সুরক্ষা নিয়ে শঙ্কিত ডাক্তার-নার্সরা

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ডাক্তার-নার্সদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাব নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে যে উদ্বেগ গত কয়েকদিন ধরে শোনা যাচ্ছিল, আজ একটি হাসপাতালের জারি করা নোটিসে তার যথার্থতা অনেকটাই প্রকাশ হয়ে পড়েছে।

ঢাকার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল কর্মীদের নিজ দায়িত্বে মাস্ক জোগাড়ের জন্য নোটিস জারি করেছে।

হাসপাতালের পরিচালক এক নোটিসে বলেছেন, “সম্পদের স্বল্পতার জন্য হাসপাতালের তরফ থেকে সবাইকে মাস্ক সরবরাহ করা যাচ্ছেনা। এমতাবস্থায় ঝুঁকি এড়ানোর জন্য সকলকে নিজ উদ্যোগে মাস্ক ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করা হলো।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিটফোর্ড হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, ডাক্তার-নার্সদের নিরাপত্তাকে সরকার আদৌ কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে – এই নোটিস জারির পর তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

ঢাকার একাধিক হাসপাতালের চিকিৎসাকর্মীরা বিবিসির সাথে কথা বলার সময় পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট) অর্থাৎ নিজেদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ঘাটতি নিয়ে অভিযোগ করেছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে শুধু যেসব ডাক্তার-নার্সরা প্রথম দফায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে হাজির রোগীদের দেখবেন, তাদেরকে পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়ার্ডে বা অন্যত্র যারা কাজ করছেন – তাদের জন্য কিছুই নেই।

নির্ভরযোগ্য সরকারি একটি সূত্র জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারির গোড়ার দিকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাস মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হলেও, তা অনুমোদনে দীর্ঘ সময় নেওয়া হয়।

ফলে, সরকারি দাবি সত্বেও বাস্তবে পিপিই’র মতো প্রয়োজনীয় সরঞ্জামে ঘাটতি রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি অন্তত বড় বড় বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা-কর্মীদের নিরাপত্তার কথাও কথাও সরকারী কর্তৃপক্ষকে ভাবা উচিৎ, কারণ বাংলাদেশে অনেক মানুষই এখন তাদের চিকিৎসার জন্য প্রথমে বেসরকারি হাসপাতালে যান।

কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলোর পরিস্থিতি কি?

বাংলাদেশের অন্যতম বড় হাসপাতাল বারডেমের সহযোগী অধ্যাপক ড. পুরবী দেবনাথ কাছে স্বীকার করেন, চিকিৎসা কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য মাস্ক, গাউনের মত প্রয়োজনীয় উপকরণের স্বল্পতা তার হাসপাতালেও রয়েছে।

“স্বাস্থ্য কর্মীরা সেবা দেওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত, কিন্তু তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে পিপিই পাঠানো হচ্ছে বলে খবর পেয়েছি, কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে নিজেদের উদ্যোগে এগুলো কেবল শুরু হয়েছে।”

চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইটালিতে বহু স্বাস্থ্য কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কর্মচারীদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।

ফলে, ঢাকার অনেক বেসরকারি হাসপাতালে ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে কোনো রোগী হাজির হলে ডাক্তাররা কাছেই আসছেননা।

ঢাকার মিরপুরে একটি বড় বেসরকারি হাসপাতালের সামনে গিয়ে বিবিসির সংবাদদাতা আকবর হোসেন দেখেছেন সর্দি-কাশি নিয়ে হাজির হওয়া কিছু মানুষকে কর্তৃপক্ষ ঢুকতেই দিচ্ছে না।

প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাব ছাড়াও, হাসপাতালের অনেক ডাক্তারই সমন্বয়ের অভাবের কথা বলেছেন।

সরকার ঢাকার তিনটি হাসপাতালকে – কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল এবং মুগদা জেনারেল হাসপাতাল – করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করেছে।

অথচ মুগদা হাসপাতালের একজন সিনিয়র ডাক্তার বলেন, এই খবর তারা টিভির মাধ্যমে জানতে পেরেছেন।

যদি বড় সংখ্যায় করোনাভাইরাসের রোগী হাসপাতালে আসতে শুরু করে, তাহলে তার জন্য ঐ হাসপাতাল প্রস্তুত আছে কিনা – তা নিয়ে ঐ চিকিৎসক নিজেই সন্দেহ প্রকাশ করেন।

নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিকিৎসা-কর্মীদের এসব উদ্বেগের ব্যাপারে তার বক্তব্য জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বিবিসিকে বলেন, যে সব স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনাভাইরাসের রোগীদের চিকিৎসা করবেন, তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ব্যবস্থা সরকার করবে।

তাহলে মিটফোর্ড হাসপাতালে এমনকি নিজের মাস্কও কেন নিজের দায়িত্বে কিনতে বলা হচ্ছে? এই প্রশ্নে মি. আজাদ বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ঐ নোটিস প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, পিপিই’র মজুদ একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া, অনেক কেনা হয়েছে, আরও কেনার প্রক্রিয়া চলছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চিকিৎসাকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য চীন থেকে আরো সরঞ্জাম অর্ডার করা হয়েছে।

এছাড়াও, তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের চিকিৎসা নিয়ে নিয়ে স্থানীয় ডাক্তারদের সাহায্য-পরামর্শের জন্য চীন থেকে অভিজ্ঞ একদল ডাক্তার-নার্স আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

এসএইচ-০৪/২২/২০ (শাকিল আনোয়ার, বিবিসি)