কী লেখা থাকে চশমার ডাঁটির ওই কোডে?

চশমা

অনলাইন ডেস্ক: ‘মেঘের ছায়া’ উপন্যাসের কিছু অংশ আবার পড়ে দেখা যাক। হুমায়ূন আহমেদ বর্ণনা করেছেন চশমা হারানো শুভ্রর ভোগান্তির কথা, ‘…শুভ্র তার শরীরে একধরনের কাঁপুনি অনুভব করল। চশমা হারালে তার এ রকম হয়। মাঝে মাঝে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। নিজেকে এত অসহায় লাগে! মনে হয় অচেনা অজানা দেশের হাজার হাজার মানুষের মাঝখানে সে হারিয়ে গেছে…।’

চশমা যাঁরা পরেন, তাঁরা শুভ্রর জায়গায় অনায়াসে নিজেকে বসাতে পারবেন। এ কারণেই বলছিলাম, আর যা–ই হোক, চশমাকে ‘শয়তান’ মানতে রাজি নই। চশমা পরম বন্ধু। এই বন্ধুর ইতিহাস কিন্তু বেশ প্রাচীন এবং লম্বা। কাজেই এত ইতিহাস আজ বলছি না। ছোট করে বলি, চশমায় লেন্সের ব্যবহার সম্পর্কে প্রাচীনতম নথিভুক্ত মন্তব্যটি করেছিলেন মধ্যযুগীয় ইংরেজ দার্শনিক রজার বেকন, সেই ১২৬৮ সালে। আর অনুমান করা হয়, প্রথমবারের মতো চশমা তৈরি করা হয়েছিল ১২৯০ সালে, উত্তর ইতালিতে। আধুনিক চশমা, অর্থাৎ যেটিতে ডাঁটি যুক্ত হলো, ১৭২৭ সালে সেটি তৈরি করেছিলেন ব্রিটিশ চক্ষু বিশেষজ্ঞ এডওয়ার্ড স্কারলেট।

চশমার ফ্রেমে কোড–রহস্য

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তো গেল। এবার আসি মূল প্রশ্নে। খেয়াল করেছেন নিশ্চয়ই, চশমার ডাঁটির ভেতরের দিকে কতগুলো সংখ্যা লেখা থাকে। এই সংখ্যা কী প্রকাশ করে? একে চশমার ফ্রেমের কোড বলা যায়। চশমার ফ্রেম কেনার আগে এই কোড জেনে নেওয়া ভালো। কারণ, কোডের রহস্য ভেদ করতে পারলে নিজের জন্য জুতসই ফ্রেম বেছে নেওয়া অনেকটাই সহজ। অনেক সময় ফ্রেম একটু ঢিলা বা চাপা হয়ে যায়। কোড জানা থাকলে এই সমস্যা এড়াতে পারবেন।

চশমার কোডে তিনটি বিষয় লুকিয়ে থাকে—

চোখের আকার (আই সাইজ)

দুই ফ্রেমের সংযোজকের আকার (ব্রিজ উইডথ)

ডাঁটির আকার (টেম্পল লেংথ)

এই তিনটির আকারই পরিমাপ করা হয় মিলিমিটারে।

১. চোখের আকার: ওপরের ছবিটিকে উদাহরণ হিসেবে নিলে দেখা যাচ্ছে, প্রথম সংখ্যা হলো ৫৪। এই ৫৪ সংখ্যাটিকে বলা হয় চশমার অনুভূমিক প্রশস্ততা। সাধারণত আমাদের চোখের আকার (আই সাইজ) ৪৪ মিলিমিটার থেকে ৫৮ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

২. দুই ফ্রেমের সংযোজকের আকার: ছবির চশমায় দুই ফ্রেমের মাঝের অশংটির দৈর্ঘ্য ২০ মিলিমিটার। অর্থাৎ দুই ফ্রেমের সেতুবন্ধটির আকার এটি। আরও সহজ করে বললে, এটি হলো দুই ফ্রেমের দূরত্ব। মানুষের নাকের গঠনের কারণে এই সেতুবন্ধের তারতম্য হয়। এটা সাধারণত ১৪ থেকে ২৪ মিলিমিটার হতে পারে।

৩. ডাঁটির আকার: ছবির ১৪০ সংখ্যাটির অর্থ হলো ডাঁটির দৈর্ঘ্য। মানুষের মুখের আকার–আকৃতির কারণে চশমার ডাঁটি ছোট–বড় হয়। এটা সাধারণত ১২০ থেকে ১৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।

এই সংখ্যাগুলোর বাইরেও আপনি কিছু সংখ্যা বা অক্ষর দেখতে পাবেন। সেগুলো ফ্রেমের মডেল ও রঙের কোড, উৎপাদনের সালও থাকে। তবে মনে রাখতে হবে, দুটি ফ্রেমের মাপজোখ একই হলেও অনেক সময় আকৃতির কারণে আপনার চোখে জুতসই না–ও হতে পারে।

যে কারণে ফ্রেমের কোড জানা জরুরি

বিখ্যাত ‘রিডার্স ডাইজেস্ট’ ম্যাগাজিনে বিশেষজ্ঞের বরাতে বলা হয়েছে, চশমা ব্যবহারকারীদের মধ্যে একটি সাধারণ ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। ধারণাটি হলো, চশমা ব্যবহারকারীরা ভাবেন, তাঁদের চশমার ফ্রেমের ‘আই সাইজ’ স্থির। আদতে তা নয়। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, আপনার আয়তাকার চশমাটির ফ্রেমের আই সাইজ ৫৬ মিলিমিটার। লেন্স দুটির মধ্যে দূরত্ব ১৬ মিলিমিটার। এখন আপনি যদি একটি গোলাকার ফ্রেম নিতে চান, সে ক্ষেত্রে আই সাইজ কিন্তু ৫০ মিলিমিটারও হতে পারে। আর লেন্স দুটির দূরত্ব হতে পারে ১৮ মিলিমিটার। অর্থাৎ আপনার বর্তমান চশমার ফ্রেমের আকার আপনার জন্য স্থির নয়। চশমার ফ্রেমের আকৃতি (শেপ) পরিবর্তন হলে ফ্রেমের মাপগুলো বদলে যেতে পারে।

দোকানে কিংবা অনলাইনে চশমার ফ্রেম কেনার সময় আমরা কেবল চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের ওপর নির্ভর করি। ‘রিডার্স ডাইজেস্ট’–এর ওই লেখায় বলা হয়েছে, ‘আমাদের ভুল বুঝবেন না, প্রেসক্রিপশন অপরিহার্য, কিন্তু চশমা আপনার মুখে সঠিকভাবে বসেছে কি না, তা নিশ্চিত করা ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রেমের মাপগুলো অনুসরণ করতেই পারেন, তবে প্রতিটি চশমা আলাদা। তাই একদম জুতসই চশমা বেছে নিতে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।’