আ’ লীগ ক্ষমতায় না আসলে হতভম্ব হবে ভারত!

আসছে জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আবার আসবে বলে আশাবাদী ভারত। বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ ও চীনের সঙ্গে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের দ্বন্দ্বের মত ইস্যুগুলোর করণে ঢাকার গুরুত্ব নয়াদিল্লির কাছে অনেক।

দুই দেশের বিশ্লেষকরাই বলছেন, গত এক দশকে এই প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পার্লামেন্ট নির্বাচন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে নয়াদিল্লি। যদিও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সরাসরি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ ভারতের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় রয়েছে। তাই ভারত চাইবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক।

দিল্লির জিন্দাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শ্রীরাম চৌলি বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে নয়াদিল্লি শেখ হাসিনার প্রতি পক্ষপাতী। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অনেক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।’

রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক বিশ্লেষক অনলাইন প্লাটফর্ম ইস্ট এশিয়া ফোরামের প্রতিবেদনের বলা হয়, ‘নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ ব্যতিত অন্য কোন দল ক্ষমতায় আসে তবে ভারত রীতিমত হতভম্ব হয়ে যাবে। দিল্লির অবস্থান স্পষ্ট। চীনা প্রভাব আটকাতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় চায় তারা।’

এদিকে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেন, ‘প্রতিবেশী বন্ধু দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করা আমাদের উচিত বলে মনে করি না। আমরা বাংলাদেশের নির্বাচনকে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে গণ্য করি।’

ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক কর্মকর্তা বেনারকে বলেন, ‘ভারত সরকার এমন কোনো মন্তব্য করবে না যাতে নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত হয়।’

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্ত সংযোগের কারণে ভূরাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা স্বার্থের কারণে প্রতিবেশি বাংলাদেশ ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসিন বলেন, ‘আঞ্চলিক নেতৃত্ব, নৌপথে কর্তৃত্ব ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করার জন্য ভারত ও চীন বহুদিন থেকেই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। ভারত চায় না দক্ষিণ এশিয়ায় এমন কিছু ঘটুক, যাতে তাদের আঞ্চলিক কর্তৃত্ব হুমকিতে পড়ে।’

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগের অন্তর্ভুক্ত একটি দেশ বাংলাদেশ, যা ভারত কোনোভাবেই পছন্দ করছে না। কারণ এর মাধ্যমে চীন মূলত ভারতকে বৃত্তবন্দী করে ফেলবে।’ অন্যদিকে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন সামরিক সরকারের প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান চীন ভ্রমণের মাধ্যমে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ব্যাপক উন্নতি ঘটান।

শেখ হাসিনা চীনের সঙ্গেও চমৎকার সম্পর্ক রাখছেন। চীনের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলেও হাসিনা সরকার জঙ্গিবাদ দমনের ক্ষেত্রে ভারতের কাছে অনেক প্রশংসিত হয়েছে। সাখাওয়াত হোসেন বলেন,‘বাংলাদেশের মাটিতে আশ্রয় নিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গিয়ে হামলা চালানো সবগুলো ভারতীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে আওয়ামী লীগ নির্মূল করেছে। ফলে দিল্লি চাইবে হাসিনা সরকার আবার আসুক।’

এসএইচ-১৩/১৭/১২ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : বেনার নিউজ ও আমাদের সময়.কম)