শিগগিরই কমছে না পেঁয়াজের ঝাঁঝ!

দেশে শিগগিরই পেঁয়াজের দাম কমার কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

তারা বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ছাড়াও দেশী পেঁয়াজের মজুদ কমে যাওয়ায় আরো কয়েক দিন দাম চড়া থাকবে।

গত ২৯শে সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার পর থেকেই দেশের পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে।

এর আগে ৫০-৬০ টাকায় কেজি দরে বিক্রি হলেও মাসখানেক ধরে দাম একশ’র নিচে নামেনি। বরং গত সপ্তাহেও দেড়শ টাকারও বেশি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে খুচরা বাজারে।

কাওরান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী কালাম শেখ বলেন, “আজকে আমরা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ১২০ টাকা আর বার্মারটা বিক্রি করছি ১০৬ থেকে ১০১৮ টাকায়”।

একই বাজারের মিনহাজ বাণিজ্যালয়ে পেঁয়াজের ব্যবসা করেন মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান।

তিনি বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হওয়ার কারণে দাম বেড়েছে। “দাম বাড়ছে কারণ হইছে দেশী পেঁয়াজ শেষের দিকে, আর ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বর্তমানে মার্কেটের বাইরে। মিশর থেকে পেঁয়াজ আসছে সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে।”

“এখন বার্মার পেঁয়াজ আছে, আর দেশী পেঁয়াজটা আছে আমাদের ঘরে,” বলেন রহমান।

জানুয়ারিতে নতুন দেশী পেঁয়াজ বাজারে আসার পর দাম কিছুটা কমতে পারে বলে জানান মি. রহমান।

নভেম্বরের শুরুর দিকেই বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসা শুরু হয়। কিন্তু মি. রহমান বলছেন, এবছর শেষে দিকে বৃষ্টি হওয়ার পেঁয়াজের ফলন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে পেঁয়াজের এমন দামে নাভিশ্বাস উঠছে ভোক্তাদের।

কাওরান বাজারের সবজি বাজারে এসেছেন লুৎফা পারভিন। কেনার জন্য লাউ নেড়েচেড়ে দেখছেন তিনি। পেঁয়াজের প্রসঙ্গ আসতেই একটু যেন আঁতকে ওঠেন লুৎফা পারভিন। বলেন, দরকার হলেও বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনতে পারছেন না তিনি।

“অবাকের পর অবাক হচ্ছি যে পেঁয়াজের দাম এতো বাড়তি। আজ কিনি নাই, কারণ পেঁয়াজের দাম দেখে আমার কেনার সাহসে কুলায় নাই,” বলেন তিনি।

একই কথা বলছিলেন বাজার করতে আসা আনোয়ারা বেগম। তিনি জানান, পেঁয়াজের দাম বাড়ার এর ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক কমিয়ে দিয়েছেন তিনি।

“আগে আধা কেজি খাইতাম, এখন আধা কেজিরও অর্ধেক খাই,” বলেন আনোয়ারা বেগম।

শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ও রসুন সমিতির প্রচার সম্পাদক বলেন মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, মিয়ানমার থেকে যে পেঁয়াজ আসছে তা খুবই সামান্য। মিশর থেকেও পেঁয়াজ সেভাবে না আসায় পেঁয়াজের বাজার বাড়ছে প্রতিদিন।

“মিয়ানমার থেকে যে পেঁয়াজ আসছে তার ৩০ শতাংশই পচে যাচ্ছে। কারণ আমাদের দেশে পেঁয়াজ সংরক্ষণের বড় ধরণের কোন ব্যবস্থা নেই,” বলেন মি. ইসলাম।

তিনি বলেন, মিশর থেকে যেভাবে পেঁয়াজ আসছিল সেটিও আর আগের মতো আসছে না।

“প্রতিদিনই পেঁয়াজের বাজার এক টাকা দুই টাকা করে বাড়ছে, কমার কোন সম্ভাবনা দেখছি না।”

কিন্তু সরকার ব্যবস্থা নিলে এক মাস আগেই পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারতো বলেও অভিযোগ করেন মিস্টার শহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, পেঁয়াজের যে ঘাটতি আছে তা সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয় আগে থেকেই জানে।

তবে, পেঁয়াজের ঘাটতির তথ্য আগে থেকে জানার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

তিনি বলেন, “এরআগে থেকেই ধারণা ছিল এমনটা তো আমাদের জানা নেই। ভারত যদি পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ না করতো তাহলে তো দামটা এই পর্যায়ে যেতো না।”

বাজারে পেঁয়াজ যে দামে বিক্রি হচ্ছে তা এতো দামে বিক্রি হওয়ার কথা নয়। আর এ কারণেই বাজার নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজ আমদানিসহ, বাজারে নজরদারি চলছে বলেও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “মিশর থেকে আমদানির পথে থাকা ১০-১২ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ তিন-চার দিনের মধ্যে পৌঁছাবে বাংলাদেশে। এছাড়া দক্ষিণ ভারত থেকেও ৯ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আসার কথা রয়েছে।”

এসএইচ-০৮/০৪/১৯ (মুন্নী আক্তার, বিবিসি)