পেঁয়াজ স্বাভাবিক না হতেই দেশজুড়ে লবনকান্ড

দেশে লবণের কোন সংকট নেই, এনিয়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে সরকার।

কিন্তু তারপরেও মঙ্গলবার লবণ কিনতে ব্যাপক ভিড় হয়েছে বাজারে। সারা দেশ থেকেই আতংকে মানুষজনের লবণ কেনার খবর পাওয়া গেছে। লবণের দাম বাড়ানোর জন্য কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

ঢাকার একটি বাজারে মুদি দোকানের মালিক বেল্লাল হোসেন বলেন, তিনি এক সপ্তাহে যে লবণ বিক্রি করতেন তা একদিনেই বিক্রি হয়ে গেছে।

“সবাই অতিরিক্ত নিছে। যে এক কেজি নিতো সে পাঁচ কেজি নিছে। যে পরিমাণ লবণ আমি এক সপ্তাহে বিক্রি করতাম আমি তা একদিনে বিক্রি করছি।”

সরকার বলছে, লবণ উৎপাদনকারী মূল এলাকা কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত লবণের মজুদ রয়েছে।

দেশ নিজেই লবণ উৎপাদন করে এবং তা পরিমাণে যথেষ্টই। লবণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আমদানির উপর নির্ভরশীল নয়।

দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলোও যথেষ্ট মজুদ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

কিন্তু তারপরও কেন বাজারে ছুটে গেলেন ক্রেতারা?

লবণ কিনতে বাজারে এসেছিলেন রাজিয়া আক্তার। তিনি বলেন, “এই যে টিভিতে দেখতেছি। তারপর আত্মীয়-স্বজনরা ফোন করে বলছে লবণ কিনে রাখতে। এই যে এখানে আসার আগেও আমার জা ফোন দিয়ে বলছে লবণ কিনে রাখেন। লবণ পাওয়া যাবে না।”

দেখা যাচ্ছে লবণের ক্ষেত্রে অন্যদের কথা শুনেই সবাই বাজারে গেছেন বলে মনে হচ্ছে। সরকারও বলছে গুজব ছড়ানো হয়েছে।

ঢাকার বনানী এলাকার গৃহকর্মী ফরিদা আক্তার বলছেন, পেঁয়াজ ছাড়া খাবার খাওয়া গেলেও লবণ ছাড়া কিভাবে খাবেন?

“অনেক কিছু ছাড়া ভাত-তরকারি খাওয়া যায়। কিন্তু লবণ ছাড়াতো খাওয়া যাবে না। পেঁয়াজের দাম এত বেশি! এখন যদি লবণের দামও বাড়ে অথবা বাজারে না পাওয়া যায়?”

মাত্র দুই দিন আগেও বাজারের সবচাইতে আলোচিত বিষয় ছিল পেঁয়াজ। কয়েক সপ্তাহ জুড়ে বাজারে এর অতিরিক্ত দাম নিয়ে ক্রেতারা হিমশিম খেয়েছেন।

সেপ্টেম্বরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এই সংকটের শুরু।

এখন পেঁয়াজের সরবরাহ আসতে শুরু করেছে এবং দামও কমতে শুরু করেছে। কিন্তু এর প্রভাব বাজারে এখনো রয়ে গেছে।

ভোক্তা অধিকার বিষয়ক সংগঠন কনজিউমার এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ভুঁইয়া বলছেন, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি সঠিকভাবে সামাল দিতে পারেনি সরকার।

তিনি বলছেন, “সরকার পিঁয়াজের দাম নিয়ে যা বলেছে তা ধরে রাখতে পারেনি। বিষয়টা ক্রেতাদের মাথায় কাজ করেছে। সেজন্য মানুষ এইভাবে লবণ কিনেছে।”

“দেখেন বাজারে সবজির দাম বেশি। বলতে গেলে অনেকের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তারপর চালের দাম, পিঁয়াজের দাম, রসুনের দাম ও মশলার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এইসব কারণে বাজারে একটা অস্থিরতা চলছে। সেটারই প্রভাব মানুষের মনে পড়েছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির শিক্ষক সায়মা হক বিদিশা বলছেন, গুজবের প্রভাব আরও বেশি কাজ করে যখন বাজার ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থাহীনতার তৈরি হয়।

তিনি বলছেন, “সাধারণ মানুষ দেখছে যে বাজার ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ করছে না। বাজার ব্যবস্থার উপর তাদের আস্থাহীনতার কারণে দেখা যায় যখন কেউ কোন অসৎ উদ্দেশ্যে গুজব ছড়িয়ে দেয় মানুষ সেটি গ্রহণ করে। কারণ তারা আগেই দেখেছে যে পেঁয়াজের ক্ষেত্রে এরকম হয়েছে।”

“এর ফল স্বরূপ যেটা হচ্ছে আমার এক কেজি কেনার কথা কিন্তু আমি যদি তিন কেজি কিনি আর বেশিরভাগ মানুষই যদি আমার মতো আচরণ করে তাহলে দেখা যাবে বাজারে যদি সংকট নাও থাকে একটা কৃত্রিম সংকট আমরা নিজেরাও তৈরি করে ফেলি।”

এসএইচ-০৪/২১/১৯ (শাহনাজ পারভীন, বিবিসি)