আ’ লীগের এমপিসহ ১১৮ জনের বিষয়ে দুদক কঠোর অবস্থানে

দুদকের অনুসন্ধানকে তালিকাভুক্ত সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা ‘ভৌতিক’ বলে দাবি করেছেন৷ কেউ আবার আগে ‘দায়মুক্তি’ পেয়েছেন দাবি করে অনুসন্ধান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ তবে দুদক চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘‘দায়মুক্তি বলে কিছু নেই৷ তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই অনুসন্ধান হচ্ছে৷’’

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর এর সঙ্গে জড়িতদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক৷ সর্বশেষ চলতি মাসে যে ১১৮ জনের সম্পদের ব্যাপারে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চেয়েছে, তাদের মধ্যে শাসক দল আওয়ামী লীগের চারজন সংসদ সদস্য রয়েছেন৷

ওই চারজন সংসদ সদস্য হলেন: নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনের নজরুল ইসলাম বাবু, ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসনের নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনের পঙ্কজ দেবনাথ ও চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের শামছুল হক চৌধুরী৷ শামসুল হক চৌধুরী জাতীয় সংসদের হুইপ৷ নজরুল ইসলাম বাবুর সাথে তার স্ত্রী সায়মা আফরোজ এবং নুরুন্নবী শাওনের সঙ্গে তার স্ত্রী ফারজানা চৌধুরীও আছেন তালিকায়৷

দুদক সূত্র জানায়, তাদের মধ্যে নজরুল ইসলাম বাবু দম্পতির ৫১৩ কোটি টাকা, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন দম্পতির এক হাজার ৮০০ কোটি, পঙ্কজ দেবনাথের এক হাজার ৩৮৪ কোটি ও হুইপ শামছুল হক চৌধুরীর দুই হাজার ২০০ কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদের’ ব্যাপারে অনুসন্ধান করছে তারা৷

এই তালিকায় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে আটক জি কে শামীম, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভুইয়া ছাড়াও সাবেক সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা ছাড়াও ঠিকাদার, সরকারি কর্মকর্তা, প্রকৌশলী এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নাম রয়েছে৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে দুদকের পক্ষে তালিকা পাঠিয়েছেন দুদকের পরিচালক ইকবাল হোসেন৷ চিঠিতে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্তরা অবৈধভাবে ঘুস দিয়ে ঠিকাদারী,অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত ও ক্যাসিনো ব্যবসা করে জ্ঞাত আয়ের বাইরে শত শত কোটি টাকা আয় ও বিদেশে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ আছে৷ তাই তাদের ব্যাংক হিসাব এবং অন্যান্য তথ্য ও রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে৷ দুদকের সাত সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম অনুন্ধানের কাজ করছে৷

দুদকের অনুসন্ধান সম্পর্কে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু দাবি করেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে কোনো অনুসন্ধান হচেছ না৷ এর আগে অনুসন্ধান হয়েছিল৷ ২০১৮ সালের মে মাসে দুদক চিঠি দিয়ে আমাকে ক্লিয়ার করে দিয়েছে৷ আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের সত্যতা পায়নি৷’’ কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো তালিকার কপি ধরে তার নাম এবং ক্রমিক (১১০) জানালে তিনি বলেন, ‘‘আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে সারাক্ষণ মিথ্যা অভিযোগ দেয় দুদকে আর দুদক সেটা থেকে তালিকা করে৷ ওটা হলো সেই তালিকা৷ আমার কোনো অবৈধ সম্পদ থাকার প্রশ্নই ওঠে না৷ আগেই আমার অনুসন্ধান শেষ হয়েছে৷’’

কিন্তু দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘‘২০১৮ সালে কী হয়েছে সেটা আমাদের বিবেচ্য নয়৷ আমরা এখন যেসব তথ্য পেয়েছি তার ভিত্তিতে অনুসন্ধান করেছি৷ উনি ২০১৮ সালে ভালো ছিলেন, এখন খারাপ হতে পারেন৷ আবার কেউ আগে খারাপ ছিলেন এখন ভালো হতে পারেন৷’’

তিনি বলেন, ‘‘কেউ দাবি করতে পারেন৷ কিন্তু আমাদের কাছে দায়মুক্তি বলে কিছু নেই৷ আগে কেউ দায়মুক্তি পেয়েছেন কিনা সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়৷ এখন কী তথ্য আছে সেটাই আমরা বিবেচনা করি৷’

সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন দুদকের এই অনুসন্ধানকে ‘ভৌতিক গল্প’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি ১৮ বছর ধরে ব্যবসা করি৷ আমার দু’টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আছে৷ দুদক আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চেক করলে দেখবে আমার ১০ কোটি টাকার বেশি নেই৷ আবার আমার অনেক ব্যাংক লোনও আছে৷ তাই আমার প্রকৃত অর্থে দুই-আড়াই কোটি টাকা আছে৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘এ নিয়ে দুদক আমাকে কোনো চিঠি দেয়নি৷ একই গল্প আসলে সংবাদমাধ্যমে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লেখা হচেছ৷’’

এর জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘আমরা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই আমাদের অনুসন্ধান শুরু করেছি৷ এটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া৷ আর এটা চলবে৷ আমরা থামবো না৷’’

অনুসন্ধানের পর অতীতের মতো আর খবর পাওয়া যাবে না এমন হতে পারে কিনা জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘সেরককম হবে না৷ আমাদের কাছে সব খবরই আছে৷ সব খবর পাওয়া যাবে৷’’

এদিকে সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ ও হুইপ শামছুল হক চৌধুরীকে বার বার ফোন করা হলেও তারা ফোন ধরেননি৷

এসএইচ-০৮/২০/১৯ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)