পলাতক জঙ্গিরা ঝুঁকি তৈরি করছে?

দেশে পুলিশের বিশেষ বাহিনী র‍্যাব বলছে, সন্দেহভাজন যেসব জঙ্গি আদালত থেকে জামিন পেয়েছে, তাদের উপর ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করা কঠিন একটি কাজ বলে তারা মনে করছে।

র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ জানিয়েছেন যে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া প্রায় ৩০০ জন এরই মধ্যে জামিন নিয়ে বেরয়ে গেছেন, যার অর্ধেকই এখন পলাতক।

এখন প্রশ্ন উঠছে, জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার হওয়ার পর জামিনে থাকলে তাদের উপর কতটা নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে এবং তারা পালিয়ে গেলে তা কতটা উদ্বেগের বিষয়?

রোববার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলন র‍্যাবের মহাপরিচালক বলেছেন, হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার পর র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার ৫১২ জন সন্দেহভাজন জঙ্গির মধ্যে ৩০০ জনই জামিনে পেয়েছেন।

তবে এই ৩০০ জনের মধ্যে অধিকাংশই পলাতক রয়েছে বলে জানান মি. আহমেদ।

তাদেরকে আইনি সহায়তা না দেওয়ার জন্য আইনজীবীদের অনুরোধ করেন তিনি।

একজন সন্দেহভাজন জঙ্গি জামিনে থাকলে তাকে কতটা নজরদারির আওতায় রাখতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

র‍্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বলেন, জঙ্গিবাদের দিকে যাতে নতুন করে জড়িয়ে না পরে সেদিকে নজর দিতে গিয়ে, জামিন পাওয়া সন্দেহভাজনদের উপর সার্বক্ষণিক নজরদারি করা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

“নজরদারি করার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে, এদেরকে কন্টিনিউয়াসলি নজরদারির মধ্যে রাখা কঠিন হয়ে যায়,” বিবিবি বাংলাকে বলছিলেন মি. খান।

“জঙ্গিবাদের দিকে যাতে নতুন কেউ জড়াতে না পারে এবং যাদের সেই ধরণের লক্ষণ আছে, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা আমাদের প্রধান লক্ষ্যের মধ্যে আছে। আবার যারা জামিন পেয়ে বের হয়ে আসছে, তাদের ২৪/৭ নজরদারির মধ্যে রাখা সম্ভব হয় না।”

দেশে যে অ্যান্টি-টেরোরিজম অ্যাক্ট বা সন্ত্রাসবিরোধী আইন রয়েছে, সেখানে শক্তিশালী কিছু ধারা রয়েছে। এই আইনের ২০ ধারায় বলা হয়েছে, পুলিশ এই ধরণের ঘটনার তদন্ত এবং নজরদারির দায়িত্বে থাকবে।

তাহলে জামিন পাওয়া এইসব সন্দেহভাজন ব্যক্তি কীভাবে পলাতক হয়ে যায়?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমোনলজি বিভাগের শিক্ষক খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যেসব বাহিনী রয়েছে, তাদের সবার মধ্যে সঠিক সমন্বয়ের অভাব রয়েছে।

“এরা (সন্দেহভাজনরা) কিন্তু দেশের বাইরে চলে যেতে পারে। কারণ ইমিগ্রেশনের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন সমন্বয় নেই।”

ফারজানা রহমান বলেন, “আমরা বিভিন্ন দেশে দেখি ইমিগ্রেশনে এই রকম সন্দেহভাজন একেক জনের তথ্য থাকে। বাংলাদেশে সব বাহিনী যেমন কাউন্টার টেরিরজম, র‍্যাব, সোয়াট এবং ঐ ব্যক্তি যেখানে থাকে সেখানকার স্থানীয় থানার কাছে তথ্য থাকা উচিত।”

এসব সন্দেহভাজন জঙ্গিদের তথ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে রাখা হয়নি বলেও মনে করেন তিনি।

“আমার আরেকটা জিনিস মনে হয় – তাহলো সন্দেহভাজন এই সব জঙ্গিদের পরিপূর্ণ তথ্য তৈরি হয়নি। যার ফলে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় তাদের জন্য।”

এদিকে জামিনে থাকা তিনশো’ জনের মধ্যে যদি অধিকাংশ পলাতক থাকেন, তাহলে সেটা একটা উদ্বেগের বিষয় বলে মনে করেছেন জঙ্গি সংগঠনগুলোর কার্যকলাপ যারা পর্যবেক্ষণ করেন তারা।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান মনে করেন, নজরদারির অভাবে এ ধরণের সন্দেহভাজনরা আবারো সংগঠিত হওয়ার একটা সুযোগ পায়, যার ফলে আবারো একটা দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

“এই মানুষগুলো দীর্ঘদিন চুপ থাকে, গ্রেফতার হওয়ার পর মূল যে সংগঠন তারাও দূরত্ব বজায় রেখে চলে কিছু সময় পর্যন্ত, পরে আবার তারা সংগঠিত হয়ে যায়। এবং আবার তারা আক্রমণ করে।”

তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের যেসব গোয়েন্দা সংস্থা গুলো আছে, তাদের মূল দায়িত্ব ছিল এদেরকে নজরদারির মধ্যে রাখা।

“কিন্তু এই নজরদারিতে রাখতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে আগামীতে এক ধরণের আশঙ্কা থেকেই যাবে।”

এদিকে র‍্যাব বলছে, তারা বর্তমানে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে পদ্ধতিতে কাজ করছে, সেটা ভালো কাজ করছে। তবে ভবিষ্যতে নজরদারি বাড়ানোর জন্য আরো বেশ কিছু কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে।

এসএইচ-০৯/০৩/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : বিবিসি)