দত্তক আইনে সন্তান কতটুকু অধিকার পায়

দত্তক

এতিম শিশু দত্তক গ্রহণ সাধারণত সমাজে মহৎ এবং ইতিবাচকভাবে দেখা হয়। এতে এতিম শিশুটি একটি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হয় যা তাদের উন্নত জীবনের সুযোগ দেয়।

রেকর্ড অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় চার মিলিয়নের অধিক অনাথ শিশু রয়েছে। সন্তান ধারণে অক্ষমতা, বন্ধ্যাত্ব এ রকম নানা কারণে নিঃসন্তান দম্পতির সংখ্যা বাড়ছে এবং অনেকেই এখন শিশু দত্তক নিতে চাইছেন। অনাথ শিশুকে সাহায্য করা এবং একটি সুন্দর জীবনযাপনের সুযোগ করে দেওয়া সবার দায়িত্ব। এটি ইবাদতও বটে। এ ক্ষেত্রে অসহায় শিশুর প্রতি মমতাই মুখ্য উদ্দেশ্য। ওই শিশুর মঙ্গলে সরল বিশ্বাসে কৃতকাজ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।

বর্তমানে বাংলাদেশে পারিবারিক আইন ইসলামিক অনুশাসনের ধারায় পরিচালিত। ফলশ্রুতিতে মুসলিমরা আইনত দত্তক নিতে পারেন না। কিন্তু আইন ২০১৩ এর অধীনে অভিভাবকত্ব লাভ করতে পারেন। এই আইন দত্তক গৃহীত সন্তানকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী করার অধিকার দেয় না। বর্তমানে গার্ডিয়ান অ্যান্ড ওয়ার্ডস আইন ১৮৯০ (ধারা ৭) এর অধীনে, বেশিরভাগ অভিভাবকত্বের আবেদন করেন।

শরিয়াহ আইন অনুযায়ী, দত্তক নেওয়ার সময় সন্তানের পিতৃ পরিচয় স্বত্ব ত্যাগ করে এমনভাবে নেওয়া যাবে না যে মা-বাবা আর কখনো ওই শিশুর মা-বাবা হিসেবে পরিচয় প্রকাশ করতে পারবেন না। ইসলাম এ কাজ কখনো সমর্থন করে না। কেননা ইসলাম সওয়াবের নিয়তে অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে বলেছে, কিন্তু সন্তান দখল করা কিংবা তার প্রকৃত পরিচয় গোপন করার অনুমতি দেয়নি। দত্তক নেওয়া শিশুকে তাকে দত্তক নেওয়ার কারণ এবং প্রকৃত পিতামাতার পরিচয় জানাতে হবে। না হলে অনেক সময় শিশুটি পরিত্যক্ত বোধ করতে পারে।

যেহেতু দত্তক নেয়া সন্তান দত্তক পিতামাতার উত্তরাধিকার হয় না, তবে চাইলে দত্তক পিতা-মাতা তাদের মোট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ দত্তক সন্তানের জন্য দান হিসেবে দিতে পারেন। সে জন্য পালক ব্যক্তিকে হয় জীবদ্দশায় হেবা করে সম্পত্তি দিতে হবে বা অসিয়ত করে যেতে হবে, যাতে পালকের মৃত্যুর পর সম্পত্তির অনধিক তিনের এক অংশ পেতে পারে।

বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় হিন্দু আইন দ্বারা নির্ধারিত সীমাবদ্ধতা অনুসারে শুধু ছেলে শিশু দত্তক করতে সক্ষম। উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে হিন্দু আইন প্রাকৃতিক পুত্র এবং দত্তক পুত্রের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না। তবে ছেলে সন্তান দত্তক নেওয়ার পর তার পুরনো পরিবারের সাথে সম্পর্ক এমনভাবে ছিন্ন করা হয় যেন তাকে নতুন পরিবারের মধ্যে জন্ম নেওয়া হলো। একটি সামাজিক আনুষ্ঠানিক রেওয়াজের মাধ্যমে দত্তক পুত্রসন্তান তার নতুন পরিবারের উপর অধিকার, কর্তব্য এবং দায়িত্ববোধের অংশীদার হয়।

হিন্দু পুরুষ বিবাহিত, অবিবাহিত বা বিপত্নীক যা-ই হোক না কেন, তার দত্তক নেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নারীদের অধিকার সীমিত। একজন অবিবাহিত নারী দত্তক নিতে পারেন না। বিবাহিত নারীর ক্ষেত্রে স্বামীর অনুমতি দরকার। এমনকি বিধবা হিন্দু নারী দত্তক নিতে চাইলে তাকে স্বামীর মৃত্যুর আগে দেওয়া অনুমতি দেখাতে হবে। খ্রিস্টধর্মেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দত্তক নেওয়ার বিধান নেই। বাংলাদেশের খ্রিস্টানরাও শিশুর শুধু অভিভাবকত্ব নিতে পারেন।

বাংলাদেশের বহু পুরনো সংস্কারযোগ্য আইনগুলোকে হালনাগাদ করা হয়েছে, যা প্রশংসার দাবীদার। নিগৃহীত ও অবহেলিত শিশুদের সুরক্ষার বিধান রেখে আইন থাকা যুক্তিসঙ্গত। সংস্কার, সংযোজন বা বিয়োজন যেন কোনো ধর্মীয় অনুভূতি কিংবা ধর্মীয় বিধানবিরোধী না হয়। গার্ডিয়ান অ্যান্ড ওয়ার্ডস আইন ১৮৯০ -এর অধীনে অসুবিধা বিবেচনায় বাংলাদেশে দত্তক পিতা-মাতার অধিকার ও দায়িত্বের বিস্তারিত রূপরেখাসহ একটি দত্তক আইন অনুমোদন করা উচিত। পিতামাতার মর্যাদা এবং সন্তানের উত্তরাধিকার অধিকার পরিবর্তন না করে, মুসলিম আইন অনুসারে দত্তক গ্রহণ করা যেতে পারে। দত্তক পিতামাতার হেফাজতের অধিকার, সন্তানকে আগলে রাখার দায়িত্ব সম্পর্কিত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।