ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় ক্ষতিগ্রস্তের শঙ্কায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশের পরমাণু শক্তিধর বড় প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে কম বেশি ভালো কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখে এসেছে বাংলাদেশের সব সরকার। সেই তুলনায় পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিভিন্ন সময়ে তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে।

এ অবস্থায় ভারত এবং পাকিস্তান এই দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যখন সংঘর্ষ চলছে তখন বাংলাদেশের উপর এর কী প্রভাব পড়তে পারে?

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলছিলেন “বাংলাদেশকে বাইরের বিশ্বের মানুষ তো দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে দেশ হিসেবে দেখছে না।”

“তাই দক্ষিণ এশিয়ায় যখন উত্তেজনা বা যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয় তখন তারা (বহিঃবিশ্ব) বাংলাদেশকে তার মধ্যেই দেখবার একটা প্রবণতা তৈরি হয়।”

‘তিনি বলছেন, ‘অবশ্যই আমরা বিনিয়োগের কথা ভাবি, ব্যবসা বাণিজ্যের কথা ভাবি, বাইরে লোক পাঠানোর কথা বলি- এইসব বিষয়গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। কূটনৈতিকভাবে এটা একটা বড় জায়গা।”

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এই দুইটি দেশের সাথে বাংলাদেশের ব্যাপক বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে।

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছিলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের যেটির সাথে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে , সেটি হলো ভারত।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বাণিজ্যের উপর কোন লাভ বা ক্ষতির আশঙ্কা আছে কী?

বিষয়টি নিয়ে কথা কথা বলেছেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের গবেষক অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ।

“আপাতত বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর কোন কিছু না হলেও সার্কভুক্ত দেশ হিসেবে বাণিজ্যিক যেসব সুযোগ-সুবিধার পেতে পারতো সেটা এই চলমান উত্তেজনা একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করলো বাংলাদেশের জন্য,” তিনি বলেন।

তিনি বলছেন, পাকিস্তান এবং ভারত উভয় সার্কভুক্ত দেশের সদস্য। আবার সার্ককে কার্যকর করার চেষ্টা চলছে দীর্ঘদিন ধরে।

সার্কের সদস্য হিসেবে নানা রকম অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে যে আলাপ-আলোচনা চলছে, সেখানে সব সময় ভারত এবং পাকিস্তানের ইস্যু এক ধরণের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।

“এই নতুন উত্তেজনার ফলে সার্কভুক্ত দেশগুলো অর্থনৈতিক যে সুযোগ-সুবিধা অর্জন করতে পারতো, সেটাকে আরো পিছিয়ে দিল বা একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করলো।”

পুলওয়ামা হামলা নিয়ে এর আগে বাংলাদেশ সরকার নিন্দা জানিয়েছে।

সেটা ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক রোকসানা কিবরিয়া বলছিলেন, ”এটা দ্বারা ভারতকে সমর্থন করছে এটা সরাসরি বলা যাবে না।”

“আবার পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আগে থেকেই দুর্বল অবস্থানে রয়েছে, যার ফলে বাংলাদেশে এখন পাকিস্তানের পূর্ণাঙ্গ কোন রাষ্ট্রদূত নেই।”

হুমায়ুন কবির বলছিলেন, চলমান উত্তেজনা, রাজনৈতিক ভাবে বাংলাদেশের উপর কতটা প্রভাব পরবে সেটা বোঝা যাবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার অবস্থান এবং প্রতিক্রিয়া কী সেটা দেখা।

পুলওয়ামা হামলায় বাংলাদেশে নিন্দা জানানোর বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা হল একটা নীতিগত অবস্থান জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। এখন বাংলাদেশ যেখানে, যে প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠী জঙ্গিবাদের শিকার হয়েছে সেখানেই নিন্দা জানিয়েছে।”

“এখন কে জঙ্গিবাদের শিকার হল এবং কে শিকার করলো – সেটা কিন্তু আলাদা প্রশ্ন। এখানে কিন্তু জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে প্রিন্সিপাল বা নীতিগত অবস্থান সেটাই ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।”

তবে অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলছিলেন, একেবারে ক্ষতির দিক চিন্তা না করে এর উল্টোটাও হতে পারে।

যদি উত্তেজনা বাড়তে থাকে তাহলে ভারত-পাকিস্তান যে পণ্যগুলো উভয় দেশ থেকে আমদানি করতো, সেসব পণ্য পাশের দেশে হিসেবে বাংলাদেশ থেকে নিতে পারে এমন সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে।

এসএইচ-২৩/২৭/১৯ (ফারহানা পারভীন, বিবিসি)