রোহিঙ্গাদের মধ্যে করোনা আতঙ্ক

কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবিরে বাস করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে ঐ এলাকায় ইন্টারনেট সেবা চালুর আহ্ৱান জানিয়েছে জাতিসংঘ৷

গত বছরের শেষ দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়৷ ফলে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে রোহিঙ্গারা পর্যাপ্ত তথ্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় রোহিঙ্গা নেতারা৷

‘‘আমাদের অনেকেই জানেন না এই ভাইরাসটা কী, এর মাধ্যমে কী রোগ ছড়ায়? মানুষ শুধু শুনেছে এর কারণে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছেন৷ ইন্টারনেট না থাকায় কী ঘটছে, আমরা জানতে পারছি না,” বলেন রোহিঙ্গা নেতা সৈয়দ উল্লাহ৷ ইন্টারনেট না থাকায় অনেক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷ ‘‘আমরা আল্লাহর দয়ার উপর ভরসা করছি,” এএফপিকে বলেন সৈয়দ উল্লাহ৷

বিদেশে বাস করা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে অনেকে ইতিমধ্য টেলিফোনে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জানতে পেরেছেন৷

এছাড়া গত সপ্তাহে ভারত থেকে ফেরা চার সদস্য়ের একটি রোহিঙ্গা পরিবারকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে কোয়ারান্টিনে নেয়ার খবরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে করোনা নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়৷ এরপর কক্সবাজারে এক নারীর করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর এই আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দেয়৷

‘‘আমরা খুবই আতঙ্কিত৷ ভাইরাস যদি এখানে আসে তাহলে দাবানলের মতো তা ছড়িয়ে পড়তে পারে” বলে মনে করছেন আরেক রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জুবায়ের৷ ‘‘অনেক ত্রাণকর্মী ও স্থানীয় কমিউনিটি কর্মী প্রতিদিন ক্যাম্পে ঢোকেন৷ অভিবাসী কয়েকজন রোহিঙ্গাও সম্প্রতি এখানে ফিরে এসেছেন৷ তারা হয়ত ভাইরাসটা বহন করছেন,” বলেন তিনি৷

ক্যাম্পে বাস করা আরেক রোহিঙ্গা লোকমান হাকিম ক্যাম্পগুলোতে করোনা প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের শুধু সাবান দেয়া হয়েছে এবং হাত ধুতে বলা হয়েছে৷”

টেকনাফের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের বেশিরভাগ রাস্তার প্রস্থ দুই মিটারের মতো৷ করোনার বিস্তার কমাতে বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের এক অপরের চেয়ে এই পরিমাণ দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছে৷

এছাড়া ক্যাম্পগুলোর ১০ বর্গমিটার আকারের একেকটি ঘরে সর্বোচ্চ ১২ জন করে থাকেন৷ ‘‘পাশের ঘর থেকে প্রতিবেশীর শ্বাস নেয়ার শব্দ শোনা যায়,’’ বলে জানান একজন ত্রাণকর্মী৷

ডক্টর উইদাউট বর্ডারের বাংলাদেশ প্রধান পল ব্রোকম্যান বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ‘‘আসলে অসম্ভব’’৷

ইতিমধ্যে ক্যাম্পগুলোতে হাত ধোয়া ও হাইজিন ক্যাম্পেন চালু করেছে জাতিসংঘ৷ এছাড়া ক্যাম্পগুলোতে স্বাভাবিক ইন্টারনেট সেবা চালু করতে বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে তারা৷ জীবন বাঁচানো কর্মসূচির সফলতার জন্য দ্রুত ও কার্যকর যোগাযোগ প্রয়োজন বলে জানান ক্যাম্পে কাজ করা জাতিসংঘের মুখপাত্র লুইস ডনোভান৷

তবে ক্যাম্পে ইন্টারনেট সেবা চালুর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি বাংলাদেশের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনারের কার্যালয়৷

অবশ্য ক্যাম্পগুলোতে বাইরের যোগাযোগ কমানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তা বিমল চাকমা৷ ‘‘আমরা ক্যাম্পে ত্রাণ কার্যক্রম কমিয়েছি৷ শুধুমাত্র খাবার, স্বাস্থ্য ও আইন সংক্রান্ত কাজ চলবে,’’ বলে জানান তিনি৷

এসএইচ-০৭/২৭/২০ (অনলাইন ডেস্ক, ডয়চে ভেলে)