করোনাভাইরাস: জামা-কাপড় পরিষ্কার করবেন যেভাবে

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯৯টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত মানুষের সংখ্যা। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, ভয় না পেয়ে সচেতনতাই জরুরি। করোনা প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় প্রতিষেধক হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বনের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত থাকা। মানুষ এখন গৃহবন্দী। তাই সময়টাকে কাজের লাগানোর অন্যতম পন্থা হতে পারে নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছনা রাখা। তাই করোনাভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণ রোধে আমরা আমাদের পরনের জামা-কাপড় নিয়মিতভাবে পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি।

চিকিৎসকদের মতে, এই সময় নিজেদের যতটা সম্ভব পরিস্কার, পরিচ্ছন্ন রাখার প্রয়োজন। শুধু দু’টি হাত বার বার ভাল ভাবে ধুয়ে নিলেই হবে না। তার সঙ্গে নিয়মিতভাবে জামাকাপড় বদলাতে হবে। কাপড়গুলো কাচতে হবে খুব ভালোভাবে। বাইরে বের হতে হচ্ছে না বলে তেমন ধুলোবালি লাগছে না, এই ভেবে জামাকাপড় বদলানো বা কাচাকাচিতে অলসতা দেখানো মোটেই উচিত হবে না। তাহলে গৃহবন্দি থেকেও আমরা নিজেদের আর আমাদের বাড়িকে করোনাসহ নানা ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে কিন্তু বাঁচাতে পারব না।

ময়লা কাপড় থেকে দ্রুতই রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা অনেক বেশি ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। যেমন, হাসপাতালে যেই ঘরে কোনও ত্বকের ইনফেকশনে আক্রান্ত অথবা কলেরা বা ডায়রিয়ার রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যেসব রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের জন্য ময়লা কাপড় রোগ বাড়িয়ে দিতে পারে।

মেডিসিনের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বাড়িতে থাকলেও দিনে অন্তত দুইবার জামাকাপড় বদলাতে হবে। কারণ, ব্যবহৃত পোশাকে সব সময়েই নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস এসে জমে। এই পরিস্থিতিতে যা খুবই বিপজ্জনক। সারাদিনে একই জামা পড়ে থাকলে সেখান থেকেই সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়। তাছাড়া বাড়িতেও বার বার দু’টি হাত সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে ধুয়ে ফেলা উচিত। না হলে সেই হাতে জামাকাপড়, দরজা, জানলা, টেবিল, চেয়ার ছোঁয়ার পর সেখান থেকেও আমার আপনার তো বটেই, গৃহবন্দি হওয়া সত্ত্বেও বাড়ির লোকজন সংক্রমিত হতে পারেন।

তাছাড়া বাড়িতে বাইরের লোক, গৃহকর্মীর যাতায়াত আছে। বাইরে থেকে ফিরে যেকোনও বস্তু স্পর্শ করার আগেই হাত সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। বাইরে পরে যাওয়া জামাকাপড় দ্রুত বদলে ফেলুন। অতিথির সঙ্গে হাত মেলানো থেকে বিরত থাকুন। বাইরের যেকোনও পার্সেল, প্যাকেট বা অন্য কিছু হাতে নেয়ার পর হাত ধুয়ে ফেলবেন। প্রবেশের মুখেই সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা যায়।

চিকিৎসকেরা আরও জানান, প্রতিদিন আগের দিনের ব্যবহার করা সব জামাকাপড় ভালোভাবে সাবান বা সার্ফ দিয়ে কেচে নিতে হবে। ব্যবহার করা জামাকাপড় বাড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখলে চলবে না। কাচার জন্য সেগুলোকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে দিতে হবে।

জামাকাপড় থেকে যাতে ফুঁসকুড়ি, অ্যালার্জি বা চামড়ার অন্য কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য আপনার জামাকাপড় সঠিকভাবে কাচা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জামাকাপড় কাচতে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন। ওয়াশিং পাউডারের বদলে তরল ডিটারজেন্ট ব্যবহার করুন। কারণ, তরল ডিটারজেন্ট সহজেই পানির সঙ্গে মিশে যায়।

গরম পানি ব্যবহার করবেন না। কারণ এটা জামাকাপড়ের সুতোর উপর বেশি কার্যকরী হয়। ফলে জামাকাপড় কুঁচকে যাওয়ার সম্ভবনা বাড়ে। সুতো নরম করার কোনও উপাদান ব্যবহার বা ড্রায়ার ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন। এগুলিতে আপনার শিশুর অ্যালার্জির প্রবণতা বাড়তে পারে। জামাকাপড় ধোয়ার আগে দাগ তুলে ফেলুন। ভালো ফল পেতে স্টেইন রিমুভার ব্যবহার করুন।

নিয়মিত কাপড় পরিষ্কার করলেও অনেক সময় কাপড় তার উজ্জলতা হারাতে পারে। তবে, পরিষ্কারের সময় একটু সতর্ক থাকলেই আপনার কাপড়ে হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে পারেন। কাপড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে জেনে রাখুন এই প্রয়োজনীয় টিপসগুলো।

দামি কাপড় পরিষ্কারের সময়, কেনার সময় পরিষ্কারের যে নির্দেশনা থাকে তা মেনে চলার চেষ্টা করুন। এতে কাপড়ের স্থায়িত্ব বাড়বে।

বেশি ময়লা কাপড় ও তুলনামূলক কম ময়লা কাপড় আলাদা করে ফেলুন ধোয়ার আগেই। এতে কাপড় পরিষ্কার সহজ ও সুবিধাজনক হবে।
যারা ওয়াশিং মেশিনে কাপড় পরিষ্কার করেন তারা খেয়াল করবেন ওয়াশিং মেশিনের ফিল্টার পরিষ্কার আছে কি

না। সম্ভব হলে, ওয়াশিং মেশিনের ফিল্টার সপ্তাহে ১ বার পরিষ্কার করবেন।

ভারী ফেব্রিকের কাপড় যেমন-জিন্স, পরিষ্কারের সময় ব্রাশ ব্যবহার করুন। এতে সহজেই ময়লা উঠে যাবে।
রঙিন জামা কাপড় বেশিক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন না। অন্য জামা-কাপড় থেকে আলাদা করে পরিষ্কার করুন, এতে রঙ উঠে অন্য কাপড়ে লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

অতিরিক্ত গরম পানির ব্যবহার কাপড়ের জন্য ক্ষতিকর। কাজেই যে সব কাপড় পরিষ্কারে গরম পানির প্রয়োজন হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন।

কাপড় কাচার সময় ডিটারজেন্ট কাপড়ের জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে। ময়লা এবং জীবাণুসমূহ কাপড় থেকে বেরিয়ে পানিতে ধুয়ে চলে যায়। অতিরিক্ত ফিজিক্যাল রিমুভাল ব্যবহার করলে যেসব অণুজীব বেশি তাপমাত্রায় বৃদ্ধি পায় সেসব তাপশূণ্যতায় মারা পড়ে। অক্সিজেন সমৃদ্ধ সক্রিয় ব্লিচিং পাউডার এবং অন্যান্য পিচ্ছিলকারক পদার্থ ব্যবহারে কাপড় কাচা আরো স্বাস্থ্যসম্মত হয়।