দেশে সড়কপথে বিশৃঙ্খলা বা নৈরাজ্য বন্ধের জন্য সুপারিশ আর প্রতিশ্রুতির শেষ নেই, কিন্তু সড়কে মৃত্যু থেমে থাকেনি। । এরই ধারাবাহিকতায় এবার সরকারের আরো একটি কমিটি দিয়েছে ১১১ দফা সুপারিশ।
প্রশ্ন হচ্ছে: এর বাস্তবায়ন আদৌ হবে কিনা, আর যদি হয় – কতগুলো বাস্তবায়ন হবে?
কমিটির প্রধান সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান দাবি করেছেন, তাদের কমিটির সুপারিশ এবং আগেকার সুপারিশের মধ্যে ‘পার্থক্য আছে।’
কতটা পার্থক্য? এর বাস্তবায়ন করাটাই বা কত বড় চ্যালেঞ্জ হবে? এই প্রশ্নগুলোও অনেকে এখন তুলছেন।
গত বছরের জুলাই মাসে ঢাকায় দু’জন কলেজ শিক্ষার্থীর নিহত হওয়ার ঘটনায় সারা দেশে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন বিক্ষোভের মুখে অনেক প্রতিশ্রুতি এসেছিল।
এরপর গত ফেব্রুয়ারি মাসে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের নেতা, গবেষক, পুলিশ এবং বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে ২২ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয় সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সুপারিশ তৈরির জন্য।
সেই কমিটি এখন ১১১ দফা সুপারিশ হাজির করছে।
যাত্রীদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী একটি সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতির একজন নেত্রী রিজু আকতার বলছিলেন, কমিটি আর সুপারিশ আসছেই, কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই।
“যখন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, তখন কিন্তু তাদের অনেক কমিটি হয়ে যায়, অনেক সুপারিশ আসে। কিন্তু আসলে বাস্তবায়ন কিছু হয় না। কিছুই হচ্ছে না। বাস্তবায়ন একদম হচ্ছে না। এটা যথেষ্ট আন্তরিক হতে হবে।”
আগের বিভিন্ন কমিটির সুপারিশের সাথে এখনকার কমিটির সুপারিশের পার্থক্য কতটা, সেই প্রশ্নও এখন অনেকে তুলেছেন।
কারণ ২০১১ সালে গঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড: আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটির সুপারিশমালা বিবেচনায় নিয়ে এখনকার কমিটি সুপারিশ তৈরি করার কথা বলেছে।
কিন্তু এখনকার কমিটির প্রধান শাজাহান খান বলেছেন, তাদের সুপারিশ আগের থেকে অনেক ক্ষেত্রে আলাদা হবে।
‘বড় পার্থক্য’ হিসেবে তিনি বলছেন, অতীতে সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ, পুলিশ বা মালিক শ্রমিক সংগঠনের ওপর দায়িত্ব দেয়া হতো। সেখানে সমন্বয়ের অভাব থাকতো।
এবার তারা সরকারের উচ্চপর্যায়ে এক বা একাধিক টাস্কফোর্সের মাধ্যমে সমন্বয়ের ভিত্তিতে বাস্তবায়নের কথা বলেছেন। এতে বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে বলে মি: খান মনে করেন।
“ইতিপূর্বে অনেকে সুপারিশ হয়েছে, তার বাস্তবায়ন হয় নাই। সে কারণে আমরা এবার সরকারের টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করেছি।এই টাস্কফোর্স একটা নয়, প্রয়োজনে একাধিক টাস্কফোর্স গঠনের কথা বলেছি।”
“এই সুপারিশগুলো শুধু সুপারিশ হিসেবে নয়,এই সুপারিশটা আপনি রাজনৈতিক সদিচ্ছা বলেন বা যাই বলেন, এটা বাস্তবায়নের জন্য আমরা যথেষ্ট তৎপর হব এবং মন্ত্রণারয় হবে, এটা আমাদের বিশ্বাস।”
এই কমিটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সময়সীমা না থাকলে কোনো কাজ হয় না।এই সময় নির্ধারণের বিষয়কে কমিটি বাস্তবায়নের বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেছে।
সেজন্য তারা বাস্তবায়নের মেয়াদকে জরুরীভিত্তিতে, স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘমেয়াদে চারভাগে ভাগ করে সুপারিশগুলোকে সাজিয়েছে।
কিন্তু পরিবহণ শ্রমিক নেতা শাজাহান খান এবং মালিকদের নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গা আওয়ামী লীগের মন্ত্রী সভায় ছিলেন।
এই সংগঠন দু’টির প্রভাবের কারণে নানা সমালোচনার পরও এই খাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে আওয়াম লীগ বা সরকারে এক ধরণের দোদ্যুল্যমানতা কাজ করে বলে দলটিরই নেতাদের অনেকেই মনে করেন।
তবে সুপারিশ তৈরির সরকারি কমিটির একজন সদস্য এবং নিরাপদ সড়ক চাই নামের সংগঠনের নেতা ইলিয়াস কাঞ্চন বলছিলেন,পরিবহন শ্রমিক মালিক প্রতিনিধিদের নেতৃত্বেই সুপারিশ তৈরি করার কারণে এবার তা বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ কম হবে বলে তিনি মনে করছেন।
“যেহেতু চালক এবং শ্রমিকদের মধ্যে থেকেই সাধারণত বিরোধিতা আসে – সেটা কিন্তু এই কমিটি গঠনের মাধ্যমে শেষ হয়ে গেছে। যেহেতু তারাই এই পরিবহন সেক্টরকে নেতৃত্ব দেয়, এবং তাদের মাধ্যমে যখন এই সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে জমা হবে। তখন কিন্তু এটা বাস্তবায়নের সময় অন্তত পরিবহণ সেক্টরে যারা নেতৃত্ব দিচ্চেন, তারা কিন্তু এর বিরোধিতা করতে পারবেন না।”
শাজাহান খানের নেতৃত্বাধীন এই কমিটি তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন আগামী ৪ঠা এপ্রিল সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে।
এসএইচ-০৮/২৪/১৯ (কাদির কল্লোল, বিবিসি)