বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বেশি

গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

লন্ডনে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমের চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে।”

অথচ রিপোর্টাস উইথ আউট বর্ডারস এর ২০১৯-এর প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় যুক্তরাজ্যের অবস্থান ৩৩-এ,আর বাংলাদেশের অবস্থান ১৫০-এ।

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে এ মাসের ১০ তারিখ থেকে লন্ডনে শুরু হতে যাওয়া সম্মেলনে যোগ দিতে যুক্তরাজ্য সফরে রয়েছেন তথ্যমন্ত্রী।

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান চার ধাপ নেমে ১৫০-এ নামার কারণ জানতে চাইলে মি. মাহমুদ বলেন, “প্রথমত এই যে ইনডেক্সগুলো তৈরি করা হয় সেগুলো কোন সূত্র থেকে তথ্য নিয়ে করা হয় আমি তা জানি না।”

“বাংলাদেশের পুরো গণমাধ্যম বর্তমানে যে স্বাধীনতা ভোগ করে, সেটি ইউকে-তেও অতো স্বাধীনতা সবক্ষেত্রে সব সময় ভোগ করে না,” তিনি বলেন।

উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাজ্যে ভুল সংবাদ পরিবেশনের জন্য কয়েকটি গণমাধ্যম বন্ধ হয়েছে উল্লেখ করে মি. মাহমুদ বলেন, “বাংলাদেশে ভুল, অসত্য কিংবা ফেব্রিকেটেড সংবাদ পরিবেশনের কারণে কোন পত্রিকা বন্ধ হয় না।”

এছাড়া তিনি বলেন, “ভুল বা অসত্য সংবাদ পরিবেশনের জন্য ইউকে-তে জরিমানা গুনতে হয় সংবাদ মাধ্যমগুলোকে। যেটা বাংলাদেশে করা হয় না।”

বাংলাদেশের সাংবাদিকরা সেলফ সেন্সরের মুখে পড়ার অভিযোগ করেছেন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের কারণে। এছাড়া, রাজনীতিকদের কাছ থেকে হুমকি-ধমকি এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে হুমকি পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

এটাকে মিস্টার মাহমুদ কিভাবে দেখেন – এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “সেটি দু-একজন হয়তো বলতে পারে। তবে তারা সেটা বহুদিন ধরে বলে আসছে।”

মাহমুদ বলেন, “সত্য হচ্ছে, বাংলাদেশের গণমাধ্যম পুরোপুরি স্বাধীনতা ভোগ করে। ইউকেতে আইনের প্রয়োগ আছে। আমাদের দেশে আইনের প্রয়োগগুলো ঠিক সেভাবে হয় না।”

বাংলাদেশে গত ১০ বছরে গণমাধ্যমের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে দৈনিক সংবাদপত্রের সংখ্যা ছিল সাড়ে ৭শ, এখন এই সংখ্যা প্রায় ১৩শ। টেলিভিশনের সংখ্যা অন-এয়ারে আছে ৩৪টি। লাইসেন্স দেয়া আছে ৪০টির।

তবে গণমাধ্যমের সংখ্যা দিয়ে কী প্রমাণ দেয়ার চেষ্টা করছেন – এমন প্রশ্নের উত্তরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি বলছি না যে সাংবাদিকদের উপর কেউ কেউ যে খবরদারির চেষ্টা করে না। সেটি যে হয় না বা একেবারেই কোনভাবেই কোন জায়গা থেকে হয় না বা হচ্ছে না – তা আমি বলবো না।”

“আমাদের দেশে গণতন্ত্রের চর্চাটাই সবসময় নিরবিচ্ছিন ভাবে হয়নি। এদেশে গণতন্ত্রের চর্চাটাই হচ্ছে কয়েকশ বছর ধরে। এখানে স্বাধীনতা যেমনি আছে, তেমনি আইনেরও প্রয়োগ আছে।”

গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি দলের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকায় সমাজের রাজনীতিতে জবাবদিহিতা কমে যাওয়ার লক্ষণ স্পষ্ট হয়েছে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভবিষ্যত কী – তা নিয়ে বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেছেন, “গণমাধ্যম কিছু বণিক-গোষ্ঠীর হাতে চলে গেছে। ফলে তারা চাইলেও সেই বণিক গোষ্ঠীর সমালোচনা করতে পারে না অনেক ক্ষেত্রে।”

“সেই বণিক গোষ্ঠী অনেক সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পর্ক রাখে। কিন্তু এটার স্বাধীনতা রক্ষায় যারা এর পেছনে অর্থলগ্নি করেছে, তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ না করে কিভাবে কাজ করা যায় সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।”

এসএইচ-০৮/০৫/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : বিবিসি)