রহিঙ্গা হত্যাকান্ডের তথ্য-প্রমাণ বাংলাদেশে আছে

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলায় বাংলাদেশেরও কাজ করার সুযোগ আছে৷ আর এটা করতে গিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে তেমন প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন না বিশ্লেষকরা৷

ওআইসির পক্ষে গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের ইন্টারন্যালনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-তে যে মামলা করেছে তার শুনানি হবে নেদারল্যান্ডসের হেগে, আগামী ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর৷ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এই মামলায় সেখানকার সামরিক জান্তার পক্ষে শুনানিতে অংশ নিতে ওই সময়ে হেগে যাচ্ছেন অং সান সূ চি৷

অন্যদিকে আর্জেন্টিনায় সরাসরি সূ চি’র বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-র তদন্তও শুরু হচ্ছে৷ সব মিলিয়ে মিয়ানমার এখন রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে চাপের মুখে রয়েছে৷

বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে সব সময়ই মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে গুরুত্ব দিয়েছে৷ আর এটাকে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সমস্যা মনে করে না৷ এটাকে মিয়ানমারের সমস্যা এবং আন্তর্জাতিক সমস্যা মনে করে৷ তাই আইসিজেতে মামলা হওয়ার পর বাংলাদেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে৷ কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই অবস্থানের মধ্যেও বাংলাদেশ ভূমিকা রাখতে পারে৷ মামলায় তথ্য-প্রমাণ ও ডকুমেন্ট দিয়ে সহায়তা করতে পারে৷

আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘এটা পরিস্কার যে, আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে সেখানে বাংলাদেশ কোনো পক্ষ নয়৷ কিন্তু মিয়ানমারে যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার অনেক প্রমাণ, তথ্য এবং ডকুমেন্ট বাংলাদেশে আছে৷ মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে সেখান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে ১০ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে৷ তারাই নির্যাতন, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বড় প্রমাণ৷ তাই বাংলাদেশ এখন তথ্য ও ডকুমেন্ট দিয়ে সহায়তা করতে পারে৷’’

মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে৷ আমরা রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি৷ আর সেখানে যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে তার প্রমাণ আমাদের হাতে আছে৷ মানবাধিকার ও নৈতিক দিক দিয়েও আমাদের সেই প্রমাণ তুলে ধরার দায়িত্ব আছে৷ আর এটা তো আমরা সরাসরি দেবো না৷ তাই মিয়ানমার অফিসিয়ালি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রশ্ন তুলতে পারবে না৷’’

এদিকে মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক এটাশে ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহিদুল হক বলেন, ‘‘এটাই বাংলাদেশের মোক্ষম সময়৷ আমরা তো রোহিঙ্গা সংকটের কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি৷ আর ওআইসি’র সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে আমরা ওআইসির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্য-প্রমাণ দিতে পারি৷ সবচেয়ে বড় কথা হলো, বাংলাদেশ ফ্রন্টলাইন স্টেট৷ এখানে অনেক তথ্য-প্রমাণ আছে৷ শুধু এবারের নয়৷ এর আগেও রোহিঙ্গারা এসেছে৷ এখানে আইসিসিও কাজ শুরু করবে৷ আগে আরো অনেক তদন্তের কাজ হয়েছে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ কিন্তু রাষ্ট্র হিসেবে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কখনোই অবস্থান নেয়নি৷ বাংলাদেশ চেয়েছে তারা রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাক, সুসম্পর্কও থাকুক৷ তাই মামলা হওয়ার পরও বাংলাদেশ সতর্কভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে৷ কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশ ওআইসি’র মাধ্যমে গাম্বিয়াকে সহায়তা করতে পারবে না, তা নয়৷ এবং এটা করা উচিত৷’’

এদিকে রোহিঙ্গা নির্যাতন ও গণহত্যার ব্যাপারে আইসিসি বাংলদেশে অফিস খুলে তদন্ত শুরু করবে৷ তার প্রক্রিয়া এখন চলছে৷ তদন্তের অনুমতি পাওয়ার পর এ নিয়ে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে একটা চুক্তি করেছে৷ তাতে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ৷

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্টের পর থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে নির্যাতনের শিকার হয়ে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে৷ এর আগেও এসেছে৷ সব মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদে আছে৷’’

এসএইচ-০৪/২২/১৯ (অনলাইন ডেস্ক, তথ্য সূত্র : ডয়চে ভেলে)