নির্বাচন কমিশনের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে যত কথা

বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে গেল৷ নির্বাচন কমিশন কতটা সফল? তাদের কী করা উচিত ছিল, কী করেছে, কী করতে পারেনি? এ সব নিয়েই কথা বলেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন৷

ডয়চে ভেলে: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন দেখলেন?

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন: দেখা মানে আমি নিজে ভোট দিতে গেছি আর টেলিভিশনে যতটুকু দেখলাম৷ তবে ভোটের ফলাফলে আমি বিস্মিত হয়েছি৷ এটা আমার ধারণাও ছিল না৷ গত চারটি ভোটের সঙ্গে যদি আমি এটাকে মেলাই তাহলে আমি সত্যিই বিস্মিত৷ আওয়ামী লীগ জিতবে এটা আমার ধারণায় ছিল, কিন্তু এতটা আমি ভাবিনি৷ বিএনপি যে অভিযোগ করছে, সেটা আসলে কতটা সত্যি সেটাও দেখতে হবে৷ এবার আসলে দলীয় সরকার না, জাতীয় সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হয়েছে৷ যেটা আগে কখনও হয়নি৷ ফলে এই পরিস্থিতি তো একেবারেই নতুন৷

আগের নির্বাচনগুলো থেকে এই নির্বাচনের তফাৎ কী দেখছেন?

একটা পার্টি ১০ বছর ক্ষমতায়৷ তাদের বহাল রেখে নির্বাচন করা বাংলাদেশের মতো একটি দেশে ‘ইউনিক’ এবং ‘ডিফিকাল্ট’৷ যেখানে আমাদের দেশে ইনস্টিটিউশনগুলো এখনো সেভাবে ‘গ্রো’ করেনি৷ ফলে এটা তো অন্য নির্বাচনগুলো থেকে বিরাট তফাৎ৷

আপনি নিজেও তো এই পদে থেকে নির্বাচন করেছেন? বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাজের দূর্বলতা কী দেখছেন?

আমরা যখন করেছি, তখন আর এখনের ভিন্ন পরিবেশ৷ আমরা তিন জন ছিলাম৷ সবাই একমত হতাম৷ আর এখন যারা ছিলেন তারা একটি সরকারের অধীনে থেকে নির্বাচন করেছে৷ তাদের যে সব ‘চ্যালেঞ্জ’ ছিল সেটা তারা আসলে বুঝতে পারেনি৷ আমরা কিন্তু বারবার বলেছি, তাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ৷ সেই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে তারা পারেনি৷ এখন তো ভোট হয়ে গেছে৷ ‘পোস্ট-ইলেকশনে’ তাদের অনেক কিছু বিশ্লেষণের দরকার আছে৷ এখন তারা করবে কিনা, সেটা তাদের বিষয়৷ তারা তো শেষ মুহূর্তে এই প্রার্থী বদল, ওই প্রার্থী বদল নিয়ে বেশ ডিফিকাল্টির মধ্যে তারা ছিল৷

বিরোধী পক্ষ বলছে, সরকারের অধীনে থেকে যে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব নয় সেটা রবিবারের ভোটের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে৷ আপনি কী মনে করেন?

আমরা আগেই বলেছিলাম এটা হবে এই সরকারের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ এই পদ্ধতি যে সঠিক, সেটা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ ছিল সরকারের৷ এখন সেটা পার হতে পেরেছে কিনা, সেটা তো ওরা বলছে পারেনি৷ এখন দেখি জনগণ কী বলে৷ তবে এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে এটা খুবই স্বাভাবিক৷

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারও কিন্তু সেই পরীক্ষার কথা ভোট দেয়ার পর স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন?

এই ‘সিস্টেম’ যে কাজ করে সেটা প্রমান করা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সরকারের সামনে৷ সেই চ্যালেঞ্জটা ‘মিট’ হয়নি৷

এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

এখন তো আর পরামর্শ দিয়ে কোনো লাভ নেই৷ আসলে যে সমস্ত জায়গায় তাদের সন্দেহ আছে বা অভিযোগ আছে, সেগুলো তাদের গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে তদন্ত করতে হবে৷ তারাও বলছে তদন্ত করবে? আসলে কীভাবে তদন্ত করবে, সেটা তো আর আমি জানি না৷ এখন তো ভোটার লিস্ট থেকে শুরু করে সব কিছুই স্বচ্ছ৷ তারা চাইলেই এগুলো শনাক্ত করতে পারে৷ দেখেন আমি আপনাকে দেখিয়ে দিতে পারি, আপনি যদি না দেখেন তাহলে কি করা? আর শুধু মিডিয়া কেন দেখাবে? আমি দু’বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছি, আমার পুরনো ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ আছে৷ আমাকে তো বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়নি৷ আমি ৪৭ বছরের পুরনো একটি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করছি৷ দেখেন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের মতো আর কোনো নির্বাচন কমিশনকে ‘ভ্যারাইটিজ’ নির্বাচন করতে হয়নি৷ আপনি বলতে পারেন পাকিস্তান করেছে৷ ১৯৭০ সালের আগে ওদের কোনো নির্বাচনই হয়নি৷

নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতী-র নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ বলেছেন, ২০০৮ সালের নির্বাচন কমিশন তাদের সহযোগিতা নিয়েছে৷ এখন নির্বাচন কমিশন তাদের আস্থায় নিতে পারে না৷ এটা কেন?

আমি যদি মনে করি আমি সব জানি, তাহলে আমার তো কারো সহযোগিতার প্রয়োজন নেই৷ ফলে তারা কিছু শেয়ার করতে চান না৷ ফলে তারা অন্য কাউকে ‘স্টেকহোল্ডার’ মনে করে না৷ কেউ যদি মনে করে আমি ‘রেসপনসেবল’, তাহলে অন্য কাউকে শেয়ার করার দরকার কি? দেখেন শেষ মুহূর্তে এসে ‘ফরেন অবজারভার’-দের নিয়ে এত আলোচনা৷ এটার দরকার কী? ‘শিডিউল’ ঘোষণার পর এসব নিয়ে তো আলোচনাই হবে না৷ যা করার আপনি আগেই করে ফেলবেন৷ কারণ শিডিউলের পর আপনার অনেক কাজ৷ আমরা সেভাবেই করেছি৷ আন্তর্জাতিক অবজারভারদের তো ‘গাইডলাইন’ আছে৷ তারা সেটাই মেনে চলবে৷ আমি তো তাদের বলেছি, আপনাদের এত বেশি করাও লাগবে না৷ আপনারা ২০০৮ সালের খাতাপত্র খোলেন৷ সেখানেই সব বলা আছে৷ আমরা তো তখন অনেক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছি৷ অনেক কিছুই আমরা করেছিলাম৷ আমরা বহু ‘রেকমেনডেশন’ দিলাম৷ এখন আপনারা ‘আপডেট’ করতে পারেন৷ এখন আপনি এগুলো না নিলে আমরা কি করতে পারি৷

এসএইচ-০৬/০২/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্যসূত্র : ডয়চে ভেলে)