ডেঙ্গু আতঙ্ক নগরবাসীকে জরিমানার হুঁশিয়ারি

এখনও কাটেনি ডেঙ্গু আতঙ্ক৷ ৬ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি হিসেবে দেশে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৯ হাজার ৯১২৷ মারা গেছে অন্তত ২৩ জন৷ এর মধ্য কড়া নাড়ছে কোরবানির ঈদ৷ আতঙ্কিত নগরবাসী৷

ডেঙ্গুর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নগরবাসীর সচেতনতাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটির দুই মেয়র৷ এমনকি, নগরবাসীর কারণে এডিস মশার লার্ভা তৈরি হলে জরিমানা আদায় করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম৷

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, নগরবাসী বুঝে গেছেন ‘‘এডিস মশার জন্ম কিন্তু ময়লা পানিতে না৷ এডিস মশার জন্ম হয় তিনদিনের বেশি জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে৷ এ বিষয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে৷”

তিনি বলেন, প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখা হচ্ছে কোথায় লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে৷ ‘‘প্রথমে আমরা ওয়ার্নিং দিবো৷ লাল রঙের একটি স্টিকার লাগিয়ে দেবো৷ পরে গিয়ে আবার দেখবো৷ বাসা থেকে যদি লার্ভা মুক্ত না করে, তাহলে অবশ্যই আমরা ফাইনিং সিস্টেম (জরিমানা আদায়) করবো৷”

আতিকুল ইসলাম বলেন, জনগণ এগিয়ে এলেই এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজ হবে৷ বৃহস্পতিবার থেকে নতুন ওষুধ ছিটানোর কথা বলেন মেয়ররা৷

এর মধ্য নগরজুড়ে বসতে শুরু করেছে পশুর হাট৷ পশুর হাট মানেই ময়লা আবর্জনা৷ কিন্তু হাট এলাকাকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়ের সাঈদ খোকন৷ পশুর হাট ডেঙ্গুর জন্য খুব একটা ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে জানিয়েছেন দক্ষিণের মেয়র৷ তিনি বলেন, ‘‘ডেঙ্গুর সঙ্গে এটার খুব বেশি একটা সম্পর্ক নেই৷ কারণ এখানে এডিস মশা খুব একটা হয় না৷” তারপরেও কন্টেইনারের পানি জমে যাতে এডিস বংশ বিস্তার করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখার কথা জানিয়েছেন সাঈদ খোকন৷

ঈদের ছুটিতে ঢাকা অনেকটাই ফাঁকা হয়ে আসে৷ বিপুল পরিমাণ কর্মজীবী মানুষ পরিবার পরিজনদের সঙ্গে ঈদ ছুটি কাটাতে বাড়ি যাবেন৷ ফাঁকা ঢাকাকেই চ্যালেঞ্জ মনে করছেন নগরপিতারা৷ সাঈদ খোকন বলেন, ‘‘বাসাগুলো বন্ধ থাকবে৷ যদি বৃষ্টিপাত হয়, পানি জমে থাকে, তাহলে আবার নতুন করে লার্ভা হবে৷‘‘

তিনি জানান, ঢাকা শহরের বাড়ি বাড়ি গিয়ে লার্ভা ধ্বংসের কাজটি চলমান আছে৷ কিন্তু এ কাজটা থমকে যেতে পারে, কারণ পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ঈদের ছুটিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে লার্ভা ধ্বংস করতে পারবে না৷ কারণ বন্ধ বাড়িতে গিয়ে লার্ভা ধ্বংসের সুযোগটা তাঁরা পাবেন না৷ ফলে নগরবাসী ঢাকা ছাড়ার সময় যদি প্রতিটি বাসায় একজনকে রেখে যায়, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরাযদি বাড়ির ভেতর ঢুকতে পারে, তাহলে কাজটি সহজ হবে বলে মনে করেন দক্ষিণের মেয়র৷

মেয়র বলেন, ছুটি থেকে ঢাকায় ফিরে শুরুতেই বন্ধ ঘর পরিস্কার করে নেয়া হয়, তাহলে ঝুঁকি অনেকটা কেটে যাবে৷

সাঈদ খোকন জানান, এডিস মশার লার্ভা সাধারণত স্বচ্ছ পানিতে হয়৷ তাই কোরবানির বর্জ্য বড় ধরণের প্রভাব ফেলবে না৷ তবে ঈদের প্রথম দিনের সকল বর্জ্য ওই রাতের মধ্যেই পরিস্কার করে ফেলা হবে নিশ্চিত করেন দক্ষিণের মেয়র৷ দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনের বর্জ্য অপসারণ সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শেষ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) সানিয়া তাহমিনা ঝরা জানিয়েছেন, ঈদের ছুটিকে সামনে রেখে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে দু ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে৷ তিনি জানান, ‘‘সারা বাংলাদেশের সকল হাসপাতালের চিকিৎসকদের এবং চিকিৎসা সেবায় জড়িতদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে৷ এমনকি কমিউনিটি ক্লিনিকেও ছুটি বাতিল করা হয়েছে৷ শুধু ঈদের দিন তাঁরা অন কলে থাকবেন, বাকিসব দিন তাঁরা ডিউটিতে থাকবেন৷”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ঈদের ছুটিতেও সার্বক্ষণিক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘ঢাকার বাইরে চিকিৎসা সেবা পেতে যাতে অসুবিধে না হয়, সেজন্য দেশের প্রতিটি সদর, জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে ডেঙ্গুর কিট কেনাকাটায় বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷”

ডেঙ্গু কিট সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে জেলা পর্যায়ে এসব পণ্য পৌঁছে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান তিনি৷ ফলে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য এখন আর ঢাকামুখি হতে হবে না৷

তিনি জানান, ঈদকে সামনে রেখে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে বাড়ি যাবেন৷ ঘর ছেড়ে বাড়ি যাওয়ার আগে সব পানির পাত্র খালি করে তা উল্টে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সানিয়া তাহমিনা৷ এমন হাই কমোড ঢেকে রাখার পাশাপাশি লো-কমোড যেন ঢেকে রাখা হয় সেই পরামর্শ দিয়েছেন এই স্বাস্থ্যবিদ৷ ফ্রিজ এবং এসির পানির পরিস্কার করে রেখে যেতেও বলেছেন তিনি, যাতে ডেঙ্গু বংশ বিস্তার করতে না পারে৷

তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া জানিয়েছেন সেপ্টেম্বের মধ্যেই ডেঙ্গুর প্রকোপটা কমে যাবে৷ তিনি বলেন, সাধারণত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি বা শেষের দিকেই এই প্রকোপটা কমে যায়৷ কারণ হিসেবে তিনি জানান, ওইসময় বৃষ্টি কমে যায়, জলাবদ্ধতা কেটে যায়৷ ফলে এডিস মশা বংশ বিস্তার আর করতে পারে না

ডেঙ্গু মোকাবিলায় যারা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁরাও কিন্তু ঝুঁকির বাইরে নয়৷ এরমধ্যেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের মৃত্যুও হয়েছে৷ ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যসেবায় জড়িত কেউ যাতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত না হন সেজন্য ফুল হাতা কাপড় এবং জুতা-মোজা পড়ে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে৷

এসএইচ-০৪/০৮/১৯ (তানজীর মেহেদী, ডয়চে ভেলে)