নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদা কার্যকর হয়নি!

দেশে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করার চূড়ান্ত রায়ের ২০ বছর পরও সেই রায়ের ১২ দফা নির্দেশনার একটি ছাড়া বাকিগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। সেজন্য হতাশা প্রকাশ করেছেন মামলাটির বাদী সাবেক বিচারক মাসদার হোসেন।

আইনজীবীরা বলেছেন, বিচার বিভাগের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাসহ আরো কিছু বিষয় এখনও বাস্তবায়ন না হওয়ায় মামলার জট বা বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা কমানো সম্ভব হচ্ছে না।

সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী বিচারাধীন মামলার সংখ্যা এখন প্রায় ৩৬ লাখ।

বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করার রিট মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে চূড়ান্ত রায় হয়েছিল ১৯৯৯ সালে।

১৯৯৪ সালে সেই মামলাটি করেছিলেন জেলা জজ ও জুডিশিয়াল এসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মাসদার হোসেন। তিনি এখন অবসরে রয়েছেন।

রায়ের আট বছর পর ২০০৭ সালে মূল নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন করে বিচার বিভাগকে আলাদা করা হয়েছিল। কিন্তু আনুষঙ্গিক বিষয়গুলোতে এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতার প্রশ্নে নির্দেশনাগুলো এখনও কার্যকর করা হয়নি।

মাসদার হোসেন বলছেন, ২০ বছরেও রায় পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় তার মধ্যে কিছুটা হতাশা রয়েছে।

“এই বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ মামলায় যে ১২ দফা নির্দেশনা এসেছিল, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নির্দেশনা ছিল যে, বিচার বিভাগকে প্রশাসন থেকে আলাদা করতে হবে। সেটা হয়ে গেছে। ফলে একটা সন্তোষজনক অগ্রগতি ইতিমধ্যেই সাধিত হয়েছে।”

“তবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে বাকি যে নির্দেশনাগুলো ছিল, সেগুলোতে সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়নি। একটিমাত্র নির্দেশনা ছাড়া বাকিগুলো আজও কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। সেই দৃষ্টিতে ভাবলে কিছুটা হতাশা থাকলেও আমি আশাবাদী যে বিচার বিভাগের রায় পুরোপুরি কার্যকর হবে।”

রায়ের পর গত ২০ বছরে কয়েকটি সরকার ক্ষমতায় ছিল। তবে এখন টানা ১১ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলছিলেন, বিচার বিভাগ তাদের স্বাধীনতা নিয়ে পৃথকভাবেই কাজ করছে।

তিনি দাবি করেছেন, অন্যান্য বিষয়গুলো বাস্তবায়নের ব্যাপারে তাদের সরকার কাজ করছে।

“যেদিন থেকে পৃথকীকরণ রায় হয়েছে, সেদিন থেকেই এটাকে পূর্ণাঙ্গ রুপ দেয়ার চেষ্টা সরকার করে যাচ্ছে এবং করবে।”

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না থাকায় বিচার বিভাগকে লোকবল নিয়োগ থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে নির্বাহী বিভাগ বা সরকারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

আইনজীবীরা বলছেন, এর ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং মামলার জট বা বিচার প্রক্রিয়ায় দীঘসূত্রিতা কমছে না।

সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী জান্নাতুল মরিয়ম বলছেন, বিচার বিভাগে লোকবলের অভাবকেই তারা দীর্ঘসূত্রিতার বড় কারণ হিসেবে দেখছেন।

“মামলার সংখ্যা অনেক বেশি, তার তুলনায় বিচারক এবং আদালতের সংখ্যা অনেক কম-এসব দীর্ঘসূত্রিতার মূল কারণ,” বলেন তিনি।

প্রায় ৩৬ লাখ বিচারধীন মামলার মধ্যে ৩০ লাখেরও বেশি মামলা রয়েছে নিম্ন আদালতে। ফলে হাজার হাজার মামলা বছরের পর বছর ঝুলে থাকছে বলে আইনজীবীরা বলছেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্য হচ্ছে, এই দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে লোকবল বাড়ানোসহ আরো কিছু পদক্ষেপ তারা নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, “ন্যাশনাল জাস্টিস অডিট করিয়েছিলাম। তাতে দেখা যাচ্ছে, ৩৬ লাখের কথা যে বলা হয়, আসলে ৩০ থেকে ৩১ লাখের বেশি মামলা পেন্ডিং নাই। কিন্তু এতো মামলাই বা থাকবে কেন? এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সর্বস্তরে লোকবল নিয়োগসহ সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।”

আইনমন্ত্রী বলেছেন, কিছু বিষয়ে বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ এবং আইন সভা-একসাথে কাজ করা উচিত।

এসএইচ-০৫/০৪/১৯ (কাদির কল্লোল, বিবিসি)