আওয়ামী লীগ এ বছরই সংগঠন গুছিয়ে নিতে চায়

টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সঙ্গতকারণেই দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়েছে অনেকটাই। সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন দলটির নেতারা। বর্তমানে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন তারা। আগামী বছর মুজিব বর্ষ উদযাপনের কার্যক্রম শুরুর আগেই দলের যাবতীয় সাংগঠনিক দুর্বলতা দূর করতে সচেষ্ট হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের মূল শক্তি হলো তৃণমূল। অতীতে তৃণমূল শক্তিশালী ছিল বলেই সব ধরনের বৈরী পরিবেশ মোকাবেলা করতে পেরেছে দলটি। কিন্তু দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে সারা দেশের সাংগঠনিক কার্যক্রমে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ফলে সাংগঠনিক শক্তিতেও এখন টান পড়েছে।

বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে দলের হাইকমান্ডকেও। এ অবস্থায় দলের সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য নেতাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আট বিভাগে দলের সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়েছে। রমজানে কয়েকটি জেলায় বিশেষ বর্ধিত সভাও করা হয়েছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হবে আগামী বছর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে ২০২০-২১ সালকে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করেছেন। দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা আগেভাগেই দূর করা না গেলে তা মুজিব বর্ষ উদযাপনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের। এ কারণে মুজিব বর্ষ উদযাপন শুরুর আগেই আওয়ামী লীগকে তৃণমূল পর্যন্ত ঢেলে সাজাতে চাইছেন দলের শীর্ষ নেতারা। এরই অংশ হিসেবে সাংগঠনিক সফরও শুরু করেছেন তারা, যা শিগগিরই আরো জোরদার করা হবে।

দলের শীর্ষ নেতারা বলেন, তৃণমূলের নেতাদের ভেতরে কিছু ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে, যা জমাট বেঁধে ক্ষোভ তৈরি করেছে। এতে করে দলের ভেতরেও দুর্বলতা তৈরি হয়েছে। এ ক্ষোভ থেকে একটি মহল রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাদের দলের রাজনীতিতে আবারো সক্রিয় করার পাশাপাশি প্রভাবশালী মহলের বলয় ভেঙে দেয়া এসব সাংগঠনিক সফরের মূল লক্ষ্য।

সর্বোপরি ঘটা করে মুজিব বর্ষ পালনের মাধ্যমে দলের ভেতরের সব ভেদাভেদ দূর করে আওয়ামী লীগের জৌলুস আরো বাড়িয়ে তোলাও এ সফরের উদ্দেশ্য।

তিনি বলেন, এ সফরে মূলত আমরা চেষ্টা করছি তৃণমূলে কোনো ধরনের অসন্তোষ থাকলে এর কারণ চিহ্নিত করে তা তাত্ক্ষণিকভাবে দূর করার। গত ১০ বছরে কারা ক্ষমতা ভোগ করতে আওয়ামী লীগে ভিড়েছে বা পদ বাগিয়ে নিয়েছে, তাদের খুঁজে বের করে পদচ্যুত করা ও প্রভাবশালীদের বলয় ভেঙে দেয়াও এর উদ্দেশ্য।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি এখন তৃণমূলের প্রতি বিশেষ নজর রাখছেন। ঘটা করে মুজিব বর্ষ পালনের যে উদ্যোগ সরকারের ও আওয়ামী লীগের রয়েছে, তা যথাযথভাবে পালন করতে হলে অবশ্যই দলকে আগে শক্তিশালী করতে হবে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সারা দেশে আওয়ামী লীগের নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। এর পেছনে প্রতিবেদনগুলোয় বিভিন্ন কারণও দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হলো প্রভাবশালীদের বলয়। দ্বিতীয়টি হলো বিভিন্ন দল থেকে আসা নেতাদের আধিপত্য। এ দুই কারণে তৃণমূলে আওয়ামী লীগ বেশি নাজুক হয়ে পড়েছে। মুজিব বর্ষ শুরু হওয়ার আগেই এ নাজুক অবস্থা থেকে দ্রুত বের হয়ে আসতে চায় আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে সারা দেশের প্রবীণ ও ত্যাগী রাজনীতিকদের দলের ভেতরে মূল্যায়নেরও নির্দেশ দিয়েছে দলীয় হাইকমান্ড।

আসন্ন মুজিব বর্ষ নিয়ে দলের পরিকল্পনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, মুজিব বর্ষের মাধ্যমে আমরা সাধারণ মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুর জীবনকে তুলে ধরা হবে। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক লক্ষ্যগুলোকেও মানুষের সামনে উপস্থাপন করা যাবে।

তিনি বলেন, সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলের শক্তি বৃদ্ধি ও সুসংগঠিত করার কাজ শুরু হয়েছে। সাংগঠনিক সফর যাতে নামমাত্র সফর না হয়ে কার্যকর হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন শেখ হাসিনা।

এসএইচ-০৮/০৯/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : আমাদের সময়)