সকল বয়স্ক মানুষের জন্য সার্বজনীন পেনশন!

দেশে ৬৫ বছরের উপরে ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ কোন ধরনের পেনশন বা বয়স্ক ভাতা পান না।

সকল বয়স্ক মানুষের জন্য একটি সার্বজনীন পেনশন স্কিম কিভাবে চালু করা যায়, সেনিয়ে একটি প্রস্তাব তুলে ধরেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ।

এখন দেশে মূলত সরকারি ও অল্প কিছু ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মজীবীরাই পেনশন পান।

কিন্তু শেষ জীবনে আর্থিক চাহিদা থাকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মী সহ সকলের।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে দেশে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা এখন ৮০ লাখ।

তাদের মধ্যে যারা বেসরকারি চাকুরে ছিলেন তাদের মাত্র দশ শতাংশ গ্রাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ পাচ্ছেন।

কিন্তু বাংলাদেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতেই কাজ করেন ৮৭ শতাংশ মানুষ। তারা কোন কিছুর আওতায়ই পড়েন না।

বয়সকালে সবাই যেন আর্থিক এবং সামাজিক সুরক্ষা পান, সেজন্য একটি সার্বজনীন পেনশন স্কিম খুবই জরুরী বলে মনে করছেন সিপিডির ডিস্টিংগুইশড ফেলো ড: মুস্তাফিজুর রহমান।

সেটি ব্যাখ্যা করে তিনি বলছেন, “যেমন একটা পেনশন স্কিম করা হল। যারা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন তারা সেখানে কিছু অর্থ দেবেন। যারা তাদের কাজে নিচ্ছে তারাও কিছু দিলেন।

যারা নিজেরা সেলফ এমপ্লয়েড তারা এবং সরকারও এতে অর্থ যোগ করলো। এই যে তহবিল হবে সেটি বিভিন্ন যায়গায় বিনিয়োগ করা হবে। সেখানেও অর্থ যোগ হল। সবাই যখন অবসরের বয়সে যাবেন তখন তাদের সেই অর্থ দেয়া হবে।”

সার্বজনীন পেনশনের জন্য একটি নির্দিষ্ট আইন এবং এর তহবিলের কার্যক্রমের জন্য আলাদা কর্তৃপক্ষ করার কথা বলছেন তিনি।

বাংলাদেশের প্রতিবেশী অন্তত তিনটি দেশে নানা আদলে এমন সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু আছে।

দেশে ৬৫ বছরের উপরে দরিদ্র বয়স্কদের ৫০০ টাকা করে মাসিক ভাতা দেয় সরকার।

তবে পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবেই ৬৫ বছরের উপরে ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ কোন ধরনের পেনশন ও বয়স্ক ভাতা কিছুই পান না।

এমন ব্যক্তি থেকে শুরু করে যারা কোনদিন কাজ করেননি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি পর্যন্ত সকল মানুষকে এমন সার্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনা কিভাবে সম্ভব?

বয়স্কদের নিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হেল্পএইজ ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রধান রাবেয়া সুলতানা। তিনি বলছেন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোনটি।

তিনি বলছেন, “এমন ফান্ড ট্যাক্স থেকে হয় সেটা আমরা জানি। কিন্তু এখানে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছাটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। এখন যেসব সামাজিক সুরক্ষা আছে সেখানে পক্ষপাতিত্ব রয়েছে। এটা স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, তাদের আত্মীয়স্বজন, বড়লোকরা পায়। বহু চেয়ারম্যানের মা আছেন যারা বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন কিন্তু তারা সেটি পাওয়ার যোগ্য নন।”

বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২ বছর। ২০৩১ সালের মধ্যে দেশে দুই কোটির বেশি মানুষের বয়স হবে ৬০ এর উপরে।

সেটি নিয়ে এখনি ভাবার সময়। সরকারের দিক থেকেও অবশ্য সার্বজনীন পেনশনের একটি উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে।

২০২০ সাল থেকে শুরু হওয়া ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এটি শুরু করতে চায় সরকার।

এসএইচ-০৪/০৭/১৯ (শাহনাজ পারভীন, বিবিসি)