১১টি অভ্যাস যা মেয়েদের অসুস্থতায় ভোগায়

১১টি অভ্যাস

ছোট বেলা থেকেই আমাদের শেখানো হয়েছে মদ খাওয়া এবং নোংরা কথা বলা হলো খারাপ অভ্যাস। যদিও, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এমন কিছু কাজ রয়েছে যা আসলে আমাদের স্বাস্থ্য ও শরীরের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তার উপর এদের অধিকাংশ কাজকেই মনে হয় খুব সাধারণ ও নিরীহ ধরণের কিছু। অর্থাৎ সাধারণ দৃষ্টিতে এসবে কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

এসব নিরীহ দর্শন অভ্যাস বা কাজগুলো স্বাস্থ্যের উপর কতটা খারাপ প্রভাব ফেলে তা আপনাদের জানাতে আর দেরি করতে চাই না। চলুন জেনে নেওয়া যাক, যে ১১টি অভ্যাস মেয়েদের অসুন্দর করে এবং প্রায়ই অসুস্থতায় ভোগায়

১১. প্রায়ই নাইলনের টাইটস পরা

নাইলনের টাইটস বা আঁটসাঁট জিন্স প্যান্ট পড়লে পায়ে এবং নিম্নাঙ্গের দিকে Ingrown Hairs হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। এমনটা হওয়ার কারণ হলো এসব আঁটসাঁট কাপড় লোমকূপ আটকে রাখে, ফলে যে লোম ত্বক ভেদ করে বের হওয়ার কথা তা ত্বকের ভিতরেই বড় হতে শুরু করে।

এই দুর্দশা থেকে মুক্তি পেতে, নিয়মিত আপনার ত্বক ঘষে পরিষ্কার এবং ময়েশ্চারাইজার দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। আর নাইলনের পরিবর্তে সুতি কাপড় দিয়ে তৈরি টাইটস এবং ঢিলেঢালা জিন্স প্যান্ট পরার অভ্যাস করুন।

১০. থালা বাসন ধোয়ার জন্য স্পঞ্জ ব্যবহার

গবেষকরা হিসাব করে বের করেছেন ১ কিউবিক সেন্টিমিটার অপরিচ্ছন্ন স্পঞ্জে ৫০ বিলিয়ন মাইক্রোঅর্গানিজম পাওয়া যায়। তারা আমাদের হাত থেকে দেহের বিভিন্ন অংশ যেমন মুখমণ্ডলে যায় তখন সেখানে র‌্যাশ এবং ত্বকের রোগ সৃষ্টি করে।

এই সমস্যা থেকে বাঁচতে ফুটানো পানি বা অ্যালকোহল দ্রবণ দিয়ে স্পঞ্জ পরিষ্কার করে নিতে পারেন। বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন পাটের স্পঞ্জ- যা ১০০% প্রাকৃতিক, পচনশীল, এবং সাধারণ স্পঞ্জের চেয়ে বেশি দিন ব্যবহার করা যায়।

৯. অতিরিক্ত পরিমাণ সয়া খাদ্যদ্রব্য খাওয়া

সয়াবিনে যে প্রোটিন পাওয়া যায় তা পুরোপুরি প্রাণিজ প্রোটিনের সমক্ষ। এতে বিভিন্ন রকম ভিটামিন পাওয়া যায় যা আমাদের শারীরিক সুস্থতা ধরে রাখতে ভূমিকা পালন করে। পরিমিত পরিমাণ সায়া খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করলে আলঝেইমারস ডিজিজ সহ বিভিন্ন প্রকার ক্যান্সারের হাত থেকে দূরে থাকা যায়।

তবে, আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে অতিরিক্ত সয়া খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করলে কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফাঁপা, বমি বমি ভাব, অ্যালার্জি এবং থাইরয়েডের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। গর্ভাবস্থায় যদি মায়েরা তাদের খাবারে সয়া খাদ্যদ্রব্য মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণ করেন তাহলে গর্ভস্থ শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি বিঘ্নিত হতে পারে।

৮. গোসলের পর মাথার চুল তোয়ালে দিয়ে মুড়ে রাখা

গোসলের পর পানি শুষে নেবে এই ধারণা থেকে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুড়ে রাখার প্রবণতা প্রায় প্রত্যেক নারীর মধ্যে দেখা যায়। এতে করে তোয়ালে মাথার ত্বক গরম করে তোলে এবং ত্বক থেকে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ তেল নিঃসরণ হয়, যা চুলকে তৈলাক্ত করে তোলে এবং দ্রুত চুল নোংরা করে তোলায় ভূমিকা রাখে।

যদি আপনার চুল শুষ্ক বা কোঁকড়া হয়, তাহলে আপনার জন্য খুব খারাপ একটি সংবাদ হলো — মাথায় তোয়ালে মুড়িয়ে রাখলে তা চুলের আর্দ্রতা কেড়ে নেয় এবং আরো শুষ্ক করে তোলে। তাহলে করণীয় কী? তোয়ালের বদলে গামছা বা টিশার্ট ব্যবহার করুন। এতে আপনার চুল আপনাকে ধন্যবাদ দেবে।

৭. তোয়ালে দিয়ে মুখ মোছা

অনেক রূপচর্চা বিশেষজ্ঞই হাত-মুখ ধোয়া বা গোসলের পর তোয়ালের পরিবর্তে টিস্যু পেপার দিয়ে মুখ মোছার কথা বলেন। এতে মাত্রই পরিষ্কার করা ত্বকে অতিরিক্ত ঘষা লেগে আঘাত প্রাপ্ত বা রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। অন্যদিকে তোয়ালে দিয়ে মুখমণ্ডল মোছার অভ্যাসে ত্বকে দ্রুত বলিরেখা সৃষ্টি করে।

