কমিটি গঠন নিয়ে আওয়ামী লীগে চাপা ক্ষোভ!

কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলন ও কমিটি গঠন শেষ পর্যায়ে৷ তবে নতুন কমিটি নিয়ে আছে ক্ষোভ৷ সম্মেলনের সময় সংঘর্ষও হয়েছে বেশ কিছু এলাকায়৷

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন ২১ ও ২২ ডিসেম্বর৷ সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে ২০১৬ সালে৷ মূলত সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন তা এখন আওয়ামী লীগে মূল আলোচনায় পরিণত হয়েছে৷

কেন্দ্রীয় সভাপতি পদে কোনো পরিবর্তন যে আসবে না তা নিশ্চিত৷ তবে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসতে পারে৷ বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথায় তার ইঙ্গিত পাওয় যায়৷ তিনি মঙ্গলবারও বলেছেন, ‘‘নেত্রী যদি সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন কাউকে আনেন তাহলে আমার কোনো আপত্তি থাকবে না৷”

তবে তিনি নিজেকে সাধারণ সম্পাদক পদে কর্মক্ষম মনে করেন৷ তার কথা, একই সঙ্গে মন্ত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের মতো শারীরিক সক্ষমতা তার রয়েছে৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসবেন সে ব্যাপারে নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত৷ তবে আমি কখনো বলিনি যে আমি দায়িত্ব নিতে অনাগ্রহী৷”

এদিকে আওয়ামী লীগে একজন ‘ফুলটাইম’ সাধারণ সম্পাদকের দাবি প্রবল হচ্ছে৷ বিশেষ করে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে এই দাবি আরো প্রবল হচ্ছে৷ দলটির একটি অংশ মনে করে বড় দল হিসেবে সাধারণ সম্পাদকের যে পরিমান সাংগঠনিক কাজ থাকে তাতে তাকে অন্যকোনো দায়িত্ব না দেয়াই ভালো৷ একই সঙ্গে মন্ত্রী এবং দলের সাধারণ সম্পাদক একজন হলে তিনি দলের প্রতি ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারেন না৷ নেতা-কর্মীরাও তাকে সহজে পান না৷ অনেক সাংগঠনিক কাজ ঝুলে থাকে৷

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এবার আওয়ামী লীগ একজন ফুলটাইম সাধারণ সম্পাদক পেতে পারে৷ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মনোভাবও সেরকমই মনে হয়৷ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় দলীয় বৈঠবেও পূর্ণকালীন সাধারণ সম্পাদকের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন৷ তবে শেষ পর্যন্ত কী হবে তা শেখ হাসিনার উপরই নির্ভর করছে বলে জানান তারা৷

আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা ও সহ-সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির মনে করেন, ‘‘কেউ প্রকাশ্যে বলুক আর না বলুক আওয়ামী লীগে একজন ফুলটাইম সাধারণ সম্পাদকের দাবি প্রবল হচ্ছে৷ আমি মনে করি একই সঙ্গে মন্ত্রী এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে গেলে দলকে তিনি ঠিকমত সময় দিতে পারেন না৷ নেতা-কর্মীরা সহজে তার কাছে পৌঁছতে পারেন না৷ এটা একটা সংকট৷ তাই এবার অনেকেই ফুলটাইম সাধারণ সম্পাদকের কথা বলছেন৷”

তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘‘বিচ্ছিন্নভাবে হয়তো কেউ কেউ দলে ফুলটাইম সাধারণ সম্পাদকের কথা বলছেন৷ কিন্তু এটা দলের কোনো সিদ্ধান্ত বা ভিতরের আলোচনা কীনা আমার জানা নেই৷ দলের ভিতরের আলোচনায় আমি এ ধরনের কথা শুনিনি৷”

আওয়ামী লীগের আরেকজন সাংগঠনিক সম্পাদক এবং নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগে কোনো পার্ট টাইম নেতা নাই, সবাই ফুল টাইম৷ সরকার শক্তিশালী হলে দলও শক্তিশালী হবে৷ ফলে শক্তিশালী সরকার ও দল গঠনে আমরা কাজ করছি৷”

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলা ৭৫টি৷ এর মধ্যে ২৮টি জেলার সম্মেলন এবং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঠিক করা হয়েছে৷ অধিকাংশ জেলায়ই পূর্নাঙ্গ কমিটি হয়নি৷ ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি জেলাগুলোর সম্মেলন করা হবে৷ উপজেলা পর্যায়েও কমিটি গঠন প্রায় শেষ পর্যায়ে৷ তবে যেখানে কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ সেখানেই নতুন কমিটি হচ্ছে৷

এই কমিটি গঠন নিয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রায় প্রতিদিনই উত্তেজনা ও সংঘাত-সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে৷ গত কয়েকদিনে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া, রংপুর ও মানিকগঞ্জে উত্তেজনা ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে৷ কমিটিতে বিতর্কিত নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করারও অভিযোগ উঠেছে৷ মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ২৯ জন নেতা-কর্মী কেন্দ্রে পাঠানো এক আবেদনে বলেছেন, ‘‘উপজেলা আওয়ামী লীগের পদ কেনাবেচা হচ্ছে৷ দলের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই এমন অযোগ্য লোকদের দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে৷

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য আজিম উদ্দিন বাবু বলেন, ‘‘স্থানীয় এমপি তার নিজের পছন্দের লোকজন দিয়ে কমিটি করেছেন৷ অর্থের বিনিময়েও কমিটিতে ঠাঁই দেয়া হয়েছে৷ এমনকি যারা আগে অন্যদল করেছেন তাদেরও কমিটিতে নেয়া হয়েছে৷ কিন্তু ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দেয়া হয়েছে৷”

তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী মনে করেন সম্মেলনের সময় উত্তেজনা, হাতাহাতি হতেই পারে৷ চেয়ারে বসা নিয়ে, বক্তৃতা দেয়াসহ বিভিন্ন কারণে এটা হয়, যা বড় কোনো ঘটনা নয়৷ তিনি দাবি করেন, ‘‘এবার কোনা পর্যায়ে কোনো কমিটিতেই বিতর্কিতরা ঠাঁই পাচ্ছে না৷ এই সুযোগ নেই কারণ আমরা আগেই তাদের তালিকা করেছি৷”

আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘‘আসলে নিজের লোক বা নিজে কমিটিতে না থাকলেই যারা থাকে তাদের বিতর্কিত বলা হয়৷ এটা একটা প্রবণতা৷”

এসএইচ-০৬/১২/১৯ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)