বিএনপি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কী করবে?

জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হতে না হতেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে বাংলাদেশে৷ এ নিয়ে আওয়ামী শিবির তৎপর হয়ে উঠলেও, বিএনপিতে নিস্তব্ধ নিরবতা৷ জামায়াতও নীরব৷ তাহলে কী করবে তারা উপজেলা নির্বাচনে?

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে বিএনপির ভেতর এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার এক ধরনের কথা আছে৷ তারা মনে করে, বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়৷তবে বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি যে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না, তা তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেনি বা প্রকাশ্যে বলেনি৷ তাই আলোচনা থেকেই যাচ্ছে এই নিয়ে যে বিএনপি শেষ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেবে?এবারই প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে৷

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও সংসদ নির্বাচনের পর ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়৷ দেশে মোট উপজেলা ৪৬০টি৷ সে সময় ছয় ধাপে হয়েছিল এই নির্বাচন৷ নির্বাচনে অধিকাংশ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হলেও বিএনপির প্রার্থীরা প্রায় ১শ’রও বেশি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়৷ জামায়াতেরও ৩৪ জন চেয়ারম্যান পদে নির্বচিত হয়েছিলেন৷ ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছিলেন ১০৫ জন৷ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না হলেও দলীয়ভাবে প্রার্থী দেয়া হয়৷

নির্বাচন কশিমন এরইমধ্যে উপজেলা নির্বাচনের কাজ শুরু করেছে৷ তাদের কথা অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে৷ তবে এবার নির্বাচন হবে পাঁচ ধাপে৷

এ দিকে দেশের কয়েকটি উপজেলা পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে যে বিএনপি থেকে যাঁরা আগে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন৷

কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত নেতিবাচক হলে তাঁদের বড় একটি অংশ স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারেন৷ তাঁদের যুক্তি হলো, ‘‘২০১৪ সালে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়নি৷ আমরা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেছি৷ তাই এবারো প্রয়োজনে স্বতন্ত্র নির্বাচনই করবো৷”

২০১৪ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ধামরাই উপজেলার চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন আহমেদ অবশ্য বলেন, ‘‘আমি আর উপজেলা নির্বাচন করবো না৷ দেশের যা অবস্থা, তাতে এখান থেকে আমরা আগ্রহী প্রার্থীও পাচ্ছি না৷ দল যদি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন হয়ত কেউ প্রার্থী হবেন৷ এখন কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছেন না৷ তবে আমি নির্বাচন করবো না এটা চূড়ান্ত৷ আর রাজনৈতিক অবস্থা এ রকম থাকলে আমি রাজনীতিই ছেড়ে দেবো৷”

২০১৪ সালে জামায়াতের সমর্থনে জৈন্তাপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জয়নাল আবদিন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি জামায়াত সমর্থক সত্য৷ কিন্তু আমাকে তো প্রগতিশীল ভোটাররাও ভোট দিয়েছেন৷ জামায়াত যদি উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তা আমার ওপর চাপিয়ে দিতে পারবে না৷ কারণ আমি জামায়াতের কোনো পদে নেই৷ আমি এবারো স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি৷ আমি সেভাবেই নির্বাচন করবো৷”

জামায়াতের যেহেতু নিবন্ধন ও প্রতীক নেই, তাই এবার জামায়াতের প্রার্থীরা বিএনপির সাথে জোট না করে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ সঙ্গে সঙ্গে শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্ত কী হয়, সেটার জন্যও অপেক্ষা করছেন তাঁরা৷

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে কি করবে না – এ ব্যাপারে এখানো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি৷ তবে সংসদ নির্বাচনে যা হয়েছে, তাতে তো আর নির্বাচনের কথা চিন্তা করা যায় না৷ একটি অনির্বাচিত সরকার, অনির্বাচিত সংসদ৷ নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা নেই৷”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবো না – এমন কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেইনি৷ তবে আমরা মনে করি, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই আর গ্রহণযোগ্য হবে না৷ তাই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ তেমন নেই৷”

জানা গেছে, বিএনপি থেকে যাঁরা প্রার্থী হতে চান তাঁরা কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করছেন৷ এলাকায় কোনো তৎপরতা না চালালেও কেন্দ্রের সাথে কথা বলছেন৷ কেন্দ্র থেকে অবশ্য তাঁদের ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ কিছুই বলা হচ্ছে না৷

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু জানান, ‘‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির দু’টি বৈঠক হয়েছে৷ তাতে নির্বাচনের সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ উপজেলা নির্বাচন নিয়েও কথা হয়েছে৷ কিন্তু সকলেই একতমত যে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না৷ নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়৷ সংসদ নির্বাচন দিয়েই তা আরেকবার প্রমাণ হলো৷ এই নির্বাচন দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্য হয়নি৷”

তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এর আগে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নিয়েছি৷ উপজেলা নির্বাচনের এখনো তফসিল ঘোষণা হয়নি৷ তফসিল হওয়ার পর নির্বাহী কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেবে৷ আমরা এ নিয়ে সারাদেশে কোনো ধরনের নির্দেশনা এখানো দেইনি৷”

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ এরপর ১৯৯০, ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়৷ স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় উপজেলা পরিষদই হলো সর্বোচ্চ নির্বাচিত পরিষদ৷

এসএইচ-০৫/২০/১৯ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)