‘অ্যান্টি রেপ ডিভাইস’ ধর্ষণ রোধের ওষুধ!

দেশে ধর্ষণ ‘মহামারি’ আকার ধারণ করায় নারীদের জন্য স্বয়ংক্রিয় ‘অ্যান্টি রেপ ডিভাইস’ সহজলভ্য করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট৷ এ নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করাসহ ৬০দিনের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে৷

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও চিলড্রেন’স চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে দায়ের করা এক রিটের শুনানি শেষে রোববার হাইকোর্ট এ আদেশ দেন৷ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ এ আদেশ দেয়৷ একইসঙ্গে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের হাত থেকে নারীদের রক্ষা করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েও সরকারের ওপর রুল জারি করেছে আদালত৷

হাইকোর্টের আদেশে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে ধর্ষণ প্রতিরোধক যন্ত্র বা ‘অ্যান্টি রেপ ডিভাইস’ কমিটিতে কমিটিতে বুয়েটের একজন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপককে রাখতে বলা হয়েছে৷ আরো থাকবেন পুলিশের আইজি ও সরকারের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের মহাপরিচালক৷ আর এই ডিভাইসটি পুলিশের ৯৯৯ নাম্বারের সাথে কিভাবে যুক্ত করা যায় সে ব্যাপারেও মতামত দিতে বলা হয়েছে৷

রিটের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম বলেন, ‘‘অ্যান্টি রেপ ডিভাইস এমন একটি ডিভাইস যা ছোট ঘড়ির মত বা অন্য কোনো আকারের৷ এটা অনলাইন ও টেলিফোন নেটওয়ার্কে চিপস বা সিমের মাধ্যমে যুক্ত থাকে৷ কোনো নারী আক্রান্ত হলে বা যৌন সহিংসতার শিকার হলে ডিভাইসটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যালার্ম দেয়৷ ফলে লোকজন এগিয়ে আসতে পারেন৷ আবার এটা ঘটনান্থলের ভিডিও, অডিও, ছবি বা তথ্য সংগ্রহে রাখে৷ ফলে আলামত পাওয়া সহজ হয়৷”

তিনি বলেন, ‘‘আমরা এটাার সঙ্গে পুলিশের হেল্পলাইন নাম্বার ৯৯৯ সংযুক্ত করার কথা বলেছি৷ আদালতও সম্মতি দিয়েছেন৷ ওই কমিটি এখন ৬০ দিনের মধ্যে সুপারিশ করবে, এটা কিভাবে করা সম্ভব৷ এই ডিভাইস আলিবাবাসহ অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কিনতে পাওয় যায়৷ বিশ্বের উন্নত দেশে এই ডিভাইস নারীরা ব্যবহারও করেন৷ দামও বেশি না৷ আমরা চাচ্ছি এটা বাংলাদেশে সহজলভ্য করা হোক৷ বাংলাদেশে এটা ব্যবহারে বাধা নেই৷ তবে সেটা সরকারের মাধ্যমে আসুক৷ এতে সচেতনতাও বাড়বে৷ নারীদের সাথে একটা সিকিউরিটি ডিভাইস থাকবে৷ ৯৯৯ এ যুক্ত হলে স্বয়ংক্রিভাবে ডিভাইস সহায়তা চাইবে৷”

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ধর্ষণ মহামারি আকার ধারণ করেছে৷ এক বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়েছে৷ এর প্রধান কারণ বিচার হয়না৷ মাত্র তিনভাগ মামলায় অপরাধীর শাস্তি হয়৷ এই সিকিউরিটি ডিভাইসটা এখানে ব্যবহার হলে নারীরা শুধু ধর্ষণ নয়, যৌন হয়রানী, ইভটিজিংসহ আরো অনেক নিরাপত্তাহীনতা থেকে রক্ষায় সাহসী হবেন৷”

রিটটি করা হয়েছিল গত ১২ জানুয়ারি৷ রিটের পক্ষে আরেক আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, ‘‘এই ডিভাইসটি আমাদের দেশে সহজলভ্য নয়৷ তবে মালয়েশিয়াসহ এশিয়ার অনেক দেশে ব্যবহার করা হয়৷ আমরা চাইছি বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ডিভাইসটি আমাদের দেশের উপযোগী করে বাজারজাত করা হোক৷ আর পুলিশের ৯৯৯-এর সহায়তা আমরা যুক্ত করতে চাইছি৷ এটার যাতে অপব্যহার না হয় সেইভাবে করতে হবে৷ এই ডিভাইসটি নানা আকারের ও নানা কৌশলের হয়৷ এমনকি শরীরের সেনসেটেভ স্থানেও স্থাপন করা হয়৷”

তিনি বলেন, ‘‘এটা নারীর মধ্যে নিরাপত্তাবোধ বাড়াবে৷ আর যেহেতু এটা ঘটনার সময়সহ অনেক কিছু রেকর্ড করতে পারে তাই আলামতও সংরক্ষণ করবে৷ মামলায় ঘটনা প্রমাণে সহায়ক হবে৷”

তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে নিরাপত্তা ডিভাইস ও আত্মরক্ষার ডিভাইস ব্যবহারের আগ্রহ আছে৷ কোনো কোনো নারী শারীরিক কসরতও শেখেন৷ এটা নিয়ে নীতিমালা করে সরকার এগিয়ে এলে নারীদের মধ্যে ভয় কমবে৷ অনেক নারী শুরুতে ভয়েই দুর্বল হয়ে যান৷ ফলে দুর্বৃত্তরা সহজেই তাদের ওপর যৌন সহিংসতা চালায়৷”

এদিকে, রোববার হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ সারাদেশে ধর্ষণ প্রতিরোধে একটি কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছে৷ আগামী ৩০ দিনের মধ্যে এই কমিশন গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ একইসঙ্গে ওই কমিটিকে পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে ধর্ষণ প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে একটি সুপারিশমালা তৈরি করে আদালতে প্রতিবেদন আকারে জমা দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ৷

এসএইচ-০৫/২০/২০ (হারুন উর রশীদ স্বপন, ডয়চে ভেলে)