পুরো বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছে ভারত

অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের যে অংশে এখনো কাঁটাতারের বেড়া নেই সেখানে এই বেড়া বসাতে যাচ্ছে ভারত৷

এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে আলোচনার বিষয়গুলো জানিয়েছেন৷ আগরতলা বিমানবন্দরকে জমি দেওয়ার বিষয়ে কারো সঙ্গে কোনো কথা হয়নি বলেও জানান খাঁন কামাল৷

কাঁটাতারের বেড়া প্রসঙ্গে কামাল বলেন, ‘‘কথা ছিল (আলোচনা হয়েছে) যে, ইলিগ্যাল ট্রেসপাস যাতে না হয় সেটার জন্য, সেটার জন্য আমরাও বলেছি যে- বর্ডারে ইলিগ্যাল ট্রেসপাস হতেই পারে, সেজন্য তারা ভারতের যে অংশটায় কাটাতারের বেড়া নেই এখন পর্যন্ত, বাকী রয়েছে, আমাদের সঙ্গে, সেখানে তারা বেড়া দিতে চায়৷ আমরা বলেছি, যেভাবে তারা বেড়া দিয়ে আসছে সেভাবে দিলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই৷”

বাংলাদেশের ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেওয়া কামাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন৷

প্রতি বছরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে এ ধরনের বৈঠক হয় জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, ‘‘কিছু অমিমাংসিত বিষয়গোলো নিয়ে আলাপ হয়েছে, যেসব বিষয়ে এখনো মত পার্থক্য রয়েছে তা দুই পক্ষ বসে ঠিক করে নেবে৷”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘মাদক নিয়ে আলাচনা হয়েছে৷ তারা বলেছে, ইয়াবা তাদরের দেশেও ঢুকে যাচ্ছে এবং আমাদের সহযোগিতায় এটা তারা নিয়ন্ত্রণ করবে৷ জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তারা সহযোগিতা করছে, এটা বজায় রাখতে বলেছি, তারা রাজী হয়েছেন এবং প্রয়োজন হলে আরো সহায়তা দেবেন৷”

‘‘তিনি (মোদী) বলেছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) ডায়নামিক লিডারশীপে বাংলাদেশ একটি নতুন উচ্চতায় চলে গেছে৷ তিনি এটাও বলেছেন, সব দেশেরই এটা অনুসরণ করা উচিত…কীভাবে জঙ্গিসন্ত্রাস দমন করে এই সুন্দর মডেলে তিনি দেশকে নিয়ে এসেছেন৷”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে ভারতের কিছু করার থাকলে সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন মোদী৷ ‘‘আমি বলেছি, ‘‘বঙ্গবন্ধু তার ছোটবেলা ভারতেই কাটিয়েছেন, তার অনেক স্মৃতিবিজরিত ভারত৷” তিনি (মোদী) বলেছেন, ‘‘(বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে) আমারা কিছু করতে পারলে খুশি হব৷”

২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মের শত বছর পূর্ণ হবে। আর ঠিক পরের বছর ২৬ মার্চ বাংলাদেশ উদযাপন করবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।

বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে ভারত। প্রয়োজনে মিয়ানমারের সরকার প্রধানের সঙ্গে আবারো এনিয়ে কথা বলবেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, তিনিও মনে করেন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে হবে৷ মিয়ানমার সরকারপ্রধান যখন (ভারতের) নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তখন তাকে এ বিষয়ে বলেছেন এবং প্রয়োজনে আবারো বলবেন৷

‘‘আমি তাকে (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) বলেছি, রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও আবাসনে আপনারা সহায়তা করছেন৷ আসলে এদের প্রত্যাবসনে কফি আনান কমিশন যে ফমূর্লা দিয়েছেন সেটা অনুসরণ না করলে প্রত্যাবাসন হবে না, তারা গেলেও আবার ফেরত আসবেন৷ তখন তিনি (মোদী) বলেছেন, এ বিষয়ে তিনি মিয়ানমারের সরকার প্রধানের সঙ্গে কথা বলবেন৷”

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা- ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে নয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের আগস্টে সাত লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি হলেও তাতে অগ্রগতি নেই৷

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিরাপত্তা এবং সীমান্ত ব্যবস্থাপনাসহ সকল বিষয়ে দুই দেশ এখন অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলে বৈঠকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়৷ এছাড়া কার্যকর সীমান্ত ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন উভয় দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এই সফরে ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান, আইজিপি মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম, পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সোহাইল হোসেন খান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহম্মেদসহ ১৬ জন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ছিলেন৷

এসএইচ-০৫/১০/১৯ (শহীদুল ইসলাম, ডয়চে ভেলে)