তাই বলিরেখা বা ত্বকের রোগ থেকে মুখমণ্ডলকে বাঁচাতে নরম কোমল তোয়ালে অথবা টিস্যু পেপার ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ।

৬. বাথটাবে সাবানের ফেনায় গোসল

লম্বা কর্মদিবস শেষে বাথ বম্ব বা সাবানের ফেনায় নিজেকে আবৃত করে বাথটাবে শুয়ে থাকার মত আরামদায়ক আর কি হতে পারে। কিন্তু আরামদায়ক হলেও এই বিষয়ে সতর্ক হওয়া জরুরি এই জন্য যে, সাবান বা বাথ বম্ব তৈরিতে যে রঞ্জক পদার্থ এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা হয় তা আমাদের গোপনাঙ্গের অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়।

তাই বাথটাবে ঘন ঘন গোসল করার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং গোসলের জন্য ব্যবহৃত প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। যদি এসব প্রসাধনীর মোড়কের গায়ে উপকরণের তালিকায় diethanolamine, triethanolamine, এবং ammonium laureth sulfate এর নাম লেখা থাকে তাহলে সেই প্রসাধনী ব্যবহার না করাই শ্রেয়।

৫. বোতলের পানি পান করা

চলতি পথে বিশেষ করে রেল, সড়ক বা নদী পথে যাত্রার সময় অনেকেই বোতলের পানি পান করায় অভ্যস্ত, এই ভেবে যে কলের পানির চেয়ে এই পানি অবশ্যই বিশুদ্ধ। কিন্তু এসব স্থানে বিক্রি হওয়া বোতলের পানি আদৌ যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণ করে বোতলে ভরা হয়েছে নাকি অসাধু ব্যবসায়ীদের দ্বারা সাধারণ কলের পানিই ভরে দেওয়া হয়েছে তার কোনো নিশ্চয়তা আপনি কারো কাছেই পাবে না। ফলে অন্য অনেক সমস্যার পাশাপাশি দাঁতের সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটে থাকে।

তাই যাত্রা পথে বাসা থেকে পানি নিয়ে বের হওয়া উচিৎ। এতে পানি বাহিত বিভিন্ন রোগ এবং পেট খারাপ হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যাবেন।

৪. প্রসাধনী সামগ্রী গোসলখানায় রাখা

প্রায়ই গোসলখানায় প্রসাধনী সামগ্রী রাখেন অনেকে। গোসলখানার তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা খুব দ্রুত ওঠা নামা করে বলে প্রসাধনী সামগ্রীর মেয়াদ এবং কর্মক্ষমতা স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত কমতে থাকে। আর বৈদ্যুতিক বাতির আলোও এসবের মান নষ্ট করে দিতে পারে।

তাই উচিৎ হলো এসব প্রসাধনী অন্ধকার কোনো ড্রয়ারে ৫০°ফা. এবং ৭০°ফা. এর মধ্যে রাখা।

৩. হাওয়াই চপ্পল পরা

হাওয়াই চপ্পল পায়ে দিলে পা স্বাভাবিক ঠাঁই পায় না এবং এর ফলে পায়ের তালু, গোড়ালি, হাঁটু এবং উরুতে ব্যথা তৈরি হয়। যখন চপ্পল পায়ে হাঁটবেন তখন দেহের গড়ন এবং অস্থিসন্ধির উপর বাজে প্রভাব পড়ে।

কিছু চপ্পল তৈরিতে ব্যবহৃত প্লাস্টিকে বিসফেনল নামক একটি উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া যায়, যা ক্যান্সারের জন্য দায়ী উপকরণ। তাই হাওয়াই চপ্পলের বদলে হালকা এবং ভালো মানের জুতো পরিধান করা উচিৎ।

২. চুলে কলপ দেওয়া

চুলের কলপ তৈরিতে Paraphenylenediamine নামক এক ধরণের উপাদান ব্যবহার, যা চুল কালো করে। এই উপাদানের অনেকের অ্যালার্জি সৃষ্টি হয়, এমনকি কেউ কেউ কোমায়ও চলে যেতে পারে। সাধারণত চুল কালো করার সাথে সাথেই এসব সমস্যার মুখোমুখি হয় না কেউ। ধীরে ধীরে এসব সমস্যার উদ্রেক ঘটে। কলপের আরো কিছু ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এতে ব্যবহৃত আলকাতরা ক্যান্সারের জন্য দায়ী, আর সীসা গিয়ে জমা হয় ব্যবহারকারীর হাড়ে।

১. নখ বড় রাখা

রেস্তরায় খাবার তৈরি ও পরিবেশনের সাথে যুক্তদের বা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা প্রদানকারীদের নখ ছোট রাখার নির্দেশনা দেওয়া থাকে। কারণ গবেষকরা নখের নিচে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুদের উপস্থিতি খুঁজে পিছেন। আর নখ যদি বড় রাখা হয় স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে আরো বেশি পরিমাণে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুদের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

হাতের নখ যত বড়, নখ ও চামড়ার মধ্যবর্তী স্থান ধুয়ে পরিষ্কার করা ততই কষ্টসাধ্য। আপনার যদি নখ বড় হয়ে থাকে তাহলে আজই ছোটো করে ফেলুন এবং সুস্থ থাকুন।

আরএম-১২/১৪/০২ (লাইফস্টাইল ডেস্ক)