অফিসে প্রচুর মহিলা সহকর্মী, পুরুষ তুলনায় ঢের কম। এ থেকেই বোধহয় অনেকটা স্পষ্ট যে প্রেম কেন দানা বাঁধছে না এঁদের জীবনে।

বিশেষজ্ঞদের সমীক্ষা আরও বলছে, দেশের অর্থনীতিতে আরও বেশি জোয়ার আনতে হবে। জাপানের নাগরিকদের উপর এই চাপ তাঁদের বিবাহিত জীবনে প্রবেশের পথে একটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরও বেশি বেশি রোজগার চাই, ফলে আরও বেশি সময় ধরে কাজ। সংসার জীবন সামলে দু’দণ্ড মনের মানুষের কাছে বসার অবকাশ কই?

টোকিওর চুও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক মাসাহিরো ইয়ামাদা বলেন, ‘যে সব পূর্ণবয়স্ক নারী,পুরুষ মা-বাবার সঙ্গেই থাকে, তাঁদের মধ্যে জীবনসঙ্গী খোঁজার তাগিদ অনেক কম। তাঁরা একজন সঙ্গী খোঁজার জন্য যা যা শর্ত রেখেছেন, সেটাই যথেষ্ট প্রতিবন্ধকতা। অনেকে আবার মনে করেন, সঙ্গীকে সময় দেওয়ার চেয়ে কাজের জায়গায় সময় দিলে বেশি লাভ। এঁদের আমরা বলছি – পরজীবী একক ব্যক্তি, অর্থাৎ যারা অভিভাবকদের উপর নির্ভরশীল হয়েই জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দেন।’ এরপরও কিছু বিষয় রয়েছে। ব্যয়বহুল দেশে স্বামী বা স্ত্রী, সন্তান এবং একইসঙ্গে মা-বাবাকে নিয়ে থাকার মতো বড়সড় বাড়ি খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টের। তেমন আবাসন মিললেও, যা খরচ হয়, তা দু’জনে মিলেও কুলিয়ে উঠতে পারেন না।

সম্প্রতি এই একাকী নারী-পুরুষকে পরস্পরের জীবনসঙ্গী খুঁজে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল এক বেসরকারি সংস্থা। ছিমছাম পার্টির মধ্যে দিয়ে একে অন্যকে চিনেশুনে নেওয়া, বেছে নেওয়া, গ্রহণ করা যাতে সহজ হয়, সেজন্য তাদের এই ভাবনা।

কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, সেই স্বয়ম্বর সভাতেও যুবতীরা গিয়েছেন নিজেদের বায়োডাটা এবং অভিভাবককে সঙ্গে নিয়ে। অর্থাৎ সঙ্গী খোঁজাও যেন এক চাকরি পাওয়ার প্রতিযোগিতা। এর পিছনে মনস্তাত্বিক কারণও আছে। মেয়েরা নাকি তাঁদের চেয়ে উচ্চ আয়সম্পন্ন কোনও পুরুষকেই সঙ্গী হিসেবে পেতে চান। ম্যাচমেকিং পার্টিগুলিতে দেখা গিয়েছে, বেশ কয়েকজন মহিলা পছন্দ করেছেন একজন পুরুষকেই। আর্থিক দিক থেকে বেশি স্বচ্ছল হওয়ায় তাঁর সঙ্গে মেলামেশায় আগ্রহী অনেকেই। কিন্তু সেই পুরুষ তো সঙ্গী হিসেবে একজনকেই বেছে নেবেন। অর্থাৎ নারী-পুরুষের অনুপাতও একাকী জীবন কাটানোর একটি অন্যতম কারণ।

এমনই হয়ত যুক্তিগ্রাহ্য নানা কারণ রয়েছে, যার জন্য একলা ঘরকেই দেশ বানিয়ে দিন কাটাচ্ছে জাপানের তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ। কিন্তু যা যুক্তির বাইরে নিখাদ আবেগের জায়গা, তা কি পূরণ হচ্ছে প্রচুর বৈভবের মালিক বা মালকিন হওয়া সত্ত্বেও? আরও বেশি উপার্জনের জন্য মাথা গুঁজে কাজ করতে করতে কখনও কোনও আলো মুছে যাওয়া গোধূলির আকাশ কি চোখে পড়ে না? সাধ জাগে না প্রেয়সীর হাতে হাত রেখে দু’ কদম পথ হাঁটার? এসব ছাড়া তো জীবন বড় বিস্বাদের, বড় বেরঙিন। মুরাকামীই বোধহয় প্রেমের মর্ম বুঝেছিলেন!

আরএম-২২/১১/১২ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)