ক্ষমতায় থেকে কী করতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী?

ঢাকায় শনিবার তার দলের নির্বাচনী বিজয় উদযাপনের সময়, বহু মানুষের চোখ ছিল নির্বাচনী কারচুপির বিস্তর অভিযোগ নিয়ে কী বলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তা নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি তিনি।

সমালোচনার ক্ষুরধার জবাব দেওয়া যার সহজাত, তার এই মৌনতা অনেককেই অবাক করেছে।

শনিবারের ভাষণে শেখ হাসিনা বরঞ্চ চতুর্থ দফার শাসনে তিনি কী করতে চান, তার একটি ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বলেছেন, এবারেও তার প্রধান লক্ষ্য হবে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। সেইসাথে জোরালো ইঙ্গিত দিয়েছেন দুর্নীতি এবং মাদক সমস্যাকে তিনি বিশেষভাবে টার্গেট করবেন।

পরের দিন রোববার সচিবালয়ে গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে দুর্নীতি এবং মাদক নিয়ে তার মনোভাব স্পষ্ট করেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. রওনক জাহান মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে বিরোধীদের আলোচনাকে ঘুরিয়ে ভিন্ন জনপ্রিয় কিছু ইস্যুর দিকে নিয়ে যেতে চাইছেন যেগুলো সাধারণ মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ – দুর্নীতি, মাদক ইত্যাদি।

“সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উন্নয়ন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, সুশাসন তেমন গুরুত্ব পায়নি। এবার মনে হয় তিনি সেই বিষয়টিকে সামনে আনতে চাইছেন।”

“দেশের সবাই জানে প্রধানমন্ত্রী একচ্ছত্র ক্ষমতাধর, তার দলও পুরোপুরি তার ওপর নির্ভরশীল, অতএব তিনি সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে আশ্বাস দিতে চাইছেন তিনি এবার সুশাসন দেবেন।”

সেই ইঙ্গিত শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন মন্ত্রিসভা গঠনের পরপরই।

“মন্ত্রিসভাকেও তিনি বলেছেন আমি তোমাদের ওপর নজর রাখবো। বার্তা দিতে চেয়েছেন যে জবাবদিহিতা তিনি এবার আদায় করে নেবেন।”

ড. জাহান মনে করেন, শেখ হাসিনা তার এবার তার মন্ত্রীদের কাছ থেকে নিজেকে কিছুটা দুরে রাখার চেষ্টা করছেন যাতে তার হুমকি বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে।

সিনিয়র সাংবাদিক এবং প্রধানমন্ত্রী তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরি মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী হাসিনা এ দফায় এমন কিছু করতে চান যাতে তিনি ইতিবাচক একটি ইতিহাসের অংশ হতে পারেন।

“যে মাত্রার জয় তার হয়েছে তাতে তিনি আপ্লুত, তাই তিনি জনগণকে প্রতিদান দিতে উদগ্রীব।”

“রেকর্ড চতুর্থবারের মত প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তিনি । এটাই হয়তো তার শেষ প্রধানমন্ত্রীত্ব। তিনি হয়তো চাইছেন যে তার বাবার মতো ইতিহাসে যেন অবশ্যই তার জায়গা হয়।”

চৌধুরির মতে, সে কারণেই দুর্নীতি এবং মাদকের মত ইস্যুকে প্রধান একটি টার্গেট করেছেন তিনি।

কিন্তু যে সুশাসনের কথা শেখ হাসিনা বলছেন তার বাস্তবায়নের জন্য তাকে নির্ভর করতে হবে তার দলের লোকের ওপর, প্রশাসনের ওপর, পুলিশের ওপর। সেখানে তো কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাহলে তার এসব কথায় মানুষ কতটা ভরসা করতে পারবে?

ইকবাল সোবহান চৌধুরি মনে করেন, দলের ভেতর এবং বাইরে যে অসামান্য কর্তৃত্ব প্রধানমন্ত্রী প্রতিষ্ঠা করেছেন, ব্যক্তিগতভবে যে নৈতিক উচ্চতা বজায় রেখেছেন তাতে তিনি চাইলে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।

“প্রথম কথা এখন পর্যন্ত দুর্নীতির প্রশ্নে ব্যক্তিগতভাবে তিনি কোনো বিতর্কে পড়েননি। এরপর তার দল তার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। বিরোধী দল এখন অত্যন্ত দুর্বল। তাকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ নেই। কাকে তিনি ভয় পাবেন?”

“আর মাথা যখন কাজ করে, হাতে-পায়ে কিছু সমস্যা থাকলেও খুব সমস্যা হয়না।”

তবে কিছুটা সন্দিহান ড রওনক জাহান। “সফল হবেন কিনা তা কোটি টাকার প্রশ্ন।”

“একজন ব্যক্তি যত ভালো নেতাই তিনি হোন না কেন, একটি শাসন ব্যবস্থা তো ব্যক্তি নির্ভর হতে পারেনা।”

তাঁর মতে, সবকিছু একটি ‘সিস্টেমের’ মধ্যে আনতে হবে, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। তার মতে, সেটাই একটি সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

“নেতা যতই ভালো হোন, তিনি তো একজন ব্যক্তি। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্ত না হলে, একজন ব্যক্তির পক্ষে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়,” বলছেন তিনি।

এসএইচ-০৩/২১/১৯ (শাকিল আনোয়ার, বিবিসি)