নিরাপত্তাহীনতার কারণেই সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগে বাধ্য হন?

ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার একটি বক্তব্য ঘিরে হঠাৎ করেই বাংলাদেশের উত্তাপ ছড়িয়েছে৷ আসলে কত সংখ্যালঘু স্বাধীনতার পর দেশে ছেড়েছেন বা নিরুদ্দেশ হয়েছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান না মিললেও সংখ্যাটা যে অনেক সেটা নিশ্চিত৷

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত সংবাদ মাধ্যমকে বলছেন কোনো দেশের কোনো নাগরিক স্বেচ্ছায় নিজের দেশত্যাগ করে না৷ যাচ্ছে নিরাপত্তাহীনতার কারণে৷ চাকরি বা অন্য কোনো কারণে গেলে দেখা যায়, অনেকেই অ্যামেরিকায় থাকেন, কিন্তু বারিধারায় তার একটা বাড়ি আছে৷ নিরাপত্তাহীনতার কারণেই মূলত সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন এবং হচ্ছেন৷

১৯৭০ সালের দিকে ১৯-২০ ভাগ জনগোষ্ঠী ছিল সংখ্যালঘুরা৷ ২০১১ সালে এসে সেটা হয়েছে ৯ দশমিক ৭ ভাগ৷ এখন পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, ২ দশমিক ৩ ভাগ বেড়েছে৷ তাতেও ১২ শতাংশ হয়৷ এর অর্থ হল ৫ থেকে ৭ ভাগ জনগোষ্ঠী হারিয়ে গেছে৷ আমরা এটাকে বলছি, মিসিং পপুলেশন৷

প্রিয়া সাহার বক্তব্যকে পুঁজি করে আমরা অনেককেই ঘোলা জলে মাছ শিকারের চেষ্টা করতে দেখছি৷ আমরা এও দেখলাম, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তারাও প্রিয়া সাহার বক্তব্যকে পুঁজি করে সম্প্রদায় বিশেষকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন৷ এতে সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক আছেই৷ তবে প্রধানমন্ত্রীর লন্ডন থেকে যে নির্দেশনা, তাতে আমরা খানিকটা আস্বস্ত হতে পেরেছি৷

সত্তরের আগে পাকিস্তান সরকার সংখ্যালঘু নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়া শুরু করেছিল৷ সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তারাও একই পলিসি নিয়েছে৷ এরশাদের পতনের দুই মাস আগেও ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চালানো হয়৷ ১৯৯২ সালে একটানা ২৭ দিন নির্যাতন হতে দেখেছি৷ ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত নির্যাতন-নিপীড়ন-ধর্ষণ করা হয়েছে৷ ২০১১-২০১৪ পর্যন্তও নির্যাতন হয়েছে৷ বর্তমান সরকার বাজেটে ৬০ কোটি টাকা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে৷ এটা আমাদের আশান্বিত করে৷

বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ও মৌলনীতি পুনস্থাপিত হয়েছে৷ এই সাম্প্রদায়িক রূপের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা আশা করা যায় না৷ বঙ্গবন্ধুর যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের নীতি সেটা হতে হলে ৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যেতে হবে৷

প্রথম কথা হচ্ছে, মাইনোরিটিদের স্বার্থ রক্ষা করবে তো আমার দেশ৷ আমার সংসদ৷ সেখানে সব দল মিলে৷ বিদেশিরা আমার স্বার্থ কিভাবে রক্ষা করতে পারে, সে বিষয়ে আমার কোন জানাশোনা নেই৷ এটা আমি মনেও করি না৷ জনগণের সমস্যা নিয়ে তো পার্লামেন্টেই আলোচনা হবে৷ বিদেশিরা আসলে কি করবেন, সে ব্যাপারে আমার কোন ধারণাও নেই৷

এটা আমার চোখে দৃশ্যমান নয়৷ এখনও আমি লক্ষ্য করছি, প্রিয়া সাহার বক্তব্যকে পুঁজি করে মহলবিশেষ ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরী করে যাচ্ছেন৷ এবং একটি সংঘাতমূলক পরিস্থিতি তৈরী করার জন্য তারা প্রতিনিয়তই হুমকি দিয়ে চলেছেন৷ আর এর বিরুদ্ধে প্রশাসনে বা আইন শৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষকে কোন ধরনের ভূমিকা নিতে আমরা দেখিনি৷

এসএইচ-০৪/২৭/১৯ (সমীর কুমার দে, ডয়চে ভেলে)