উলফার সঙ্গে তারেক রহমানের সম্পর্ক ছিল না!

এক যুগেরও বেশি সময় পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ক্লিনচিট দিলো ভারতের স্বাধীনতাকামী সংগঠন ‘ইউনাটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা)’। বিএনপি-জামায়াত আমলে উলফা নেতাদের আশ্রয় এবং সহযোগিতার যে অভিযোগ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ছিল তা মিথ্যা, বানোয়াট ও কল্পনাপ্রসূত বলে উল্লেখ করেছেন উলফার কমান্ডার ইন চিফ পরেশ বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া। রোববার এ খবর দিয়েছে ভারতের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক যুগশঙ্খ।

পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে উলফাকে আশ্রয় ও সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াপুত্র ও বর্তমান বিএনপির অস্থায়ী প্রধান তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, উত্তর-পূর্বের অন্যান্য জঙ্গিদের আশ্রয়ের পাশাপাশি ভারতকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তের অভিযোগ রয়েছে বর্তমানে লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা তারেকের বিরুদ্ধে।

সে সময় তারেকের আলোচিত-সমালোচিত রাজনৈতিক দপ্তর ‘হাওয়া ভবন’ এ উলফা সেনাধ্যক্ষ পরেশ বড়ুয়া, তৎকালীন সভাপতি অরবিন্দ রাজখোয়া ও সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়াসহ শীর্ষনেতাদের যাতায়াতও ছিল বলে অভিযোগ। এ কারণে খালেদার দলকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে আসছে নয়া দিল্লি। দীর্ঘদিন ধরে খালেদার দলের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক ছিল কেন্দ্রের। বর্তমানে সেই সম্পর্কে কিছুটা উন্নতি হলেও সেই সময়ের কর্মকান্ডের বিষয়ে বারবার দিল্লির কথা শুনতে হয়েছে বিএনপিকে। কিন্তু আসলেই কি খালেদাপুত্র তারেক রহমানের সঙ্গে উলফার শীর্ষনেতাদের যোগযোগ ছিল?

যুগশঙ্খ লিখেছে, সম্প্রতি টেলিফোনে এ বিষয়ে উলফা-স্বাধীনের সেনাধ্যক্ষ পরেশ বড়ুয়া ও উলফার আলোচনাপন্থী নেতা অনুপ চেটিয়ার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের যোগাযোগ হয়েছিল। এ সময় তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল-খালেদাপুত্র তারেকের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ ছিল কি না? এর উত্তরে পরেশ বড়ুয়া ও অনুপ চেটিয়া তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানান।

পরেশ অসম ওরফে পরেশ বড়ুয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘হাওয়া ভবন কোথায় আমি জানতাম না। যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আর তারেক জিয়াকে কোনদিন দেখি নাই। তার সঙ্গে টেলিফোনে কখনও কথাও হয়নি। এই ব্যাপারে কোন প্রমাণ থাকলে আমি সেটাকে গ্রহণ করবো। মানুষ না দেখে না বুঝে অনেক কথা বলে। সেটা তো কাউন্ট করা যায় না।’

যুগশঙ্খের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপির আমলে চীন থেকে আসা দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী ও মোষ্ট ওয়ান্টেড পরেশ বড়ুয়া অজ্ঞাত স্থান থেকে দেয়া টেলিফোন সাক্ষাতকারে বলেন, ‘আমি যখন বাংলাদেশে ছিলাম তখন বেশিরভাগ লোক আমাকে চিনত। আমি খেলাধুলার সঙ্গে ছিলাম। সে সময়ের বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই আমাকে চিনতো। বাংলাদেশের ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। আমি নিজেও খেলতাম। কোন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আমার কোন যোগাযোগ ছিল না।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমাদের যাতে কোন রাজনৈতিক কালার না লাগে সে জন্য আলফা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আমাদের সব নেতা-কর্মীদেরও সেভাবেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কারণ আমরা সেখানে আশ্রয় নিয়েছি। আমরা বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যেতে পারবো না। কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে থাকলে কেউ খুশি হবে কেউ অখুশি হবে। এটা তো আমরা চাইনি। আমরাতো আওয়ামি লীগ বা বিএনপি কারোও শত্রু না। আমাদের কাছে সকল বাংলাদেশি সমান ও বন্ধু।’

এক প্রশ্নের উত্তরে পরেশ বড়ুয়া বলেন, ‘আমি কাউকে মিথ্যা কলঙ্ক দিতে পারবনা। আওয়ামী লীগ সরকার বলেন আর বিএনপি সরকার বলেন কোন সরকারেরই সহযোগিতা আমরা নেইনি। কেউই বলতে পারবেনা তাদের কাছে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছি।’

পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ প্রসঙ্গে বর্তমান আলোচনাপন্থী উলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া বলেন, জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে এন্ট্রি ইন্ডিয়ান সেন্টিমেন্ট বিএনপির মধ্যে আছে। এটা সত্য কথা। এটা আমি অস্বীকার করতে পারবো না। বিএনপির যে আমাদের প্রতি সহানুভূতি ছিল সেটা অস্বীকার করবো না। আওয়ামী লীগেরও অনেক নেতা আছে যারা আমাদের বিপ্লবের প্রতি সমর্থন ছিল ও আছে। কিন্তু তারেক জিয়ার সঙ্গে আমাদের কোনো যোগযোগ বা সম্পর্ক ছিল না।

তিনি বলেন, আমি সত্য বলতে গেলে বাংলাদেশের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ চায় ভারত ভাগ হয়ে যাক। ভারত দুর্বল প্রতিবেশি হউক। যারা রাজনৈতিকভাবে সচেতন তারা চায় শক্তিশালী প্রতিবেশির চেয়ে দুর্বল প্রতিবেশি থাকলে আমাদের জন্য ভাল হবে। আর ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ মানুষ উলফার প্রতি সমর্থন রয়েছে। তারা সাহায্য করতে না পারে কিন্তু সহানুভূতি আছে। সহযোগিতার মানসিকতা আছে। এটা আওয়ামী লীগ বলে কথা না, বিএনপি বলে কথা না ও জামায়াত বলে কথা না। এই ৮০ ভাগ মানুষের মধ্যে আওয়ামী লীগের সংখ্যাটা একটু কম। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের একশো ভাগ মানুষ আমাদের সমর্থন করে। কিন্তু তাদের কোন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করতাম না।

প্রসঙ্গত, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে সময় উলফার প্রায় সব শীর্ষ নেতা বাংলাদেশে আত্মগোপনে ছিলেন। সে সময় পরেশ বড়ুয়া, অরবিন্দ রাজখোয়া ও অনুপ চেটিয়ার পরিবারও ঢাকায় অবস্থান করেছেন। ধানমন্ডির একটি স্কুলে পরেশ বড়ুয়ার দুই ছেলে পড়াশোনা করেছেন। ২০০৯ সালের শেষ দিকে উলফার চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়াসহ সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব নেতাকে বাংলাদেশ থেকে ধরে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর ২০১০ সাল থেকে কেন্দ্রের সঙ্গে উলফার শান্তি আলোচনা চলছে। ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর ভারতে কাছে হস্তান্তর করা হয় উলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া। তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে ছিলেন।

এসএইচ-০৮/০৯/১২ (অনলাইন ডেস্ক)