সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমলে সরকারের ঋণের বোঝা কমবে!
সঞ্চয়পত্রের উপর চাপ কমলে ঋণের অতিরিক্ত বোঝা থেকে বাঁচবে সরকার, এমনটা বলছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ বাংকের তথ্য বলছে, টানা চার মাস ধরে সঞ্চয়পত্র কেনার হার কমছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নভেম্বরে প্রকাশিত তথ্য মতে, গত বছর এই সময়ের তুলনায় সঞ্চয়পত্র কেনার হার ৮১.৩৭% কমেছে। টাকার অংকে যা ৩৫০০ কোটি টাকার বেশি।
অর্থনীতিবিদরা অবশ্য এই পরিবর্তনকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। তারা বলছেন, সঞ্চয়পত্র নির্দিষ্ট এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সুরক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। তবে এর সুযোগ অনেক উচ্চ বিত্তরাও নিয়ে থাকে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “সবাই যদি সঞ্চয়পত্রের উপর ঝুঁকে পড়ে তাহলে তো হবে না। বাড়তি সুদ তো সরকারকেই দিতে হচ্ছে।”
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মাসুদা লাবনী। তিনি জানান, চলতি মাসের শুরুতে সঞ্চয়পত্র কিনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু টিন সার্টিফিকেট না থাকা আর কর আরোপের নতুন নিয়মের কারণে ফিরে এসেছেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমি যে টাকা বেতন পাই সেটা বছর শেষে আয়করের আওতায় পড়ে না। কিন্তু এক লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনলে সেখান থেকে কর দিতে হবে।”
বাবার পেনসনের টাকা দিয়ে কিছুদিন আগে সঞ্চয়পত্র কিনতে গিয়েছিলেন চট্টগ্রামের পাভেল সিদ্দিকী। কিন্তু পুরো টাকার সঞ্চয়পত্র না কিনে অর্ধেক টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন তিনি।
কারণ হিসেবে মি. সিদ্দিকী বলেন, নতুন করে কর আরোপ এবং পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলে তার উপর উৎসকর দ্বিগুন করার কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, “আগে লাখে এক হাজার বা ১১০০ টাকা মুনাফা পেতাম। এখন ৫% উৎস কর আরোপ করায় সেটা যোগ করার পর হয়েছে ৭০০-৮০০ টাকা। মুনাফা থেকে ১০% কেটে নিলে সেখানেও আরো ১০০ টাকা কমে গেল।”
“তাহলে, লাভ তো থাকছে না,” বলেন তিনি।
তবে নানা জটিলতা আর কড়াকড়ি আরোপের পরও নিরাপদ বিনিয়োগ হওয়ার কারণে সঞ্চয়পত্র কেনার কথা জানিয়েছেন নাদিরা জাহান।
তিনি বলেন, “যাদের মাসের শেষে একটা নির্দিষ্ট আয় দরকার তাদের জন্য সঞ্চয়পত্র ভাল। এছাড়া নিশ্চিতও বটে।”
এদিকে, সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ায় এর থেকে সরকারের অর্থ সংগ্রহও কমে যায়।
এ অবস্থায় দেশে মেট্রোরেল এবং পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় প্রকল্পে অর্থায়নে ব্যাংকের উপর সরকারের নির্ভরশীলতা বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ ধরণের অবস্থাও নেতিবাচক বলে উল্লেখ করেছেন অর্থনীতিবিদ ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, এতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিনিয়োগ কমে যায়।
“ব্যাংকগুলো তো সরকারকেই ঋণ দিতে চাইবে। কারণ সেটা নিশ্চিত। তাহলে সরকারই যদি ঋণ নেয় বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা কোথায় যাবে?”
এসব কারণে পুঁজি সংকট তৈরি হওয়া এবং বিনিয়োগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয় বলেও হুঁশিয়ার করেন ড. ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, অর্থ সংগ্রহের সরকারের অভ্যন্তরীন তিন উৎস যথা রাজস্ব, ব্যাংক এবং সঞ্চয়পত্র – এই সবগুলো ক্ষেত্রেই ভারসাম্য করতে হবে।
এসএইচ-০৯/০১/১৯ (মুন্নী আক্তার, বিবিসি)