দেশের অন্তত দশটি জেলায় বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে কথা বলে বোঝা গেল যেখানে একাদশ সংসদ নির্বাচনকেই তারা গ্রহণযোগ্য মনে করছেন না, সেখানে সংসদে যাওয়া তাদের কাছে অর্থহীন।
ওই নির্বাচনে জয়ী দলটির চারজন সোমবার শপথ নিয়েছেন আর তা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে নানা ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
একসময় যশোর সদর উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন শামসুন্নাহার পান্না। দলের সিদ্ধান্তে এবার তিনি নির্বাচনে অংশ নেননি। তাঁর দাবি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তিনি দলের জন্য ছাড় দিয়েছেন।
কিন্তু এখন বিএনপির এমপিদের শপথ নেবার বিষয়টি দেখে তিনি রীতিমতো হতাশ।
“এটা আমরা আসলে ভালোভাবে দেখছি না,” বলছিলেন শামসুন্নাহার পান্না।
যারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন তারা যদি খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নতুন নির্বাচনের জন্য সংসদে গিয়ে চাপ তৈরি করতে পারেন তাহলে বিষয়টি শপথ নেবার বিষয়টি ফলপ্রসূ হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনেকে বলছেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যদি সিদ্ধান্ত দেয় সেটি না মেনে উপায় নেই। যেমনটা বলছিলেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রোকসানা বেগম শাহনাজ।
তবে তিনিও ছিলেন শপথ নেবার বিপক্ষে।
তাঁর বক্তব্য হচ্ছে, ” প্রথম দিক থেকে আমি শপথ নেবার বিপক্ষে ছিলাম। কারণ, যেভাবে নির্বাচনটা হয়েছে সেটাকে নির্বাচন বললে ভুল হবে। কিন্তু এখন আমি বলতে চাই আমরা দলের সিদ্ধান্তকে মেনে নেব।”
সোমবার বিএনপির সংসদ সদস্যদের শপথ নেবার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে নানা রকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
সংসদে যাবার পক্ষে বিএনপির সিদ্ধান্ত সমর্থন করে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মাইমুনা রুমকি বলেন , “রাগ করে নিজের খাবার বন্ধ করে দিলে লসটা আমারই হবে। পলিটিক্যাল দল হিসেবে কথা বলার জায়গাটা আসলে সংসদে।”
তবে সংসদে যাবার জন্য বিএনপি যেভাবে মত পাল্টেছে সেটির সমালোচনা করলেন আরেকজন।
তিনি বলেন, ” এরশাদ একবার বললো নির্বাচনে যাবো, আবার বললো যাবো না। ওনাদেরটা (বিএনপি) তো ঐ রকম হয়ে গেল। তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকা দরকার ছিল।”
বিএনপির ভেতরে অনেকেই অনানুষ্ঠানিক-ভাবে বলছেন যে দল সিদ্ধান্ত না দিলেও নির্বাচিত চারজন শপথ নিতেন। ফলে তাদের উপর দলের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকতো না। সে কারণে তারেক রহমান ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। তাছাড়া শপথ নেবার মাধ্যমে সরকারের সাথে বোঝাপড়া করে খালেদা জিয়ার মুক্তি আদায় করা যায় কিনা সেটি নিয়েও অনেকে অনুমান করছেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিকাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক জায়েদা শারমিন বলেন, “দলের মধ্যে হয়তো মতবিরোধের জায়গাটা ছিল। যে কারণে ওনারা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।”
তিনি বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, সংসদে গিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য যতটা দরকষাকষি করা যাবে বাইরে থেকে হয়তো সেটা সম্ভব হচ্ছে না।
শপথ নেবার সিদ্ধান্তের সাথে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের চিন্তাধারা সাথে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের চিন্তার দূরত্ব স্পষ্ট। তবে সেটি দলের উপর কী প্রভাব ফেলবে তা এখনো স্পষ্ট নয় বলে উল্লেখ করছেন বিশ্লেষকরা।
গত চারমাস ধরে প্রায় প্রতিদিনই শপথ নেবার বিপক্ষে রীতিমতো সোচ্চার থাকলেও আজ ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নতুন সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
আলমগীর বলেন, “সময়ই প্রমাণ করবে যে এটা সঠিক সিদ্ধান্ত হলো কী হলো না। আমরা বিশ্বাস করি এই সিদ্ধান্তটা সঠিক সিদ্ধান্ত।”
এখন ‘বাস্তবতার প্রেক্ষিতে’ শপথ নেবার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজন শপথ নিলেও দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখনো শপথ নেননি।
বিএনপির ভেতরের সূত্রগুলো বলছে নেতা বলেছেন, যেহেতু মি. আলমগীর দলের পক্ষে এতদিন কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে আসছিলেন, ফলে এখন তিনিও একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে রয়েছেন।
এসএইচ-২৮/৩০/১৯ (আকবর হোসেন, বিবিসি)