উত্তাপ ছাড়া্ই উপজেলা নির্বাচন

দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের শুরুটা হলো কোন ধরনের উত্তাপ ছাড়াই।

প্রিজাইডিং অফিসার গ্রেফতারসহ কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও এই ভোট নিয়ে ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ একটা দেখা যায় নি।

প্রথম ধাপের নির্বাচনে অনেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

স্থানীয় পর্যায়ের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের এই হাল কেন?

রোববার নানা অনিয়মের অভিযোগে ২৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এর মধ্যে একটি ছিল সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্র।

সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকা জানিয়েছেন, সেখানে রাতের বেলা ব্যালটে সিল মারার অভিযোগে রোববার সকালে একজন প্রিজাইডিং অফিসার ও দুইজন সহকারি প্রিজাইডিং অফিসারকে আটক করা হয়েছে।

এর বাইরে কুড়িগ্রাম ও হবিগঞ্জে কয়েকটি কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাই এর অভিযোগ উঠেছে। সিলেটে একটি কেন্দ্রে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

পাঁচ ধাপের এই নির্বাচনের প্রথম ধাপে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের ১২টি জেলার ৭৮ উপজেলায় এই নির্বাচন হল।

এই সবগুলি উপজেলা মিলিয়ে প্রায় দেড় কোটি ভোটার রয়েছেন।

সাধারণত স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচনে যে ধরণের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিস্থিতি থাকে, সেটা এবার অনুপস্থিত।

স্থানীয় পর্যায়ের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের এই হাল কেন?

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুর্শিদ বলছেন, “এটা সহজেই অনুমেয়। প্রথম কথা হল সব দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে যেভাবে হতো, তখন সকলে একরকম ভাবে অংশগ্রহণ করতো। তখন বেশ একটা ব্যাপকতা ছিল।”

“এখন যেহেতু দলীয়ভাবে নির্বাচন হচ্ছে, দলগুলোর অংশগ্রহণ যদি না থাকে তাহলে সেই ব্যাপকতা তো আর থাকবে না স্বাভাবিকভাবেই।”

বাংলাদেশে ৩০শে ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের কারচুপির অভিযোগ করেছে বিএনপি সহ বিরোধী রাজনৈতিক জোট।

একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা সেই প্রশ্ন তুলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত রয়েছে বিএনপি ও তার শরীক দলগুলো। জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ওঠা অভিযোগগুলো এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশ না থাকার ক্ষেত্রে কতটা ছাপ ফেলেছে?

শারমিন মুর্শিদ বলছেন, “আমাদের জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচন নানাভাবে কনট্রোভারসিয়াল হয়েছে। বিরোধী দলগুলো যারা আছে, তাদের ভেতরে এই ধরনের আশংকা একটা হতে পারে যেহেতু অনেক অনিয়মের প্রশ্ন উঠেছিলো। সেই একই রকম হয় কিনা। সেই কারণে অনীহার যায়গাটা তৈরি হতে পারে।”

আর দলকে ভোটের মাঠে না পেয়ে সেই দলের ভোটাররাও হতাশ হতে পারেন বলে মনে করেন তিনি।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে প্রথম ধাপের নির্বাচনে ইতোমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান পদে ১৫ জন ও ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন নির্বাচিত হয়েছেন।

একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব কতটা পালন করেছে?

উত্তরে কমিশনের সচিব হেলালুদ্দিন বলছেন, “সংসদ নির্বাচনকে নানা দলকে নিয়ে আসার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের দায় থাকে। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে কিন্তু আমাদের এত দায় থাকেনা। স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হল লোকাল গভমেন্ট মিনিস্ট্রির অনুরোধের প্রেক্ষিতে আমরা এটা করে থাকি। কে দাঁড়াবে কে দাঁড়াবে এটার অপশন ফ্রি থাকে।”

কিন্তু সামনে এই নির্বাচনের যে ধাপগুলো রয়েছে সেখানেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন আরও অনেকে। সেই ধাপ গুলোতেও ভোট কতটা আগ্রহ তৈরি করবে সেই প্রশ্ন এখনি উঠছে।

এসএইচ-২৭/১০/১৯ (শাহনাজ পারভীন, বিবিসি)