সরকারের আয় কমে ব্যয় বেড়েছে

সরকারের আয় কমে গেছে। অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টারে সরকার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। এই অবস্থায় সরকার ব্যায় মিটাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ২৩ হাজার ২১৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আগের বছর ব্যয় মিটাতে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি ঋণ নিলেও এবার ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিয়েছে। আর্থিক খাতের এই ত্রয়ী অবস্থায় বেসরকারি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ১১ শতাংশ। সেখানে তারা ঋণ দিতে পেরেছে মাত্র সাড়ে ১০ শতাংশ। আবার সঞ্চয়পত্রের উপর অতিরিক্ত করারোপ করায় সাধারণ মানুষের ভোগ ব্যয়ও কমেছে। সঞ্চয়পত্রে এক মাসের ব্যবধানে বিক্রি কমেছে ৬৬১ কোটি টাকা।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। পরের মাস আগস্টে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি আরো কমেছে। এ মাসে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। অথচ অনলাইন পদ্ধতি চালু হওয়ার আগে গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের শুরু অর্থাৎ ২০১৮ সালের জুলাই মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। সে হিসেবে ক্রমান্বয়ে নিম্নমুখী ধারায় হাঁটছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ আরএম দেবনাথ বলেন, সরকারি কর্মচারিদের বেতন বৃদ্ধি ও উচ্চ কয়েকটি প্রকল্পের জন্য সরকারের ব্যায় বেড়েছে। কিন্তু আয় বাড়েনি। ব্যাংক ও সেবাখাতের উপর নির্ভরশীল রাজস্ব আয় কমেছে। কারণ এ দুটি খাতেই সরকার সবচেয়ে বেশি আয় করে। এই অবস্থায় সরকার ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ব্যায় নির্বাহ করছে। আর সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণ কমেছে। আবার সঞ্চয়পত্রে বেশি করারোপ করায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে।

সরকারের উচিত ছিল সঞ্চয়পত্রে করারোপ না করা। কারণ সঞ্চয়পত্র হলো সাধারণ মানুষের সঞ্চয়। এই টাকার সুদে সাধারণ মানুষ তাদের ভোগব্যায় বাড়ায়। আর ভোগ বাড়লে উৎপাদন বাড়ে। উৎপাদন বাড়লে প্রবৃদ্ধি বাড়ে। তিনি বর্তমান প্রবৃদ্ধিরও সমালোচনা করে বলেন, এটা সরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি। এই প্রবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছছে না। যদি পৌঁছতো তবে বেসরকারি ক্রেডিট বাড়তো।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ১৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ১ লাখ ৩১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ঋণের স্থিতি ছিল ৩৭ হাজার ২৭২ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ৪৮ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা নিট ঋণ নেয়ার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। বিদায়ী অর্থবছরের পুরো সময়ে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ ছিল ২৬ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত জুলাইয়ে ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে (জাতীয় সঞ্চয় স্কিমসহ অন্যান্য) সরকারের ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৮ হাজার ৯৮ কোটি টাকা।

এদিকে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেট স্ট্যাটিক্স ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ, যোগাযোগসহ দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বেশ কিছু বড় প্রকল্প নেয়া হয়েছে গত এক দশকে। আর এসব উন্নয়ন প্রকল্পের বেশিরভাগই বৈদেশিক ঋণনির্ভর। এতে গত এক দশকে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি হয়েছে।

এসব ঋণের বড় অংশই দীর্ঘমেয়াদি। তবে বৈদেশিক ঋণের বড় অংশই দ্বিপক্ষীয়। ফলে উচ্চ সুদ ও কঠিন শর্তের এসব ঋণের বিপরীতে সুদ ব্যয়ও গত ১০ বছরে তিনগুণ বেড়েছে। প্রদিবেদন অনুযায়ী, ২০০৮ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩৪০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ১০ বছর পর ২০১৮ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫ হাজার ২১২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অর্থাৎ, এক দশকে বৈদেশিক ঋণ প্রায় সোয়া দুইগুণ হয়েছে।

এসএইচ-০৭/০২/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : আমাদের সময়.কম)