নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে অস্বস্তি?

দেশে বিশ্লেষকরা বলেছেন, ভারতের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের কারণে দেশটির সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে, তা এখন সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও প্রকাশ পেয়েছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে সেই অস্বস্তির ইঙ্গিত রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের পত্রিকা গালফ নিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারত তাদের নাগরিকত্ব আইন কেন সংশোধন করলো-তা বোঝা যাচ্ছে না। গালফ নিউজের বরাত দিয়ে তার এই বক্তব্য বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের দু’টি দিক তুলে ধরে বিশ্লেষকরা বলছেন, একদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একইসাথে তিনি প্রশ্ন রেখেছেন- ভারত এটা কেন করলো তা তিনি বুঝতে পারছেন না। “এর প্রয়োজন ছিল না,” এমন মন্তব্যও তিনি করেছেন।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলছেন, “যেহেতু এটা নিয়ে অনেক প্রশ্ন ভারতের অভ্যন্তরেই হচ্ছে, কাজেই সেই প্রশ্নগুলো আমাদের এখানে প্রশ্ন জাগবার সুযোগ তৈরি করে। আমরা যখনই কোনো প্রশ্নের সদুত্তর পাই না, তখনই সেই প্রশ্ন থেকে যায়। সেটাই ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে চিন্তার একটা কারণ হতে পারে।”

ভারতে নাগরিক তালিকা নিয়ে বিতর্কের মাঝেই দেশটির সরকার তাদের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করেছে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এবিষয়ে এতদিন সরাসরি কিছু বলা হয়নি। তবে সে সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীদের ভারত সফর বাতিল করা হয়েছিল যা ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে।

আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিবেশী ভারতের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ট হওয়ার বিষয়কে বিভিন্ন সময় তুলে ধরেছে। কিন্তু ভারতের এই দুটো পদক্ষেপের পর দুই দেশের সম্পর্কের বিষয় নিয়েও বাংলাদেশে এখন আলোচনা হচ্ছে।

এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন রেখেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলছিলেন, ভারতের এসব পদক্ষেপের ক্ষেত্রে তাদের রাজনৈতিক চিন্তা কাজ করেছে বলে তিনি মনে করেন।

“বাংলাদেশের অস্বস্তি থাকাটাই স্বাভাবিক। গতকালই আমরা দেখেছি, বিজেপির একজন নেতা এক কোটি মুসলিমের কথা উল্লেখ করেছেন। আসলে বিজেপি আবার ধর্মকে সামনে এনে এটাকে একটা রাজনৈতিকে ইস্যু তৈরি করছে। সেটাকে কিন্তু আমাদের ভয় পাওয়ার কারণ রয়েছে। কারণ আমরা স্যেকুলার রাষ্ট্র।”

তিনি বলেন, “ধর্ম নিয়ে সেই সমস্যাটা যদি তৈরি হয়, সেটা বাংলাদেশের জন্য বিশাল একটা সমস্যা হবে।”

ভারতের নাগরিকত্ব আইনের এই ইস্যুকে বাংলাদেশ সরকার ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে উল্লেখ করেছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যে সিদ্ধান্ত দুই দেশকে প্রভাবিত করে, সেটিকে অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখার সুযোগ থাকে না।

লাইলুফার ইয়াসমিন বলছেন, “একটি দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুর প্রভাব যখন আরেক প্রতিবেশির ওপর আসে, আইনগতভাবে হয়তো আমরা কিছু করতে পারবো না, তখন আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে যেনো আমাদের ওপর অভিযোগ চাপানোর বা দোষারোপের কোনো সুযোগ না থাকে।”

তবে ইস্যুটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা নতুন করে কিছু বলতে রাজি হননি।

এসএইচ-০৫/২১/২০ (কাদির কল্লোল, বিবিসি)