করোনাভাইরাস: কেনা খাবার কতটা নিরাপদ?

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই মানুষের জীবনধারা এখন অনেক বদলে গেছে। সংক্রমণ ঠেকাতে সতর্কতা জারি করে সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে।

অবশ্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য বাজারে যেতে পারবেন আপনি। তবে অনেক মানুষই উদ্বিগ্ন যে বাজার থেকে ঘরে আনা জিনিসগুলো কি জীবাণুমুক্ত? সেগুলোতে অদৃশ্য জীবাণু লেগে নেই তো? থাকলে কী করা উচিত?

বাজারের মধ্যে ঝুঁকিগুলো কী?

আক্রান্ত মানুষের হাঁচি-কাশির সঙ্গে বেরন সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম থুতু কণার মধ্যে ভরা থাকে এই ভাইরাস। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সেগুলো আক্রান্ত মানুষের শরীর থেকে বেরিয়ে বাতাসে মেশে।

আর আপনি যদি সেই বাতাস নিঃশ্বাসের সঙ্গে টেনে নেন, অথবা সেই ভাইরাস ভরা কণাগুলো যেসব জায়গায় পড়ছে, সেগুলো আপনি হাত দিয়ে স্পর্শ করে সেই হাত যদি নিজের মুখে দেন, আপনি কার্যত সংক্রমিত হবেন।

বাজারের পণ্যসামগ্রীগুলো সাধারণত খালি হাতে নাড়াচাড়া করেন বহু মানুষ। তাই এসব পণ্য থেকে জীবাণু ছড়াতে পারে।

লন্ডনের স্কুল ফর হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক স্যালি ব্লুমফিল্ড বলেছেন, ভাইরাস ছড়ানোর একটা ঊর্বর ক্ষেত্র হলো বাজার। বাজার থেকে আপনি যেসব পণ্য কিনছেন, সেগুলো আপনার আগে আরও অনেক মানুষ হয়তো হাত দিয়ে ধরে নাড়াচাড়া করেছে।

এ ছাড়া যেখানে পয়সা দিচ্ছেন সেখানে আরও লোকের হাত পড়েছে। আবার আপনি এটিএম মেশিন থেকে পয়সা তুলে থাকেন, সেখানেও মেশিনের বোতামে আপনার আগে হয়তো আর কারও হাত পড়েছে। এর পর রয়েছে বাজারে আপনার কাছে দাঁড়ানো মানুষরা। এদের মধ্যে কে আক্রান্ত তা কি আপনি জানেন?

ভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে কী করবেন?

১. বাজারে যাওয়ার আগে এবং বাজার থেকে ফিরে এসে সাবান ও পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে ভালো করে হাত ধুতে হবে। এ ছাড়া অ্যালকোহলভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়েও হাত পরিষ্কার করতে পারেন।

২.আপনি যেসব জায়গা হাত দিয়ে ধরেছেন, সেগুলো খুব সম্ভবত সংক্রমিত। যেমন হ্যান্ড রেলিং, দরজা, শপিং বাস্কেট, ট্রলি। আর যা কিনেছেন সেগুলোও। কাজেই বাজার করার পর হাত না ধোয়া পর্যন্ত মুখে কখনই হাত দেবেন না।

৩. নগদ অর্থ ব্যবহার না করে কার্ড ব্যবহার করে বাজার করুন। তবে কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কিছুটা ঝুঁকি আছে।

রান্না করা কেনা খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা

রান্না করা খাবারের মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাবার রান্না হলে এই ভাইরাস মরে যায়।

কিন্তু ঝুঁকি আছে কাঁচা শাকসবজি, ফলমূল নিয়ে। যেহেতু অন্য ক্রেতারা বাজারে যে কোনো জিনিস হাত দিয়ে ধরেন। এ ছাড়া বিক্রেতারাও সেগুলো ধরছে। তাই এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই যে সেগুলো পুরো জীবাণুমুক্ত।

কাঁচাসবজি বা ফলমূল থেকে জীবাণু ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। অধ্যাপক ব্লুমফিল্ডের পরামর্শ হলো– সবকিছু ভালো করে পানিতে ধুয়ে শুকিয়ে তার পর সেগুলো তুলে রাখবেন বা ব্যবহার করবেন। আর প্লাস্টিকের প্যাকে, টিনের বা কাঁচের পাত্রে বিক্রি হচ্ছে এমন কিছু কিনে আনলে সেগুলো ৭২ ঘণ্টা না ছুঁয়ে সরিয়ে রেখে দেবেন। আর সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার করতে চাইলে সেগুলো জীবাণুমুক্ত করার তরল পদার্থ (ব্লিচ জাতীয় ডিসইনফেকেটন্ট) দিয়ে মুছে নিন। বাইরে থেকে কেনা খাবার কতটা নিরাপদ?

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ব্লুমফিল্ড বলছেন, রান্না করা গরম খাবার যদি স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্রস্তুত করা হয় তার থেকে কোনো ঝুঁকি থাকে না। বাইরে থেকে কেনা খাবার ঘরে এনে খেতে চাইলে গরম খাবার কিনবেন।

অধ্যাপক স্যালি ব্লুমফিল্ড বলেন, পিৎসাজাতীয় খাবার কিনলে সেটিও মাইক্রোওয়েভে ২ মিনিট ধরে গরম করে নেবেন।

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা