বাংলাদেশের ৩৮টি বড় নদী দখল ও দূষণে বিপর্যস্ত

আইনজীবীরা বলছেন, ‘‘এখন মানুষ হত্যা করলে যে বিচার, নদী হত্যা করলেও সেই বিচার হবে৷ তার আগে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে আইন পরিবর্তন করতে হবে৷”

তুরাগ নদী নিয়ে করা একটি রিটের রায় দেয়া হয় গত ৩ ফেব্রুয়ারি৷ সোমবার এর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়৷ এতে স্পষ্ট হয়েছে যে শুধু তুরাগ নয় দেশের সব নদ-নদীকেই জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করা হয়েছে রায়ে৷ রায় বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ১৭ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে৷ হাইকোর্ট চায় রায়টি যেন প্রধানমন্ত্রীর কাছেও পাঠানো হোক৷

তুরাগ নদী নিয়ে ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’-এর করা এক রিটে এই রায় দেন হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও মো. আশরাফুল কামালের বেঞ্চ৷

হাইকোর্ট যে ১৭ দফা আদেশ দিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো:
১. সরকারকে নদী দখল ও দূষণকারীদের একটি তালিকা করে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে৷
২. নদী দখল ও দূষণকারীদের নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে৷

৩. বাংলাদেশ ব্যাংক নোটিশ জারি করে সব ব্যংককে নদী দখল ও দূষণকারীদের ঋণ দেয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে৷
৩. নদী দখল ও দূষণের জন্য দায়ীদের অর্থেই নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে৷
৪. নদী ও জলাধার সংক্রান্ত কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে নদী কমিশনের ছাড়পত্র লাগবে৷
৫. নদী রক্ষায় জাতীয় নদী কমিশন সব নদীর আইনগত অভিভাবক৷

রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘‘এই রায়ে নদ-নদীকে জীবন্ত সত্তা স্বীকৃতি দেয়ায় নদীর বেঁচে থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো৷ আর আদালত যে ১৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছে তা ৬ মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে৷”

তিনি বলেন, ‘‘দখল, ভরাট বা দূষণসহ নদীর বিরুদ্ধে যে-কোনো ধরনের অপরাধ ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে৷ নদীর অস্তিত্ব বিনাশ করা নদী হত্যার শামিল অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে৷ এজন্য প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন করতে বলেছেন আদালত৷”

রিভারাইন পিপল-এর মহাসচিব শেখ রোকন বলেন, ‘‘হাইকোর্টের এই রায়ের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, নদী কমিশনকে এখন থেকে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রনালয়, অধিদপ্তর সবাই সহায়তা দিতে আইনগতভাবে বাধ্য৷ আগে এই ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতা ছিলো না৷আর এটি ছিল নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের অধীনে একটি কমিশন৷

আরো একটি বিষয় হলো, আমরা সাধারণভাবে দেখি সরকার বা জনগণের টাকায় নদীতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়৷ এখন দখলদার ও দূষণকারীদেরই ওই কাজে টাকা দিতে হবে৷”

সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফর্মেশন সার্ভিসেস(সিইজিআইএস)-এর হিসাব অনুযায়ী বাংলদেশে এখন নদীর সংখ্যা ৪৪৫টি৷ আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে নদী ৪০৫টি৷ রিভারাইন পিপল জানায়, নদীর সংখ্যা এক হাজারের বেশি৷ শেখ রোকন বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অন্তত ৩৮টি বড় নদী দখল ও দূষণে বিপর্যস্ত৷ আর এই দখল দূষণের সঙ্গে যারা জড়িত তারা রাজনৈতিক এবং আর্থিকভাবে শক্তিশালী৷ রজনৈতিক ক্ষমতার বদল হলেও দখল অব্যাহত থাকে৷ আর সরকারিভাবে যাদের এই নদীগুলো রক্ষা করার কথা, তারা দখলে সহায়তা করে৷”

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘‘এর আগে ভারতে গঙ্গাকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে৷ ইউরোপেও কিছু নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করা হয়৷ বাংলাদেশেও করা হলো৷ মানুষ হত্যা করলে যে বিচার, এখন নদী হত্যা করলেও সেই অপরাধে বিচার হবে৷ এজন্য আইন পরিবর্তন করতে হবে৷ আদালত এ কারণেই আইন পরিবর্তনের কথা বলেছেন৷”

এসএইচ-০৫/০৪/১৯ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)