আওয়ামী লীগ সহযোগী সংগঠন ঢেলে সাজাতে চায়

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের যুব সংগঠন যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

দলটির নেতারা বলেছেন, দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে ক্যাসিনো বাণিজ্য এবং টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে যুবলীগসহ তাদের কয়েকটি সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। এই পটভূমিতে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে সহযোগী সংগঠনগুলোতে নতুন নেতৃত্ব আনার জন্য নভেম্বরে কাউন্সিল করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের নেতারা উল্লেখ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের দলের সভানেত্রী হিসেবে এবার অনেকে বেশি যাচাই করে সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব বাছাই করবেন বলে তাদের ধারণা।

তবে মুল দলের নেতৃত্ব আইন অনুযায়ী সহযোগী বা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব বাছাই করতে পারেন কিনা- এই প্রশ্ন এখন অনেকে তুলছেন।

চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের শীর্ষ দু’জন নেতাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্য এবং টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে যুবলীগ এবং কৃষক লীগের কয়েকজন নেতা গ্রেফতার হয়েছে। আরও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে, তাদের ব্যাপারেও কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরা হচ্ছে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে।

কিন্তু আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এসব সংগঠনের সাথে মুল দলের সম্পর্ক নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে সংগঠনগুলোর বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্ব আনার কথা বলা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের একটি সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী নাজমা আকতার বলছিলেন, এখনকার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তাদের মুল দলের নেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহযোগী সংগঠনগুলো ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।

“কিছু বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে বিধায় কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই সংগঠনগুলোর ভিতরে যারা অন্যায়গুলো করেছে বা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাদের বিচারের সম্মুখীন করছেন।এবং সহযোগী সংগঠনগুলোকে আবার ঢেলে সাজানোর চিন্তা করছেন। চারটি সহযোগী সংগঠনের যে কাউন্সিল হতে যাচ্ছে, সেগুলোর নেতৃত্বে বিশাল পরিবর্তন আপনারা দেখবেন।এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।”

তিনি আরও বলেছেন, “আমাদের নেত্রী যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি নিজে নেতৃত্ব যাচাই বাছাই করবেন।উনি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে এবং উনার নিজস্ব কিছু উইং আছে, এগুলো কাজে লাগিয়ে তিনি তথ্য সংগ্রহ করে যাকে সভাপতি-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেবেন, তাদের ক্ষেত্রে পূর্বের তুলনায় বেশি যাচাই করবেন আরকি।”

যে সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব বিতর্কের মুখে পড়েছে বা বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে, এখন এই সহযোগীদের কাউন্সিল করে নেতৃত্ব পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। যুবলীগ,কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, এবং শ্রমিক লীগ- এই চারটি সংগঠনের কাউন্সিল হবে নভেম্বর মাসে।

এদিকে, ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে যুবলীগের কয়েকজন ধরার পরার পর সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীও ব্যাংক হিসাব জব্দ এবং তার বিদেশ যাত্রা নিষিদ্ধ করাসহ কিছু ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে।

কাউন্সিল সামনে রেখে যুবলীগের নেতারা রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করবেন। সেই সাক্ষাতে সংগঠনটির চেয়ারম্যানসহ বিতর্কিতদের নেয়া হচ্ছে না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, তাদের নেত্রী স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতৃত্ব চাইছেন, সেটা অনুভব করে সহযোগী সংগঠনগুলোর কাউন্সিলে প্রতিনিধিরা নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন বলে তারা মনে করেন।

“বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার যে চিন্তা এবং দৃষ্টিভঙ্গি, সেটা হচ্ছে, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কোনো অনৈতিক কাজে জড়িত থাকা যাবে না, এমন নেতৃত্ব তিনি চান। কাউন্সিলররা নেত্রীর চিন্তা বিবেচনায় নিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।”

ছাত্রলীগ এবং শ্রমিক লীগকে আওয়ামী লীগ তাদের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে দেখে থাকে। তাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই দু’টি সংগঠনের স্বাধীনভাবে কাজ করার কথা।

সেজন্য সম্প্রতি ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে দেয়ার বিষয়টি শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আলোচনা করেছেন। কিন্তু তাদের পদত্যাগ করতে বলার পর তারা সেটা করেছেন-এই বিষয়টি দৃশ্যমান।

যুবলীগসহ ৭টি সহযোগী সংগঠনকে স্বীকৃতি দেয় আওয়ামী লীগ। এই সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব কাউন্সিল নির্বাচন করার কথা বলা হয়।

তবে কার্যত এসব সংগঠনের নেতৃত্ব ঠিক করার দায়িত্ব দেয়া হয় মুল দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের গবেষক দিলীপ কুমার সরকার বলছিলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী দলগুলো সহযোগী বা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

কিন্তু তা মানা হচ্ছে না বলে তারা গবেষণায় পাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, তারা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সাথে সংগতি রেখে সংগঠনগুলো গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছেন। সেগুলো মেনেই তারা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।

এসএইচ-০৪/১৮/১৯ (কাদির কল্লোল, বিবিসি)